Breaking News

পানহালা দুর্গের ইতিহাস: শিবাজি মহারাজের বীরত্ব ও মারাঠা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার

পানহালা কেল্লা (Panhala Fort) মহারাষ্ট্র রাজ্যের কোলহাপুর জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দুর্গ। এটি পশ্চিমঘাট পর্বতের ওপর অবস্থিত এবং মারাঠা সাম্রাজ্যের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কেল্লাটি তার কৌশলগত অবস্থানের কারণে বহুবার বিভিন্ন শাসকের দখলে গিয়েছে।

প্রতিষ্ঠা ও প্রাচীন ইতিহাস

পানহালা কেল্লার নির্মাণ হয় ১১শ শতাব্দীতে শিলাহারা রাজবংশের শাসনকালে। পরবর্তীতে এটি যাদব রাজাদের অধীনে আসে। ১৪শ শতকে, বাহমনী সুলতানরা এই দুর্গের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং পরে বিজাপুরের আদিলশাহি সুলতানদের হাতে চলে যায়।

শিবাজির দখল ও মারাঠা শাসন

১৬৫৯ সালে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বিজাপুরের আদিলশাহি শাসকের কাছ থেকে পানহালা কেল্লা দখল করেন। এটি মারাঠা সাম্রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক দুর্গ হয়ে ওঠে। ১৬৬০ সালে আদিলশাহি সেনাপতি সিদ্দি জওহর এই দুর্গ অবরোধ করেন, যা “পানহালার অবরোধ” (Siege of Panhala) নামে পরিচিত। দীর্ঘ অবরোধের পর শিবাজি রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন, যা মারাঠা ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত ঘটনা।

তারপরের শাসনকাল

শিবাজির মৃত্যুর পর পানহালা বিভিন্ন সময়ে মারাঠা ও মুঘলদের মধ্যে হাতবদল হয়। পরে এটি ছত্রপতি শম্ভাজি ও তার উত্তরাধিকারীদের অধীনে আসে। ১৭০০ সালের দিকে এটি মুঘলদের দখলে গেলেও, পরে পুনরায় মারাঠারা এটি ফিরিয়ে নেয়।

১৮শ শতকের শেষের দিকে কোলহাপুরের রাজাদের শাসনে এটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি হয়ে ওঠে।

স্থাপত্য ও আকর্ষণীয় স্থান

পানহালা কেল্লা ৭.২৫ কিলোমিটার পরিধির বিশাল দুর্গ। এটি প্রায় ১,৩১২ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এবং বিভিন্ন সুউচ্চ দেওয়াল, টানেল, ও প্রাচীন স্থাপত্য নিয়ে গঠিত। এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থান হলো:

আম্বারখানা – এটি ছিল বিশাল খাদ্যশস্য ভাণ্ডার।

আন্ধারবাওয়ি (গোপন সুড়ঙ্গ) – শত্রুর হাত থেকে পালানোর জন্য নির্মিত গোপন সুড়ঙ্গ।

ধিলওয়ালি বুরুজ ও সজগিরি বুরুজ – প্রতিরক্ষার জন্য নির্মিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বুরুজ।

সোমেশ্বর মন্দির – শিবমন্দির, যা মারাঠাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের অংশ।

বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে পানহালা কেল্লা মহারাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (ASI) সংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থাপনা।

উপসংহার

পানহালা কেল্লা শুধু মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিরক্ষা দুর্গই নয়, এটি ভারতের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাসের অন্যতম স্মারক। আজও এটি ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় স্থান।

পানহালা দুর্গের ইতিহাস সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)

পানহালা দুর্গের ইতিহাস কোন শতাব্দীতে শুরু হয়?

উত্তর: পানহালা দুর্গের ইতিহাস ১১শ শতকে শিলাহারা রাজবংশের শাসনকালে শুরু হয়।

পানহালা দুর্গে শিবাজি মহারাজের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ কোনটি?

উত্তর: ১৬৬০ সালের পানহালা অবরোধ, যেখানে শিবাজি গোপন পথে পালিয়ে যান।

পানহালা দুর্গের রহস্যময় সুড়ঙ্গ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেমন?

উত্তর: দুর্গের ভেতরে বিভিন্ন গোপন সুড়ঙ্গ ও প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছিল, যা শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করত।

পানহালা দুর্গের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ টিপস কী?

উত্তর: পানহালা দুর্গের কাছাকাছি কোলহাপুর মহালক্ষ্মী মন্দির, রাঙ্কালা লেক এবং জ্যোতিবা মন্দির ভ্রমণের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।

এসব হেডিং ও কনটেন্ট ব্যবহার করলে গুগলে র‍্যাংক করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে কারণ এতে “পানহালা দুর্গ”, “শিবাজি মহারাজ”, “মহারাষ্ট্রের দুর্গ”, “ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণ” ইত্যাদি জনপ্রিয় কিওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

লোথাল: ভারতের প্রাচীনতম বন্দর নগরী

ভূমিকা: গুজরাটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান লোথাল, যা সিন্ধু সভ্যতার একটি প্রধান নগরী হিসেবে পরিচিত। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!