Breaking News

সাবধান! গোপনে চলছে এক মহাযুদ্ধ, জানেন সেটা কি?

অর্বিট নিউজ- হ্যাঁ ঠিকই দেখছেন, বিশ্বে শুরু হতে চলেছে আর এক মহাযুদ্ধে। আর এই যুদ্ধে, পরমাণু অস্ত্রের নয়, ব্যবসায়িক নয়, যুদ্ধ হতে চলেছে মুদ্রাকে নিয়ে। কারেন্সি ওয়ার।আর যুযুধান দুই শিবির হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন। দুই দৈত্যাকার অর্থনীতির দেশ।গত এক বছরে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র শুরু করে ব্যবসায়ীক যুদ্ধ, যা চিনের বিরুদ্ধে।

বিষয়টি যেটা ছিল, চিনের ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্যের উপর আমেরিকা ট্যারিফ চাপিয়ে দেয়। এরপর চিনও মার্কিন পণ্যের উপর ১১০ বিলিয়ন ডলারে ট্যারিফ চাপিয়ে দেয়। গত ১ অগাস্ট ২০১৯ । মার্কিনি ট্যারিফ চাপানোর ৩৯২ দিনের মাথায়, অতিরিক্ত ৩০০ বিলিয়ন ডলার, চিনের পণ্যের উপর ১০ শতাংশ টারিফ চাপায়। অর্থাত, আমেরিকার কোনও ক্রেতাকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে চিনের পণ্য কিনতে হবে। ফলে চিনের উতপাদন পণ্য দামি হতে চলেছে আমেরিকার বাজারে আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে।গত এক বছরে যদি দেখা যায়, আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্য, ইউরোপীয় পণ্য, চিনের পণ্য থেকে সস্তা।

ফলে আমেরিকায় চিনের বাজার বেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে চিন এখন বহু পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বদলে, ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলিতে পণ্য রফতানি ঝুঁকছে। গত এক দশকে দেখা গিয়েছে, চিন এখন আর মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রে টপ ট্রেডিং পার্টনার নয়। আর এটাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক বিশ্ব বাজারে। এর ফলে চিন মার্কিন বাণিজ্যের নিরিখে, চিনের ব্যবসা ১৪ শাংশ পড়ে গিয়েছে মার্কিন বাজারে।প্রথমে বুঝে নেওয়া যাক, চিনের ব্যবসায়ীক কাঠামো, চিন আমদানির থেকে রফতানি বেশি করে মার্কিনি বাজারসহ সারা বিশ্বে।

এই পরিস্থিতিতে চিন নিজের কারেন্সি ছল করে ভ্যালু বাড়াতে শুরু করে। মার্কিন ডলারের তুলনায় সাত পয়েন্ট নেমে যায়।উদাহরণ ১ ডলার সমান ছিল ২০ ইউয়ান। সেটি দেখা যাচ্ছে ১ ডলার সমান ৪০ ইউয়ান হয়ে গিয়েছে। এতো দ্রুত ইউয়ানের পতন যা এক দশকে দেখা যায়নি। এরপরেই আমেরিকা দাবি করে, চিন কারেন্সি ম্যনিপুলেট করছে। আমেরিকা জানিয়েছে, তারা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের কাছেও অভিযোগ জানাবে।

বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ট্যুইটও করেছিলেন। এবং এটি যে গুরুতর অপরাধ তাও দাবি করেন।এবার এখানে প্রশ্ন চিন নিজের কারেন্সি কেন ম্যনিপুলেট করবে?একটি ছোট উদাহরণ। মাথায় রাখুন ১ ডলার সমান ৭০ রুপি।ভারত আমেরিকাকে ১ কিলো আম বিক্রি করলো ১ ডলারে অর্থাত ৭০ টাকায়। এবার ভারত যদি বলে এই ৭০ টাকাটা পড়ে গিয়ে ১৪০ টাকা হয়ে গিয়েছে। তাহলে আমেরিকা এখানে ১ ডলারে ২টি আম পাবে। যদিও ভারতীয় বাজারে আমের উতপাদন ও বিক্রয় মূল্য সত্তর টাকাই আছে। তেমনই ডলার দিয়ে যেখানে তারা বেশি জিনিস পাবে, সেই দেশেই জিনিস কেনার ক্ষেত্রে আগ্রহী হবে।

ফলে রফতানি বাজার আরও বড় মাপে ধরা যাবে।আর এই অঙ্কটা যখন হাই ভলিউমে রফতানি হয়, তখন বড় বাজারের কারণে বিপুল অঙ্কের লাভ হতে থাকে। এবার এখানে প্রশ্ন আসবে, পাকিস্তানের কারেন্সিতো তলানিতে থাকলে তারাতো এই সুযোগটা আরও বেশি করে লাগাতে পারে। এখানে বলে রাখি, যদি কোনও দেশের, কোনও পণ্য (যার চাহিদা বাজারে আছে) ভালো ভাবে রফতানি করতে পারে, তাহলেই সম্ভব। কিন্তু যাদের রফতানি করার কোনও পণ্য না থাকে, তাহলে কিছুই হবে না।বেশ কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ভারতীয় টাকার পতন হতে দেওয়া উচিত, কারণ, রফতানির বাজার ধীরে ধীরে তৈরি করতে পেরেছে ভারত। টাকার পতন হলে, রফতানি কারকদের ক্ষেত্রে আরও বড় বাজার খুলে যাবে, সেক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের আয়ের রাস্তাও তৈরি হবে।

