Breaking News

বেড়িয়ে আসুন ত্রিপুরা, চেনা জায়গার সঙ্গে অচেনা দর্শনীয় স্থান।

অর্বিট ডেস্ক– পর্যটনক্ষেত্রে বৈচিত্র্য যদি পেতে হয়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে বাছতে হবে উত্তর পূর্ব ভারত। এর মধ্যে রয়েছে, ত্রিপুরা, মণিপুর, মিজোরাম, অরুণাচল, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড এবং আসাম। ভারতের পর্যটনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্বের রাজ্যগুলি যতটা জনপ্রিয়, উত্তরপূর্ব ভারতের অধিকাংশ রাজ্য ততটা নয়। তার অন্যতম কারণ উগ্রপন্থী কার্যকলাপ ও পরিকাঠামোর অভাব। স্বাধীনতার পর বহু বছর উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে সে ভাবে নজর দেওয়া হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কিছুটা ভারতের অবস্থান পরিবর্তন হওয়ার পর, উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি নিয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
তবে হলফ করে বলা যায়, যাঁরা একবার উত্তরপূর্ব ভারত বেড়িয়ে আসেন, তাঁরা আরও একবার যেতে চান। তার পিছনে মূল কারণ, প্রকৃতিক শোভা এবং নানা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য। বহু জনজাতি, উপজাতির বাস এ রাজ্যগুলিতে।

কিছুকাল আগে পর্যন্ত উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রবেশ দ্বার মনে করা হত গুয়াহাটিকে। এখন ত্রিপুরার আগরতলা দ্বিতীয় প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিতি পয়েছে। ত্রিপুরা এক প্রাচীন রাজ্য। এ রাজ্যের কথা মহাভারতেও উল্লেখ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে মাণিক্য রাজবংশের রাজারা রাজত্ব করেছেন। তা এখনও লিপিবদ্ধ আছে, রাজমালা গ্রন্থবলির পাতায়। মাণিকিয বংশের শেষ রাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য মারা যান ১৯৪৭ সালে। রাজমাতা কা়্চনপ্রভাদেবীর সঙ্গে ভারত সরকারের একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। সময়টা ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭। এর ফলে ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরা ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি পৃথক রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরা জন্ম নেয়।


ত্রিপুরা নামের উত্পত্তি নিয়ে কিছু মতবিরোধ আছে। একটা অংশের মত, রাজা ধন্যমাণিক্যের প্রতিষ্ঠিত দেবী ত্রিপুরাসুন্দরীর নাম থেকে রাজ্যের নামকরণ। আবার দ্বিতীয় মত পল, রাজা যযাতির পৌত্র ত্রিপুরের নাম থেকে ত্রিপুরা নামের জন্ম। আরও একটি মত, ত্রিপুরা শব্দ এসেছে তুই ও প্রা শব্দদুটি থেকে। তুই কথার অর্থ জল এবং প্রা কথার অর্থ নিকটে বা কাছে। অর্থাত জলের ধারে অবস্থিত রাজ্য। এই তুইপ্রা থেকেই ত্রিপুরা কথাটি এসেছে। ত্রিপুরার সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের একটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। ত্রিপুরার প্রেক্ষাপটেই তিনি লেখেন বিসর্জন নাটক।


ত্রিপুরা- উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি নিয়ে যে পর্যটকদের মধ্যে একটা ভীতি আছে, তা আগেই বলেছি। ফলত, ত্রিপুরা নিয়েও অনেকে একই প্রশ্ন তোলেন, কতটা নিরাপদ? পর্য়টনের ইতিহাস বলছে, ত্রিপুরায় গিয়ে কোনও রকম বিপদে কখনও কাউকে পড়তে হয়নি। যদিও ত্রিপুরায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ইতিহাস যে জায়গা জুড়ে, তা মূলত পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায়। ডম্বুর লেক ছাড়া ত্রিপুরার প্রত্যেকটি পর্যটনকেন্দ্র নিরাপদ।

