Breaking News

গান্ধীপন্থীরা কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে কীভাবে হেনস্থা করেছিলেন মনে আছে?

অর্বিট নিউজ- সর্বোদয় নীতির জন্য সারা বিশ্ব যে মোহনদাস কর্মচাঁদ গান্ধীকে চেনেন বা জানেন, তাঁর একনিষ্ঠ কর্মী থেকে অনুরাগীরা সত্যি কতটা গান্ধী আদর্শবাদী ছিলেন? মোহনদাস কর্মচাঁদ গান্ধী বরাবরই চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, কিন্তু তাঁর অনুগামীরা যখন হিংসার পথ বেছে নিয়েছিলেন, তখন কি কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছিল? আসুন তাহলে একবার ইতিহাসের পাতার ধুলো ঝেড়ে স্মৃতিচারণ করা যাক।


সবে রেঙ্গুন থেকে বাংলায় ফিরলেন কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। হ্যাঁ সেই শরত্চন্দ্রের কথাই বলা হচ্ছে, যিনি অনিলাদেবী ছদ্মনামে গল্প উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। সেই শরত্চন্দ্রের কথাই বলা হচ্ছে, যাঁর বহু বিখ্যাত লেখার মধ্যে অন্যতম দেবদাস গল্প।

আরও পড়ুন- মানস কৈলাস যাত্রার সম্পূর্ণ সফর পরিকল্পনা


হুগলির দেবানন্দপুরে জন্ম, কিছুকাল পাটনায় কাটানো, তারপর তিনি চলে গেলেন কর্মসূত্রে রেঙ্গুন। আবার দেশে ফিরলেন, থাকতে শুরু করলেন হাওড়ার শিবপুরে একটি ভাড়া বাড়িতে। সেই সময়ই তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দিলেন। সময়টা ১৯২৩ সাল। সেই সময় জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক ছিলেন হরেন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি মূলত ছিলেন কৃষক আন্দোলনের নেতা। তাঁরই অনুরোধে, জেলা কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব নিলেন শরত্চন্দ্র। তখন জেলা কংগ্রেসের অফিস ছিল, ৪ তেলকল ঘাট রোডে। বঙ্গবাসী সিনেমাহলের পাশেই। হাওড়ায় জেলা কংগ্রেসে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও যতীন্দ্রমোহনের গোষ্টীর মধ্যে বিবাদ লেগেই থাকতো। পরে সেটি অবশ্য গান্ধীপন্থী ও সুভাষপন্থী গোষ্ঠীতে রূপ নেয়।


শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কোনওদিনই পোড় খাওয়া রাজনীতির মানুষ ছিলেন না, যদিও কিছুটা দেশাত্মবোধ থেকেই এই কর্মে যুক্ত হওয়া। আর সবথেকে বড় ব্যাপার ছিল হরেন্দ্রনাথ ঘোষকে প্রায় নিজের ভাইয়ের মতো দেখতেন, তাণর অনুরোধ ফেলতে পারতেন না।
শরৎচন্দ্রকে কংগ্রেসের গোষ্টীদ্বন্দ্বের মধ্যে বহু বার পড়তে হয়েছে। এর জন্য তিনি একাধিকবার পদত্যাগও করেন আবার হরেন্দ্রনাথের অনুরোধে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারও করে নেন। ১৯৩১ সালে গণ্ডগোল চরমে ওঠে। যদিও ১৯২৩ সালে তিনি ও তাঁর অনুগামীরা একসঙ্গে পদত্যাগ করেছিলেন। দ্রঃ (সেই চিঠির কপি ১৯৭৬ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল)।

আরও পড়ুন- ছোট ছুটির খোঁজে ওডিশার সেরা জায়গা

১৯৩১ সালে ২০ জুন কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি একটি চিঠি লেখেন, সেখানে একটি অদ্ভুত ঘটনার ইঙ্গিত মেলে। চিঠি লেখার ঠিক দুদিন আগে ১৪৩ মধুসূদন পালচৌধুরী রোডের একটি বাড়িতে কংগ্রেসের সভা হয়। তার আগে থেকেই বিরুদ্ধ গোষ্ঠী শরত্চন্দ্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা অনে পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের খবর ফাঁস হয় হরেন্দ্রনাথের কাছে। তিনি সুকৌশলে শরৎচন্দ্রকেপুরনায় সভাপতির আসনে নির্বাচিত করিয়ে ছাড়েন।

