ভূপাল-সাঁচি-বিদিশা-পাঁচমারি-জব্বলপুর
ভূপাল
মধ্যপ্রদেশের রাজধানী শহর ভূপাল এক ঐতিহাসিক শহর। ১১ শতকে রাজা ভোজের আমলে এই শহরের প্রতিষ্ঠা। পরে এখানে রাজত্ব করেন দোস্ত মহম্মদ খান। পুরনো ও নতুন ভূপাল শহরে রয়েছে একাধিক দেখার জায়গা। শহরের দুটি ফুসফুস হল, আপারলেক এবং লোয়ার লেক। ভূপালে মোটামুটি দুদিনের সফর সবচি রাখতে হয়। প্রথম দিন ভূপাল শহরটিকে দেখে নেওয়া। দ্বিতীয় দিনে এই শহর থেকে দেখে আসতে পারেন সাঁচি। ভূপালে দেখার জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম, তাজ-উল-মসজিদ, জামা মসজিদ, মোতি মসজিদ, সদর মঞ্জিল, চক বাজার, ভবন আর্ট গ্যালারি। এছাড়া রয়েছে, ট্রাইবাল মিউজিয়াম, বনবিহারি সাফারি পার্ক, অ্যকোয়ারিয়াম, লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির।
সাঁচি
ভূপাল থেকে ৪৬ কিমি দূরে সাঁচি। একদিনে সফর সেরে নেওয়া যায়। এখানে রয়েছে ২০০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধ স্তূপ। সম্রাট অশোকের আমলে এটি তৈরি হয়। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে এই বৌদ্ধ স্তূপ। সম্রাট অশোক এখানেই বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন। সাঁচির ১,২,৩ নম্বর স্তূপগুলির কারুকার্য অসামান্য। পরে দেখে নিন শ্রীলঙ্কার মহাবোধি সোসাইটির বুদ্ধমন্দির ও পুরাতত্ত্ব মিউজিয়াম। পারলে একটি রাত কাটাতে পারেন। নয়তো ভূপাল থেকে একদিনে সাঁচি দেখে নেওয়া সম্ভব।
বিদিশা-উদয়গিরি
সাঁচি দেখা হলে চলে যান বিদিশায়। প্রাচীন বিদিশা নগরীর বয়স আনুমানিক ২৭০০ বছর। বেতোয়া ও বেস নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত বিদিশা। এখানে মহাকবি কালিদাস রচনা করেন মেঘদূতম কাব্য। বিদিশার পাশে বেসনগর গ্রাম। এখানে রয়েছে হেলিওডোরাস স্তম্ভ। আনুমানিক ১৪০ খিঃপূর্বাব্দে ভারতে অভিযান চালান গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার। সেই সময় গ্রিক বীর হেলিওডোরাস এই গড়ুর স্তম্ভটি নির্মাণ করেন। বৌদ্ধ ও গ্রিক স্থাপত্যে নির্মিত এই স্তম্ভকে খাম্বাবাজ বলে। বিদিশা দেখা হলে, ১০ কিমি দূরে পৈঁছে যান উদয়গিরি গুহায়। গুপ্তযুগকে কেন স্বর্ণযুগ বলা হয়, তা বোঝা যাবে উদয়গিরিতে এলে। উদয়গিরির অদিকাংশ গুহা ধ্বংসপ্রাপ্ত। তবে ২০টি গুহা এখনও রয়েছে। ১ এবং ২০ নম্বর গুহায় জৈন স্থাপত্য নিদর্শন, বাকি ১৮টি হিন্দু ভাস্কর্য রয়েছে।
ভোজপুর-ভীমভেটকা
মধ্যযুগের পারমার রাজা ভোজ, বর্তমানের ভোজপুরে চাষাবাদের জন্য একটি সরোবর তৈরি করান। সেখানেই নগরের পত্তন করেন। এখানে দর্শনীয় স্থান বলতে রয়েছে সোমনাথ ভোজেশ্বর মন্দির। দেবতা হলেন, ভোজেশ্বর শিব। মন্দিরের ছাদের নকশা অসাধারণ। ভোজপুর দর্শন সেরে চলে যান ভীমভেটকা। দুর্গম বিন্ধ্য পর্বতে ঢালে শালবনে ছাওয়া ভীমভেটকা। পাহাড়ের গায়ে পাথর কেটে তিন ধাপে প্রায় সাতশোর বেশি গুহা। ওপরের গুহাগুলিতে প্রাগঐতিহাসিক মানুষের হাতে আঁকা ছিত্র। ছবির মনূল বিষয় শিকার ও সেিসময়কার জীবনযাত্রা নিয়ে। মনে করা হয়, গুহাচিত্রগুলি ১০ হাজার বছরের পুরনো। এছাড়া ভীমভেটকায় রয়েছে পাহাড়ি ঝরনা ও দেবী দুর্গার মন্দির।
পাঁচমারি
সাতপুরা পাহাড়ের সবুজের মাঝে গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রদেশের হিল স্টেশন পাঁচমারি। ১৮৫৭ সালে ক্যাপ্টেন পোরসাইথ জঙ্গলের মধ্যে এই উপত্যকা আবিষ্কার করেন। পরে এখানে ব্রিটিশদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে উঠলে, ধীরে ধীরে নগরের রূপ নিতে শুরু করে। পাঁচমারির সর্বোচ্চ জায়গা হল ধুপগড়। পাঁচমারিতে একে একে দেখে নিতে পারেন, জটাশহ্কর, পাণ্ডবগুহা, হান্ডি খো, প্রিয়দর্শীনি পয়েন্ট, বড় মহাদেব, গুপ্ত মহাদেব, বি প্রতাপ। হাতে সময় থাকলে দেখে নিন চিলড্রেন্স পার্ক, পাঁচমারি লেক, মিউজিয়াম প্রভৃতি।
জব্বলপুর
জব্বলপুরের মূল আকর্ষণ মার্বেল রক আর নর্মদার জলপ্রপাত। পাশের পাহাড়ের ওপরে নির্মাত গোন্ডারাজাদের দুর্গ। কেল্লা তৈরি হয় ১২ শতকে। তারও আগে জায়গাটি ছিল কালচুরি শাসনের অধীনে। গোন্ডা রাজাদের সময়ে বসতি শুরু হয়। জব্বলপুর যদিও বর্তমানে পুরোদস্তুর ব্যস্ত বাণিজ্যিক শহর।প্রথমে দেখে নিন মার্বেল রক। নদীর তীরে পঞ্চবটী ঘাট থেকে নৌকায় জলবিহার করুন। এই অঞ্চলকে ভেড়াঘাটও বলে। ভেড়াঘাট থেকে ৩ কিমি দূরে ধুঁয়াধার ফলস। নম্রদার এই জলপ্রপাত ১২০ ফুট উঁচু থেকে ঝরে পড়ছে। একে একে দেখে নিন চৌষট যোগিনীর মন্দির, মদনমহল দুর্গ ও দুর্গাবতী মিউজিয়াম।