ভারতের ক্ষেত্রে এটা একটা দিকে ভালো হলেও, মূল সমস্যা হল, তেলের ক্ষেত্রে। কারণ তেল আমদানির ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হবে। তবে এখানে একটা মজার অঙ্ক আছে। উদাহরণ- ৭০ টাকা প্রতি ডলার ধরলে বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার তেল আমদানি করতে গেলে টাকার পতনের জন্য (১৪০ টাকা ডলার প্রতি) ১০ বিলিয়নটা ২০ বিলিয়ন লাগবে। কিন্তু রফতানির বড় বাজার ধরতে পারলে সেখান থেকে দেখা যাবে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে নেওয়া যাচ্ছে, সেখানে বাড়তি ১০ বিলিয়ন খরচটা কিছুই নয়।সম্প্রতি দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভু জানিয়েছে, ভারতীয় পণ্য ও পরিষেবা ক্ষেত্রে চলতি আর্থিক বছরে ৫৪০ মার্কিন বিলিয়ান ডলার ছুঁতে চলেছে।

অন্যদিকে, তেলমন্ত্রক সূত্রের খবর, ভারত গত আর্থিক বছরে তেল আমদানি করতে খরচ করেছে ১২৫ বিলিয়ান ডলার।ভারতের রফতানি বাজারে সবচেয়ে বড় জায়গা দখল করে আছে ফার্মা সংস্থাগুলি। তাহলে টাকার দাম পড়লে, সব মিলিয়ে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে। আর এই তত্ত্ব বহু অর্থনীতিবিদ সমর্থন করেছেন।এবার আসি চিনে, এই চিন গত এক বছরে ইউয়ানের ভ্যালু অনেকটাই ফেলে দিয়েছে, এবং আমেরিকার দাবি, এর ফলে অনেকটাই ফায়দা তুলেছে চিন। তবে এখানে আবারও বলছি, এই টিক্স তখনই চলে, যখন আপনার দেশে বিক্রি করার মতো কিছু থাকে। আর না থাকলে, লোকসানই লোকসান।

তবে এই কারেন্সি চাইলেই, পতন ঘটানো যায় না, কারণ এর একটা আন্তর্জাতিক বাজারে মনিটারিং ব্যবস্থা রয়েছে। যে সংস্থা এই পর্যবেক্ষণ চালায়, অতি সম্প্রতি এই নজরদারি থেকে ভারতে মুক্ত করেছে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র।একটা দেশ কী ভাবে টাকার পতন ঘটাতে পারে ? অসাধু প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত টাকা ছাপাতে পারে। বন্ড বিক্রি করতে পারে।

পরিষ্কার হিসেব, চাহিদার থেকে সাপ্লাই বাড়িয়ে দিলেই ভ্যালু পড়ে যাবে।দ্বিতীয় দিক হল, ফোরেক্স বাজার, মানে ফরেন এক্সচেঞ্জ বাজার। যেখানে ট্রিলিয়ন, ট্রিলিয়ন ডলার এক্সচেঞ্জ হয়, সেখানে চিন একটা ট্রিক্স করে। বহু নকল কোম্পানি তৈরি করে চিনের ইউয়ান ইনভেস্ট করাতে থাকে। ফলে চিনের টাকার পতন হতে থাকে। কারণ ওদের লক্ষ্য রফতানি তার অনেক বেশি মার্কিন ডলার আয় করে নিতে পারবে।এখানে আমেরিকা চিনের পিপলস ব্যাঙ্ক অফ চায়নাকে অভিযুক্ত করেছে, এটি হল ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো।

আমেরিকার দাবি, কোন দেশের কারেন্সি ভ্যালু কত, তা বাজার ঠিক করুক, কোনও দেশের সরকার যেন সেখানে কোনো অসাধু কৌশল না নেয়।এখন দেখার বিষয় এই কারেন্সি ওয়ার বা মুদ্রা যুদ্ধে আমেরিকা কী পদক্ষেপ করে, তবে যাই করুক এতে ভারতের কিছু লাভ হতে চলেছে, কারণ রফতানি ক্ষেত্রে চিনের বাজার পড়লে, ভারত যদি সেই জায়গা ধরতে পারে, তাহলে সেটা অদূর ভবিষ্যতে মঙ্গলই হবে।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

মালদ্বীপ যাওয়ার আগে বানিয়ে নিন প্ল্যান, নয়তো খসতে পারে বাড়তি গ্যাঁটের কড়ি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মালদ্বীপ। এই দেশের অধীনে রয়েছে অসংখ্য দ্বীপের দেশ। ছোট ছোট প্রায় ১২০০ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!