আগরতলা- ত্রিপুরার প্রাচীন রাজধানী ছিল উদয়পুরে। ১৭৭০ সালে রাজা কৃষ্ণ মাণিক্য উদয়পুর থেকে রাজধানী সরিয়ে আনেন পুরনো আগরতলায়। ১৮৪০ সালে পুরনো আগরতলা থেকে রাজধানী সরিয়ে আনা হয়, নতুন আগরতলায়। বর্তমানে আগরতলা পুরোদস্তুর একটা বাঙালি শহর। শহরের মাঝেই রয়েছে উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ। ১৯০১ সালে এটি তৈরি করান রাজা রাধাকিশোর মাণিক্য। এটি বর্তমানে বিধানসভা ভবন। এরপর দেখে নিন কুঞ্জবন প্রাসাদ। এটি বর্তমানে ত্রিপুরার রাজ্যপালের আবাসস্থল। প্রাসাদ দেখেতে হলে, রাজ্যপালের অফিস থেকে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করে নিন। আগরতলায় আরও যা দেখার রয়েছে তা হল, মালঞ্চ নিবাস, মহারাজা বীরবিক্রম কলেজ, স্টেট মিউজিয়াম, জগন্নাথ মন্দির, বেণুবন বিহার, আনন্দময়ী মায়ের আশ্রম, ঊমা মহেশ্বর মন্দির, গেদু মিঞার মসজিদ। শহর থেকে কিছু দূরে চতুর্দশ দেবতার মন্দির ও প্রাচীন রাজপ্রাসাদ।


সিপাহিজলা- সিপাহিজলা হল ত্রিপুরার সবচেয়ে বিখ্যাত অভয়ারণ্য। শহর থেকে ২৫ কিমি দূরে। এ অরণ্যে চলার পথে চোখে পড়বে, শাল, সেগুন, কফি ও রাবারের বাগান। অরণ্যের মধ্যে পাবেন ভিন্নজাতের বন্যপ্রাণ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, চশমা বাঁদর, কাঁকড়াভুক, নেউল, বিস্টুরং, উল্লুক, প্যাঙ্গোলিন, মাউস ডিয়ার, লেপার্ড, ক্যাট, শজারু, হায়না, ভল্লুক, চিতাবাঘ ইত্যাদি। সিপাহিজলায় রয়েছে বনবাংলো অবসারিকা, প্রয়োজনে একটা রাত এখানে কাটাতে পারেন।


ত্রিপুরার হস্তশিল্প ভারতের গণ্ডী ছাড়ায়ি আন্তর্জাতিক খ্যতি পেয়েছে। তাঁতশিল্পের পাশাপাশি বাঁশ ও বেতের তৈরি উপকরণ তাক লাগিয়ে দেয়। ত্রিপুরা সরকারের সেলস এম্পোরিয়াম পূর্বাশা থেকে কেনাকাটা করতে পারেন।
Read More:-ব্রিটিশ খেদানোর প্রথম বিপ্লব শুরু এখানেই

কমলাসাগর- আরগতলা থেকে ৩০ কিমি দূরে কমলাসাগর। রাজা ধন্যমাণিক্যের স্ত্রী কমলাদেবী এক বিশাল দিঘির খনন করান। সেই থেকে দিঘির নাম হয় কমলাসাগর। দিঘির পাড়ে একটি টিলায় রয়েছে কালীমন্দির। একে কসবা কালীবাড়ি বলা হয়। দিঘির পাড়ে কাঁটাতারের বেড়া, ওপাশে বাংলাদেশ। দেখা যাবে বাংলাদেশের কসবা রেলস্টেশন। শান্ত, নির্জন, নিরিবিলি পরিবেশ।
উদয়পুর- আগরতলা থেকে ৫৫ কিমি দূরে উদয়পুর। ত্রিপুরার প্রাচীন রাজধানী। এই জায়গার আগে নাম ছিল রাঙামাটি। উদয়পুরকে দিঘি ও মন্দিরের শহর বললে বাহুল্য হবে না। এখানের সবচেয়ে বড় মন্দির মাতাবাড়িতে কল্যাণসাগরের ধারে অবস্থিত। একান্নপীঠের অন্যতম দেবীস্থান ত্রিপুরাসুন্দরী বা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের কাছেই কল্যাণ সাগর। এটি বিখ্যাত প্রাচীন কচ্ছপ ও বিশালাকার মাছেদের জন্য। উদয়পুরে একে একে দেখে নিন, গুণবতী মন্দির, ত্রিপুরেশ্বর মন্দির, গোপীনাথ মন্দির, জগন্নাথ দিঘি, মহাদেব দিঘি, ধানিসাগর, আমরাসাগর।


ভারতবিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী এবং সুরকার শচীন্দ্রনাথ বর্মন ছিলেন ত্রিপুরা রাজপরিবারের সন্তান। শুধু সঙ্গীতের জন্য প্রথমে কলকাতা ও পরে মুম্বই পাড়ি দেন। তিনি বলিউডে পরিচিত হন এস ডি বর্মণ নামে।


রুদ্রসাগর ও নীরমহল- আগরতলা থেকে ৫৩ কিমি দূরে বেশ বড় জনপদ মেলাঘর। এই শহরের কাছেই আছে, রুদ্রসাগর নামে এক বিশাল জলাশয়। এই সরোবরের পাশেই নীরমহল। ত্রিপুরার শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকীর্তি। মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্যের উদ্যোগে এই প্রাসাদের নির্মাণ। কয়েক দশক এটি চূড়ান্ত অবহেলার শিকার ছিল। যদি গত কয়েক বছরে সরকারি উদ্যোগে পুরনো হালে ফেরানো হয়েছে। রুদ্রসাগরের তীরে আছে সরকারি ট্য়ুরিস্ট লজ সাগরমহল।


উনকোটি- আগরতলা থেকে ১৭৮ কিলোমিটার দূরে পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা উনকোটি পর্যটনকেন্দ্র। এটি উত্তরদিনাজপুরের রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত। পাহাড়ের পাথরে খোদাই রয়েছে অসংখ্য দেবী মূর্তি। এছাড়া বিশাল এলাকা জুড়ে ছছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মূর্তির আকার নেওয়া নানা সাইজের পাথরখণ্ড। উনকোটির বিস্ময়কর মূর্তি হল তিরিশফুটের শিব ঠাকুরের মুখমণ্ডল। এটিকে উনকোটিশ্বর কালভৈরব নামে ডাকা হয়। গবেশকদের মত, এই পাথরের ভাস্কর্য তৈরি হয়েছিল অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে।

আরও পড়ুন- মানস কৈলাস সফরের পুরো প্ল্যান

কিংবদন্তি রয়েছে এই পাহাড়ে একটি কম এক কোটি পাহরের দেবদেবীর মূর্তি ছিল, সেই থেকে এই উনকোটি নামকরণ।
জম্পুই- আগরতলা থেকে ২৫৫ কিমি দূরে অবস্থিত জম্পুই। এই অঞ্চলকে বলা হয়, চিরবসন্তের দেশ। ত্রিপুরার একমাত্র হিলস্টেশন এই জম্পুই। উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার ফুট। এই জায়গাটি বিখ্যাত, প্রকৃতিক শোভা ও কমলা বাগানের জন্য। আগরতলা থেকে জম্পুই যাওয়ার পথ বেশ রোমাঞ্চকর। জম্পুই পাহাড়ের প্রধান জনপদ ভাংমুন। পথে পড়বে, চা, কফি, রাবার আর আনারসের বাগান। জম্পুই পাহাড় উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত হয়ে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত। এখানে অনেক ছোট বড় গ্রাম রয়েছে, গ্রামে লুসাই উপজাতিদের বাস। এরা ইংরেজ শাসনকালে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে।


কীভাবে যাবেন-
ত্রিপুরা যেতে হলে আকাশপথেই ভালো। কলকাতা থেকে আগরতলা বিমান। আগরতলা পৌঁছে ত্রিপুরা সফর শুরু করতে হবে। তবে এ রাজ্য দুভাবে সফর করা যায়, নিজেদের উদ্যোগে অথবা সরকারি পর্যটন দফতরের উদ্যোগে।


ãOrbitnews.in- অনুমতি ছাড়া এই সাইটের কোনও লেখা নেওয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুগুল কপিরাইট কি দ্বারা প্রোটেক্ট কন্টেন্ট।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

পাশের রাজ্যেই রয়েছে প্রকৃতির এক আদিম জায়গা, বেড়িয়ে আসুন চুপিসারে

স্বাতী চ্যাটার্জি- কাশ্মীর, কেরালা, দক্ষিণভারত, উত্তরভারতসহ গোটা ভারততো বেড়াবেন। আমাদের দেশে দেখার জায়গা অনেক। প্রাকৃতি, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!