নার্টিয়াং দুর্গা মন্দির: মেঘালয়ের ঐতিহাসিক সতী পীঠ

মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া পাহাড়ের নার্টিয়াং গ্রামে অবস্থিত নার্টিয়াং দুর্গা মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক স্থান। এটি ৫১টি সতী পীঠের একটি, যেখানে দেবী সতীর বিভিন্ন অংশ পড়েছিল বলে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়। মন্দিরটি তার আধ্যাত্মিক গুরুত্বের পাশাপাশি আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও বিখ্যাত।

মন্দিরের ইতিহাস

নার্টিয়াং দুর্গা মন্দির প্রাচীনকালে জয়ন্তিয়া রাজাদের রাজত্বকালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ১৫তম শতাব্দীতে নির্মিত হয় বলে ধারণা করা হয়। মন্দিরটি হিন্দু এবং স্থানীয় খাসি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির একটি মেলবন্ধন। দেবী দুর্গাকে এখানে উগ্রতারা বা শক্তির দেবী হিসেবে পূজা করা হয়। কথিত আছে, সতীর বাম উরু এখানে পড়েছিল, যা এই স্থানকে সতী পীঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

মন্দিরের স্থাপত্যে স্থানীয় শৈলী এবং হিন্দু স্থাপত্যশিল্পের প্রভাব লক্ষণীয়। মন্দিরের কাঠামো পাথর এবং কাঠ দিয়ে তৈরি এবং এর ভেতরে দেবী দুর্গার একটি প্রাচীন মূর্তি রয়েছে। মন্দিরে প্রতি বছর দুর্গাপূজা বিশেষভাবে পালিত হয় এবং এটি জয়ন্তিয়া রাজাদের শাসনকাল থেকে চলে আসছে।

মন্দিরে দর্শনের অভিজ্ঞতা

নার্টিয়াং দুর্গা মন্দির পরিদর্শনের সময় এর প্রাচীন স্থাপত্য, দেবীর মূর্তি এবং পূজা আচার মুগ্ধ করে। বিশেষত দুর্গাপূজার সময় এখানে ভক্তদের ঢল নামে। খাসি এবং জয়ন্তিয়া জনগোষ্ঠীর মিলিত সংস্কৃতি এই মন্দিরের বিশেষত্ব।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

নার্টিয়াং দুর্গা মন্দিরের পাশাপাশি এর আশেপাশে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান রয়েছে যা ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে:

নার্টিয়াং মনোলিথস: মন্দিরের কাছেই অবস্থিত এই প্রাকৃতিক শিলাস্তম্ভগুলি খাসি এবং জয়ন্তিয়া জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যের প্রতীক। এগুলি প্রাচীন শাসকদের স্মরণে স্থাপন করা হয়েছিল।

উম্নগোট নদী: এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার নদী হিসেবে পরিচিত উম্নগোট নদী নার্টিয়াং থেকে প্রায় ৫০ কিমি দূরে। এর জল এতটাই স্বচ্ছ যে নৌকা ভাসতে দেখা যায় যেন এটি বাতাসে ভাসছে।

শিলং: মেঘালয়ের রাজধানী শিলং নার্টিয়াং থেকে প্রায় ৬৫ কিমি দূরে অবস্থিত। এখানকার শিলং পিক, এলিফ্যান্ট ফলস এবং ওয়ার্ডস লেক পর্যটকদের প্রিয় স্থান।

চেরাপুঞ্জি: পৃথিবীর অন্যতম বর্ষাপ্রধান এলাকা চেরাপুঞ্জি, যা তার জীবন্ত রুট ব্রিজ এবং গুহাগুলির জন্য বিখ্যাত।

কলকাতা থেকে নার্টিয়াং মন্দিরে ভ্রমণের ব্যবস্থা

কলকাতা থেকে নার্টিয়াং দুর্গা মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য নিচের পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা যায়:

বিমানপথ:

কলকাতা থেকে শিলং বা গুয়াহাটি বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইট নিতে হবে।

গুয়াহাটি থেকে নার্টিয়াং মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিমি এবং শিলং থেকে প্রায় ৬৫ কিমি। স্থানীয় ট্যাক্সি বা গাড়ি ভাড়া করে মন্দিরে পৌঁছানো যায়।

রেলপথ:

কলকাতা থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন পরিষেবা উপলব্ধ।

গুয়াহাটি থেকে সড়কপথে নার্টিয়াং মন্দিরে যাওয়া যায়।

সড়কপথ:

শিলং বা গুয়াহাটি থেকে নার্টিয়াং যাওয়ার জন্য সড়কপথে স্থানীয় বাস বা ট্যাক্সি পাওয়া যায়।

ভ্রমণ পরামর্শ

পর্যটন মৌসুম: অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় নার্টিয়াং ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।

থাকার ব্যবস্থা: শিলং বা নার্টিয়াংয়ের আশেপাশে থাকার জন্য স্থানীয় হোটেল ও হোমস্টে পাওয়া যায়।

খাবার: স্থানীয় খাসি খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

উপসংহার

নার্টিয়াং দুর্গা মন্দির একটি পবিত্র স্থান যা শুধুমাত্র ধর্মীয় তীর্থযাত্রীদের নয়, ইতিহাস, স্থাপত্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রেমীদেরও আকর্ষণ করে। মেঘালয়ের অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত এই মন্দিরটি একটি পরিপূর্ণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে। কলকাতা থেকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এখানে ভ্রমণ করা সহজ এবং স্মরণীয়।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

কোণার্ক সূর্য মন্দির: এক ঐতিহাসিক বিস্ময়

ভূমিকা: ভারতের অন্যতম প্রাচীন এবং বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শন হলো ওডিশার কোণার্ক সূর্য মন্দির। এই মন্দিরটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!