অর্বিট ডেস্ক- করোনার জন্য সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতের পর্যটন শিল্প। ছোট থেকে বড় সমস্ত সংস্থাই ব্যাপক ক্ষতির মুখ দেখেছে। হালে লকডাউন ওঠার পর কিছুটা বাজার চাঙ্গা হতে আশায় যখন বুক বাঁধা শুরু হয়েছিল, তখন আবার মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে পর্যটন শিল্প। যদিও OTA (Online Travel Agency) গুলি নিত্যদিন গ্রহকের টাকা মেরে চলেছে। কার্যত লুঠ চালানোর অভিযোগ উঠছে তাদের বিরুদ্ধে।
কলকাতার এক ট্যুর অপারেটর পার্থ সাহার দাবি, লকডাউন ওঠার পর, বাজার কিছুটা চাঙ্গা হয়েছিল। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেই পর্যটনের যাওয়ার রাস্তা খুলেছিল। হোটেল, গাড়ি, খাওয়া সব মিলিয়ে গড়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ খরচ বাড়লেও পর্যটনের ক্ষেত্রে উত্সাহ দেখাচ্ছিল আম জনতা। কিন্তু নতুন করে অমিক্রন, করোনার বাড়বাড়ন্ত দেখে, কেউ ঝুঁকি নিতে চাইছে না। ফলে আবার বাজার ক্রমেই বসে যাচ্ছে। তবে সরকার যদি কোনও সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করে আশা করছি তিন চার মাসে বাজার আবার চাঙ্গা হবে।
পার্থবাবুর অভিযোগ, করোনা আবহের জন্য পরিস্থিতি দৈনিক পরিবর্তন হচ্ছে, কখনও ট্রেন বাতিল হচ্ছে, কখনওবা ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। এক্ষেত্রে OTA (Online Travel Agency) গুলির একাংশ হয়রানি শুরু করেছে। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর আমাদের কিছু ক্লায়েন্টের যাত্রা ছিল। সেই মতো আগাম টিকিট কাটা হয়েছিল GOIBIBO –র মাধ্যমে।
রেল ট্রেন ক্যান্সেল করে। এবং মেসেজে জানিয়েও দেয় টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কিন্তু GOIBIBO কাস্টমার কেয়ার পাত্তাতো দিতেই চায়নি, বরং অ্যাপের মাধ্যমে ক্লেম করার দাবি জানানো হয়। যদিও দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর অ্যাপে দেখা যাচ্ছে, ৩০ ডিসেম্বর আপনাদের জার্নি কম্প্লিট। রেল যেখানে ট্রেন ক্যান্সেল করে দিয়েছে, সেখানে GOIBIBO-র দাবি, ট্রেন যাত্রা করেছে।
অতি সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ঘটে MAKE MY TRIP এর ক্ষেত্রেও। কলকাতার বাসিন্দা পাঞ্চালী রায়চৌধুরী বারাণসী থেকে কলকাতা একটি ফ্লাইট টিকিট কাটেন। টিকিট কাটার দু দিনের মধ্যে জানানো হয়, ফ্লাইট ক্যান্সেল। ফুল রিফান্ডের দাবি জানানো হয়।
দিন চারেকের মধ্যে গো এয়ার টাকা রিফান্ড করলেও, MAKE MY TRIP জানায়, সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের কাছে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে এবং সেটি এক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। বিষয়টি সরকারি স্তরে দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরেই ১০ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়।
এ বিষয়ে ডায়রেক্টর জেনারেল সিভিল অ্যাভিয়শনের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এক কর্তা জানান, কোভিডকালে সরকারি বিভিন্ন বিধি নিষেধ আরোপের জন্য বিমান পরিষেবায় ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি ভিন্ন রাজ্য তাদের মতো বিধি আরোপ করতে পারে এবং করছে, ফলে সমস্যাও হচ্ছে।
বহু মানুষ আগের মতো বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না, ফলে বিমান সিডিউল থাকলেও, তা বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছে লোকসানের ভয়ে। কিন্তু OTA গুলি যে ভাবে টাকা দীর্ঘদিন আটকে রাখছে তা অন্যায়। টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারের কড়া বিধি রয়েছে। ইচ্ছেমতো চলতে পারে না।
এক্ষেত্রে আম জনতার কাছে অনুরোধ করবো, কোনও OTA (Online Travel Agency) দিনের পর দিন টাকা আটকে রাখলে আর ফেরত না দিলে, সরাসরি আমাদের দফতরে ইমেল মারফত যোগাযোগ করতে পারেন। এমনকী আমাদেকে tweet করতে পারে। বহু মানুষ অভিযোগ করেন না, কেবল সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করে। মনে রাখতে হবে সোশ্যাল মিডিয়া বিচারক নয়। আমাদের কাছে যত বেশি অভিযোগ আসবে, তত দ্রুত কড়া পদক্ষেপ করা সম্ভব হবে।
GOIBIBO –র রেল টিকিট প্রসঙ্গে এক কর্তা জানান, ভিন্ন এজেন্ট, ও OTA গুলিকে ফ্র্যাঞ্চাইসি দেয় IRCTC নিয়ম অনুসারে IRCTC টাকা রিফান্ড করলে তিন কর্মদিবসের মধ্যে OTA গুলিও টাকা পেরত দিতে বাধ্য। যে ট্রেন ক্যান্সেল হয়েছে, অথচ OTA দাবি করছে, ট্রেনের জার্নি কম্প্লিট এটা মারাত্মক অন্যায়।
এবিষয়ে যেটি করা উচিত, পুরো ঘটনা, PNR নম্বর তথ্য প্রমাণের স্ক্রিনশট থাকলে, তা সাজিয়ে রেলমন্ত্রী, রেলবোর্ড, IRCTC-র ভিজিল্যান্স দফতরে ইমেল করুন। সেই ট্যুইটও করুন। ফল অবশ্যই পাবেন। অভিযোগ একাধিক এলে যত বড় কর্পোরেট সংস্থা হোক লাইসেন্স বাতিল হতে পারে ও জরিমানাও হতে পারে।
মেক মাই ট্রিপ এবং গো আইবিবো একই সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন। এই অভিযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, কাস্টমার কেয়ারের তরফে জানানো হয়, এগুলি সবই উপরমহলের সিদ্ধান্ত তাদের কিছু করার নেই।