যমুনা নদীকে ঘিরে কী পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে? জানুন উৎস এবং কিংবদন্তি

যমুনা নদী, যা ভারতের অন্যতম বৃহত্তম এবং পবিত্র নদীগুলোর মধ্যে একটি, হিন্দু পুরাণ এবং ঐতিহ্যে গভীর গুরুত্ব বহন করে। এটি গঙ্গার প্রধান উপনদী এবং উত্তর ভারতের কৃষি, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

উৎসস্থল

যমুনা নদীর উৎস হিমাচল প্রদেশের উত্তরকাশী জেলায় অবস্থিত যমুনোত্রী গ্লেসিয়ার। এই গ্লেসিয়ারটি বান্দারপুঞ্চ পর্বতমালার একটি অংশ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬,৩৮৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। যমুনোত্রী একটি বিখ্যাত তীর্থস্থান, যেখানে যমুনা দেবীর মন্দির অবস্থিত। এই নদী হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি এবং শেষে উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়। যমুনার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৩৭৬ কিলোমিটার।

কিংবদন্তি ও ধর্মীয় তাৎপর্য

যমুনা নদী সম্পর্কে হিন্দু পুরাণে বহু কিংবদন্তি রয়েছে, যা এই নদীকে অত্যন্ত পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

যমুনা দেবীর পরিচয়

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, যমুনা দেবী সূর্যদেব এবং সংজ্ঞার কন্যা। তিনি যম (মৃত্যুর দেবতা)-এর বোন এবং শনিদেবের বোন হিসেবেও পরিচিত। যমুনা দেবীকে পবিত্রতা, প্রেম এবং দয়ার প্রতীক হিসাবে পূজা করা হয়। মনে করা হয়, যমুনায় স্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায় এবং আত্মা পবিত্র হয়।

যম এবং যমুনার কাহিনি

একটি বিখ্যাত কিংবদন্তি অনুসারে, যম এবং যমুনার মধ্যে এক অমোঘ সম্পর্ক ছিল। যমুনা দেবী তাঁর ভাই যমকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য একটি ভোজের আয়োজন করেছিলেন। এই উপলক্ষ্যে যম তাঁর বোনকে আশীর্বাদ দেন যে, যেকোনো ভাই যদি ভাইফোঁটার দিন তাঁর বোনের সঙ্গে স্নান করে, তাহলে সে মৃত্যুতে ভয় পাবে না। এই কাহিনি থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের প্রবর্তন হয়।

কৃষ্ণ ও যমুনার সম্পর্ক

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনেও যমুনা নদীর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বৃন্দাবন এবং মথুরা, যমুনার তীরবর্তী অঞ্চল, কৃষ্ণলীলার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। বলা হয়, কৃষ্ণ যখন কালিয় নাগকে পরাজিত করেন, তখন যমুনা দেবী শুদ্ধ এবং পবিত্র হয়ে ওঠেন।

অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

যমুনা নদী উত্তর ভারতের কৃষি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জল দিয়ে গম, ধান, আখ এবং অন্যান্য শস্যের সেচ হয়। যমুনার তীরবর্তী অঞ্চলে দিল্লি, আগ্রা, মথুরা, বৃন্দাবনের মতো ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় শহর অবস্থিত।

তীর্থযাত্রা ও উৎসব

যমুনোত্রী মন্দিরে বার্ষিক তীর্থযাত্রা বহু ভক্তকে আকর্ষণ করে। যমুনা নদীর তীরে অনুষ্ঠিত যমুনা জয়ন্তী এবং ভাইফোঁটা উৎসব হিন্দু ধর্মে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

উপসংহার

যমুনা নদী শুধুমাত্র একটি ভৌগোলিক প্রবাহ নয়; এটি ভারতের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর উৎস এবং কিংবদন্তি ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীরতা এবং আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। যমুনার তীরে জন্ম নেওয়া কাহিনিগুলি যেমন ধর্মীয় আখ্যানকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি এর জল উত্তর ভারতের কৃষিকাজ ও জীবিকার প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছে।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

দক্ষিণ ভারতের জীবনরেখা কাবেরী, এই নদীর উৎস এবং কিংবদন্তি সম্পর্কে জানুন

ভারতের কাবেরী নদী, যা দক্ষিণ ভারতের “জীবনরেখা” হিসেবে পরিচিত, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!