ঘটনাটি ছিল এমনই, বিরুদ্ধগোষ্ঠী গণ্ডগোল পাকানোর মতলব করেছিল, আর তা রুখতে হরেন্দ্রনাথ বাড়ির চারপাশে বিদ্যুতের তার দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলেন, বাইরে লেখা ছিল সাবধান ফলে বিরুদ্ধ গোষ্টী ঢোকার সুযোগই পায়নি।


শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জেলা কংগ্রেসে থাকাকালীন কত কিছু দেখতে হয়ে তার ইঙ্গিত মেলে কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা চিঠিতেই।- কাল আমাদের জেলা কংগ্রেসের ইলেকশন হয়ে গেল। এবার বিরুদ্ধ দলের সোরগোল, গালিগালাজ ও লাঠি ঠকঠকি দেখে ভেবেছিলাম হয়তো বিনা রক্তপাতে শেষ হবে না। আমি প্রেসিডেন্ট, সুতরাং আমাদেরও যথারীতি প্রস্তুত হতে হয়েছিল। সভায় দাঙ্গা হয় এ আমার ভারী ভয়। তাই কাঁটাতারের বেড়া মায় ইলেকট্রিফিকেশন সবই তৈরি রাখতে হয়েছিল। আর তৈরি বলেই দাঙ্গা হয়নি। নির্বিঘ্নে দখল কায়েম রাখা গেল। বছর দশেক প্রেসিডেন্ট আছি। ভেস্টেড ইন্টারেস্ট জন্মে গেছে, সহজে ছাড়া চলে না।
যদিও শরত্চন্দ্রকে হার মানতেই হয়েছিল। ১৯৩৬ সালে ১৭ মে কার্যত সরতে বাধ্য হয়েছিল। হয়তো চূড়ান্ত অপমানিত হয়েই। সেই সময় সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ ঘোষকে যে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন তার অংশ ছিল এমনটাই।-


“There is to submit my resignation from the presidentship of the Howrah District Congress. It is not due to any slight diference between myself and the Committee for whwreever there is no diferences dispute and bitter quarrels in the Congress throughout Bengal? Therefore it is not for that. Recently I have become very ill and I feel I could not be of any use to the Congress in future. It is best that I Should vacate. In tendering my resignation I have no ill will against any one and atleast of all against you. the same affection you will always find in me. Or perhaps, I should not ever come into politics. It is so alien to my vocation and so often becomes painful to my innerself. Strife Dissension and disputes inherent in politics were not meant for me: they always destroy that peace of mind I so essentially require…


আধুনিক বাংলা সাহিত্যে যে নবজাগরণ ঘটেছিল, সেখানে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অবদান কতখানি তা সারা বিশ্ব জানে। অথচ এই মানুষটিকেই নির্জন, নিরালা, নিভৃতে সরে যেতে হয়েছিল গান্ধীপন্থী তথা নরমপন্থীদের দাপটে। বাংলার রাজনীতি থেকে এমন একজন মানুষকে সরে যেতে হল যাঁদের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কি কখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হেয়ছিল? না তার কোনও নজির নেই।

ইতিহাসমূল খবরের পাশাপাশি সব ধরণের খবর পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো করুন


তথ্যসূত্র- হাওড়া শহরের ইতিবৃত্ত, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (দ্বিতীয় খণ্ড) ২৭২,২৭৩,২৭৪ পাতা

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

নিজস্ব ইতিহাস হারিয়ে বাঙালির কাছে কেন হয়ে উঠল ‘গ্রান্ড ক্যানিয়ন অফ বেঙ্গল’

স্বাতী চট্টোপাধ্যায়ঃ– আমাদের মতো সস্তা শহুরে বাঙালিদের ফ্যান্টাসি অসাধারণ। বিশ্ব দরবারে বাঙালি শ্রেষ্ঠ হলেও, ইংরেজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!