পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি– কয়েক হাজার স্ক্যায়ার কিলোমিটার জুড়ে গভীর জঙ্গল। তারই মাঝখান দিয়ে গড়ে উঠেছে রাজপথ। এ অরণ্যে একসময়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারত না। ছিল একাধিক হিংস্র জন্তুদের বাস। তার থেকেও ভয়ঙ্কর ছিল এখানকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে ব্রিটিশদের কাছে।
এ জঙ্গলের কথা উল্লেখ রয়েছে রামায়নেও। হনুমান, বালি সুগ্রিবের গড়। এখানকার বিখ্যাত আপদ হল কিং কোবরা। যা লম্বায় ১২ ফুট পর্যন্ত দেখা যায়। এই গভীর জঙ্গলেই রয়েছে একটি গাছ, আর তাকে বাঁধা হয়েছে শক্ত লোহার চেন দিয়ে। কিন্তু কেন?
কালিকট- ওয়ানাদ রুটে যাওয়ার পথেই পড়ে থামারেসেরেই চুরাম। এ পথেই দেখা মেলে সেই চেন দিয়ে বাঁধা প্রকাণ্ড গাছ। সময়টা ব্রিটিশ শাসনকাল। ১৭০০ থেকে ১৭৫০। ইংরেজরা ধীরে ধীরে গ্রাস করতে শুরু করেছে ভারতকে। দেশের এক কোনা থেকে আর এক প্রান্তে বুনতে শুরু করেছে পথের জাল। পাহাড়, জঙ্গল কেটে তৈরি হয়েছে বড় রাস্তা। নিজেদের পরিবহণের স্বার্থে।
সেই সময় কেরালার পাহাড় ও গভীর অরণ্য ছিল ভয়ঙ্কর দুর্গম। ব্রিটিশরা ভারতের মশলা পশ্চিমে রফতানির জন্য চাইছিল আরও সহজ সরল রুট। ফলে ওয়ানাদের জঙ্গলকে তারা ব্যবহার করতে চাইছিল।
বহু সমীক্ষা চালিয়েও, গভীর ওয়ানাদের বুক চিরে রাস্তার দিক নির্ধারণ করতে পারেনি। ব্রিটিশ ভাইসরয় বিপুল পরিমাণ অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করলেন, যে জঙ্গলের মধ্যে সেরা রাস্তার খুঁজে দিতে পারবে, সেই হবে পুরস্কারের হকদার।
এক ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার উপায় খুঁজতে লাগল। অগত্যা সাহায্য নেওয়া হল স্থানীয় এক যুবকের। করিনথন্ডন। সেই যুবক ছিল, স্থানীয় পানিয়া উপজাতিদের প্রধানও। ব্রিটিশ আধিকারিকরা তার শরণাপন্ন হয়। কারণ, ওয়ানাদের জঙ্গলের রাস্তা তার জানা ছিল হাতের তালুর মতো।
পুরো রাস্তা ম্যাপিঙের পর, করিনথন্ডনকে ওই ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে যায়, পাহাড়ের চুড়ায়, সেখানেই তাকে হত্যা করে ফেলে চলে আসে। পরে সেই ইঞ্জিনিয়ার পুরো পুরস্কারের হকদার হয়।
ঘটনার পরেও বেগ পেতে হয়, ব্রিটিশ কর্মীদের। রাস্তা তৈরির পর, জঙ্গলের উপর শোষণ বাড়তে থাকে। অরণ্যের সম্পদ লুঠ হতে থাকে। এর পরেই, এই রাস্তায় আচমকা ভুতুড়ে ঘটনা ঘটতে শুরু করে। অ্যক্সিডেন্টের সংখ্যা বাড়ে।
ইংরেজ কর্মীদের মৃত্যু হতে থাকে। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে কোনও সুরাহা বের করতে পারেনি। ছড়িয়ে পড়ে করিনথন্ডনের কথা। মনে করা হয়, করিনথন্ডনের আত্মাই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে।
স্থানীয় এক পাদরিকে আনা হয় সমস্যা সমাধানে। বহু চেষ্টার পর তিনি নিদান দেন, একটি অশ্বত্থ গাছে লোহার চেন দিয়ে করিনথন্ডনের আত্মাকে বেঁধে রাখতে হবে। নিদানমতো বন্দোবস্ত করা হয়। বর্তমানে গাছটি চেন ট্রি নামে পরিচিত। স্থানীয় ভাষায় চঙ্গল মরম নামে ডাকা হয় গাছটিকে।
আর ওয়ানাদ ঘুরতে গেলে যে জায়গাগুলি অবশ্যই দেখবেন, তা হল- পুকড়া লেক, বানাসুর ড্যাম, সুচিপাড়া ঝরনা, ফ্যান্টম রক, এডাক্কাল গুহা ইত্যাদি। অবশ্যই একটি রাত কাটাবেন গুহা রিসর্টে। এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা ।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া বা কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোর গামী ট্রেন বা ফ্লাইট। ব্যাঙ্গালোর থেকে ওয়ানাদ বাস রয়েছে। প্রাইভেট গাড়িও নিতে পারেন বা ট্রেনে যেতে পারেন।