Breaking News

এখানে অশ্বত্থামাকে দেখা যায়! যাবেন নাকি এমন জায়গায়? দেখে নিন পুরো প্ল্যান

ভ্রমণ ডেস্ক প্রচীন ভারতের সংস্কৃতি, রহস্য, কিংবদন্তী গোটা বিশ্বকেই ভাবিয়ে এসেছে সহস্রাব্দ ধরে। এমনই বহু রহস্য রয়েছে, যার সমাধান এখনও হয়নি। কিংবদন্তী রয়েছে, মহাভারতের অন্যতম চরিত্র অশ্বত্থামা এখনও জীবীত। তাঁকে এখনও দেখা যায়, এমনকী কিছু মানুষ দাবি করেছেন, তাঁকে দেখেছেন, অনুভব করেছেন।

না এই প্রতিবেদনে কোনও রহস্য রোমাঞ্চ গল্পে না গিয়ে সোজা আসা যাক মূল পর্বে। মধ্যপ্রদেশের একটি বিখ্যাত জায়গা রয়েছে, নাম বুরহানপুর। জায়গাটার নাম বর্তমানে খুব বেশি পরিচিত না হলেও একটা সময় ছিল, এই জায়গাই উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের প্রাণকেন্দ্র ছিল। এখানে রয়েছে একটি বিখ্যাত কেল্লা অসিরগড় কেল্লা। আর এই দুর্গ যে পাহাড়ে অবস্থিত তার নাম অশ্বত্থামাগিরি।

কিংবদন্তীর শুরু এখানেই। মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর অশ্বত্থামা এখানেই চলে আসেন এবং মুক্তির জন্য মহাদেবের তপস্যা শুরু করেন। কিন্তু তিনি মহাদেবের থেকে আগেই অমর বর পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে উত্তরার গর্ভে থাকা পরীক্ষিতকে ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে হত্যার জন্য কৃষ্ণ তাঁকে অভিশাপ দিয়েছিলেন এবং মাথার মনি নিয়ে নিয়েছিলেন। যার ফলে অশ্বত্থামা অমর থাকলেও, মনির জন্য তাঁর শরীরে জরা গ্রাস করতে থাকে। এই অসিরগড় কেল্লায় একটি শিবমন্দির রয়েছে, সেখানে একদম ভোরে কোনও এক রহস্যময় চরিত্র রোজ ফুল দিয়ে পুজো করে যান মহাদেবকে। রোজ সকালে মন্দিরের দরজা যখন খোলা হয়, তখন শিবলিঙ্গে একটি তাজা ফুল দেখতে পাওয়া যায়। এতো গেল অশ্বত্থামা গিরি ও অসিরগড় কেল্লার সংক্ষিপ্ত পরিচয়।

বুরহানপুরে দেখার কী আছে?

আগেই বলেছি, বুরহানপুর একসময় ছিল উত্তর ও দক্ষিণভারতের প্রাণকেন্দ্র। ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান থেকে সরাসরি বাণিজ্য চলত এই বুরহানপুরকে কেন্দ্র করে। এখানে দেখার জায়গাগুলির মধ্যে রয়েছে, দরগা-ই-হাকিমি, শাহি কিলা, গুরদওয়ারা, অসিরগড় কেল্লা, রাজা জয়সিংহের ছত্রি, শাহি জামা মসজিদ, শাহি হামাম, ব্ল্যাক তাজ, আহুখানা, গুপ্তেশ্বর মহাদেব মন্দির, কুন্ডি ভান্ডারা।

বুরহানপুরকে কেন্দ্র করে দেখে নেওয়া যেতে পারে ওমকাশ্বের জ্যোতির্লিঙ্গের মন্দির। ১০৩ কিলমোমিটারের মতো পথ। চাইলে ওমকারেশ্বর থেকে দেখে নিতে পারেন ইন্দোরের কিছু দর্শনীয় স্থান।

বুরহানপুরের কিছু পর্যটনকেন্দ্রে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

দাক্ষিণাত্য জয়ের জন্য সম্রাট শাজাহান এবং তাঁর বেগম মুমতাজ মহল এই বুরহানপুরেই বাস করতেন। তাপ্তী নদীর পাড়েই রয়েছে শাহী কেল্লা। এই বুরহানপুরেই ১১ নম্বর সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় মুমতাজমহল। তাঁকে প্রথমে কবর দেওয়া হয়েছিল এখানেই। এমনকী তাজমহল তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল বুরহানপুরে। কাজও শুরু হয় তাজমহলের, কিন্তু শাহী বাস্তুকারেরা দেখলেন তাপ্তীর স্রোত বর্ষায় এমন রূপ নিচ্ছে, যেখানে তাজমহল তৈরি সম্ভব নয়। তার বুরহানপুরে তাজমহলের কাজ বন্ধ করা হয়। প্রায় ছয় মাস পর, কবর থেকে মুমতাজমহলের দেহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আগ্রায়। কবর দেওয়া হয়, তাজমহলে। পরবর্তী সময়ে সেখানে তাজমহল গড়ে ওঠে।

