উইকেন্ডে শিমুলতলা ও জোসিডি ভ্রমণ: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিকতার মিলনস্থল

শান্তি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আধ্যাত্মিকতার খোঁজে যারা উইকেন্ডে একটু দূরে যেতে চান, তাদের জন্য শিমুলতলা এবং জোসিডি একটি আদর্শ গন্তব্য। বিহারের জামুই জেলায় অবস্থিত শিমুলতলা তার মনোরম প্রকৃতি ও নির্মল পরিবেশের জন্য পরিচিত। এর কাছেই ঝাড়খণ্ডের দেবঘরের জোসিডি, যা আধ্যাত্মিক তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত।

শিমুলতলা: প্রকৃতির কোলে এক শান্তির আশ্রয়

ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট

ব্রিটিশ আমলে শিমুলতলা ছিল বিলাসবহুল হিল স্টেশন। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে এটি ব্রিটিশ এবং ধনী ভারতীয়দের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এখানে বহু জমিদার ও ব্রিটিশ আধিকারিকদের বাসস্থান ছিল। প্রখ্যাত লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী”-র অনেক অংশ শিমুলতলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে অনুপ্রাণিত।

দর্শনীয় স্থান

সন্তাল পাহাড়ি গ্রাম: স্থানীয় সংস্কৃতি এবং গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য একটি আদর্শ জায়গা।

লক্ষ্মীপুর পাহাড়: ট্রেকিং ও পিকনিকের জন্য জনপ্রিয়।

ধারো পাহাড়: স্নিগ্ধ পরিবেশ এবং মনোরম দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত।

ফলগু নদী: এর তীরে বসে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা অত্যন্ত শান্তিদায়ক।

কেন শিমুলতলা ভ্রমণ করবেন?

শিমুলতলার পরিষ্কার বাতাস, ঘন জঙ্গল, এবং পাখির ডাক ভ্রমণকারীদের একটি অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। এটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ জায়গা।

জোসিডি: আধ্যাত্মিকতা ও ইতিহাসের মেলবন্ধন

জোসিডির পরিচিতি

জোসিডি স্টেশন ঝাড়খণ্ডের দেবঘরের প্রবেশদ্বার। এটি বিখ্যাত “বাবা বৈদ্যনাথ ধাম” মন্দিরে যাতায়াতের জন্য প্রধান রেলস্টেশন। বৈদ্যনাথ ধাম ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের একটি এবং ৫১টি সতীপীঠের মধ্যে অন্যতম।

দর্শনীয় স্থান

বাবা বৈদ্যনাথ মন্দির: শিবভক্তদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান।

নারায়ণ মন্দির: আদি নারায়ণ দেবতাকে উৎসর্গীকৃত।

তপোবন: সন্ন্যাসীদের সাধনাস্থল, যেখানে আপনি প্রকৃতি এবং আধ্যাত্মিকতার মিলন অনুভব করবেন।

নওলাখা মন্দির: উঁচু স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত।

কলকাতা থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা

রেলপথ:

কলকাতা থেকে শিমুলতলা বা জোসিডি পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন পরিষেবা পাওয়া যায়।

শিমুলতলা স্টেশন শিয়ালদহ ও হাওড়া থেকে ট্রেনের মাধ্যমে সহজেই পৌঁছানো যায়।

জোসিডি স্টেশন থেকে বাবাধাম মন্দিরে যাওয়ার জন্য অটো বা গাড়ি পাওয়া যায়।

সড়কপথ:

কলকাতা থেকে গাড়ি ভাড়া করে NH 19 ধরে জোসিডি এবং শিমুলতলা পৌঁছানো যায়।

ভ্রমণ পরামর্শ

সেরা সময়: অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি। এই সময়ে আবহাওয়া শীতল ও মনোরম থাকে।

থাকার ব্যবস্থা: শিমুলতলায় গেস্টহাউস এবং জোসিডিতে ধামের আশেপাশে বেশ কিছু হোটেল রয়েছে।

খাবার: স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

উপসংহার

শিমুলতলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জোসিডির আধ্যাত্মিক পরিবেশ উইকেন্ড ভ্রমণের জন্য এক আদর্শ প্যাকেজ। এটি প্রকৃতি এবং ধর্মীয় অভিজ্ঞতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন। পরিকল্পনা করুন এবং এই মনোমুগ্ধকর স্থানগুলি আবিষ্কার করুন।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

কোণার্ক সূর্য মন্দির: এক ঐতিহাসিক বিস্ময়

ভূমিকা: ভারতের অন্যতম প্রাচীন এবং বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শন হলো ওডিশার কোণার্ক সূর্য মন্দির। এই মন্দিরটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!