বুরহানপুরে আরও একটি বিস্ময়কর দেখার জায়গা রয়েছে, সেটি হল কুন্ডি ভান্ডারা। প্রায় ৪০০ বছর আগে তৈরি আন্ডারগ্রাউন্ড জলসরবরাহ ব্যবস্থা। ইরান থেকে বাস্তুকার ও কারিগর এনে এটি তৈরি করিয়েছিলেন আব্দুল রহিম খান-ই-খানা। তিনি ছিলেন আকবরের নবরত্নের অন্যতম এবং বুরহানপুর সেনার কমান্ডার। কুন্ডি ভান্ডারার মাধ্যমে তাপ্তী নদীর জলকে বাইপাস করে, ৮৪টি কুয়োর মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে পুরো শহরে। কোনও পাম্প নেই। এবং সেই জল পরিস্রুত ও পানের যোগ্য। কুন্ডি ভান্ডারার নীচে গেলে দেখা যায়, আজ থেকে ৪০০ বছর আগে এক অদ্ভুত ইঞ্জিনিয়ারিঙের মাধ্যমে একটি তৈরি করা হয়েছিল।

মধ্যপ্রদেশের এই অফবিট ঐতিহাসিক জায়গায় বাঙালিদের পা কমই পড়েছে। আপনারা যাঁরা যেতে চান, তাই সুবিধার জন্য একটি ছোট্ট ট্যুর প্ল্যান দেওয়া হল।

বুরহানপুর সঙ্গে ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ এবং ইন্দোর

প্রথম দিন– হাওড়া থেকে মুম্বইগামী ট্রেন।

দ্বিতীয় দিন– ভুসাওয়াল স্টেশনে নামা দুপুর নাগাদ। এবং সেদিনই ঘণ্টা খানেক বা দুয়েক অপেক্ষার পর, বুরহানপুরগামী ট্রেন ধরে বুরহানপুর পৌঁছন। ভুসাওয়াল থেকে বুরহানপুর ট্রেনে ঘণ্টা খানেকের পথ। হোটেলে পৌঁছে রেস্ট।

তৃতীয় দিন– সকালে ব্রেকফাস্ট করে সকাল সকাল দেখে নেওয়া, দরগা-ই হাকিমি, শাহী কেল্লা, শাহী জামা মসজিদ, আহুখানা, ব্ল্যাক তাজ, গুপ্তেশ্বর মন্দির, রাজা জয়সিঙের ছত্রী। ফিরে হোটেলে রেস্ট।

চতুর্থ দিন– এদিন সকালে ব্রেকফাস্ট করে হোটেল ছেড়ে দিন। প্রথমে চলুন কুন্ডি ভান্ডারা, তারপর দেখে নিন বিখ্যাত অসিরগড় কেল্লা। বিকেল দিকে সোজা রওনা দিন ওমকারেশ্বরের পথে। হোটেলে গিয়ে রেস্ট।

পঞ্চম দিন– এদিন সকালে ওমকারেশ্বর মন্দিরে পুজো দিন, তারপর খাবার খেয়ে সোজা বেরিয়ে পড়ুর ইন্দোরের উদ্দেশে। প্রায় আড়াই ঘণ্টার পথ। এদিন দ্বিতীয় বেলেয় দেখে নিন, লালবাগ প্যালেস, রাজওয়াড়া প্যালেস, ইন্দোর মিউজিয়াম, গোমাতাগিরি দিগম্বর জৈন মন্দির (পাহাড়ের উপরে) সন্ধে নাগাদ ফিরলে কোনও হোটেলে ঘণ্টা তিনেকের জন্য রেস্ট নিন এবং রাতের আহার সেরে নিন। রাতে ইন্দোর জং থেকে শিপ্রা এক্সপ্রেস ধরুন।

ষষ্ঠ দিন– হাওড়া পৌঁছন সকাল সকাল।

বুরহানপুরের ইতিহাস ও অশ্বত্থামাকে নিয়ে একটি অডিও স্টোরি

এই ট্যুর কলকাতাসহ বাংলার কোনও এজেন্সি করে না। তবে চলতি বছরে পুজোর আগে বা পরে এই বিশেষ অফবিট ট্যুরের আয়োজন করা হচ্ছে এখন থেকে ১৯৯ টাকা নিয়ে বুকিং টিকিট তুলে রাখতে পারেন। নয়তো আপনাদের ৮-১০ জনের দল থাকলে পুরো ব্যবস্থা করে দেওয়া জন্য যোগাযোগ করুন এই নম্বরে 9073503958

ভ্রমণের আরও খবরাখবর জানতে ক্লিক করুন এখানে

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

পাশের রাজ্যেই রয়েছে প্রকৃতির এক আদিম জায়গা, বেড়িয়ে আসুন চুপিসারে

স্বাতী চ্যাটার্জি- কাশ্মীর, কেরালা, দক্ষিণভারত, উত্তরভারতসহ গোটা ভারততো বেড়াবেন। আমাদের দেশে দেখার জায়গা অনেক। প্রাকৃতি, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!