অর্বিট ডেস্ক– কোনও মহিলা যদি যমজ সন্তান প্রসব করেন, তাহলে সেটা খবর বলা চলে না। আবার কোনও মহিলা যদি তিনটি সন্তান প্রসব করেন, তাহলেও খবর বলা চলে না। কিন্তু একটা গ্রামের অধিকাংশ মহিলা যদি যমজ সন্তান প্রসব করেন? এবং সেই পরম্পরা চলে আসে প্রায় কয়েক দশক ধরে?
তাহলেতো বলতেই হয় ওই অঞ্চলে প্রাকৃতিক কোনও রহস্য রয়েছে। কোদিনহী। কেরালার মালাপ্পুরাম জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। তিরুরাঙ্গাড়ি শহর থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে এই রহস্যময় গ্রাম। ২০০৮ সালের এক পরিসংখ্যান বলছে, এই গ্রামেই রয়েছে প্রায় ২ হাজার পরিবার। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর, এই গ্রামটি নান্নামব্রা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। গ্রামটির অধিকাংশ বাসিন্দা সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায়ের।
গ্রামটি আপাত দৃষ্টিতে দেখলে ভারতের আর পাঁচটা গ্রামের সঙ্গে এর কোনও আলাদা পার্থক্য নেই। কিন্তু যেটা আছে তা হল, রহস্যময় এক ঘটনা পরম্পরা। আর সেই কারণেই, আন্তর্জাতিক স্তরে এই ছোট গ্রাম এখন গবেষণার বিষয়।
পুরো ঘটনাটাই নজরে আসে একটি সমীক্ষা চলার সময়।
দেখা গিয়েছে, এই গ্রামের অধিকাংশ মহিলাই প্রসব করেন যমজ সন্তান। হালের এক সমীত্রায় দেখা গিয়েছে, গ্রামে ৪০৮জন রয়েছেন যমজ (২০৪ জোড়া)। স্থানীয়দের মত, এমন বহু মহিলা আছে যাঁদের বিবাহ হয়েছে অন্য জায়গায়, তবু এই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ার দরুন, তাঁদেরও সন্তান যমজ হয়েছে।
একাধিক চিকিৎসক এবং গবেষকদের মত, এই অঞ্চলের জলে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা মহিলাদের একাধিক ভ্রুণ ধারণ করতে সাহায্য করে। এই গ্রামে প্রথম যমজ সন্তান হওয়ার ইতাহাস মেলে ১৯৪৯ সালে। পরে কয়েক দশকে সেই সংখ্যাটা অনেকটাই বেড়েছে।
সারা ভারতের হিসেব কষলে কোনও অঞ্চলে এত ব্যাপক মাত্রায় যমজ সন্তান প্রসবের নজির নেই। সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে ১ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৭৯ টি শিশু রয়েছে যাঁরা যমজ। রহস্য নিরিখে বিচার করলে ভারতের এই গ্রাম যেমন অদ্বিতীয়, তেমন সারা বিশ্বের বলা যাবে না। কারণ নাইজেরিয়ার ইগবো ওরা এলাকায় একই ছবির দেখা মেলে।
লেগোস বিশ্বাবিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ইগবো ওরা গ্রামের জলে এক ধরণের রাসায়নিক বস্তু রয়েছে, যা মহিলাদের একাধির ভ্রুণ ধারণ করতে সাহায্য করছে। তাই সেখানেও যমজ বা ত্রিজামা সংখ্যা বেশি।
ব্রাজিলের ক্যানডিডো গোডোই এলাকাতেও মাত্রাতিরিক্ত যমজের সংখ্যা নজরে এসেছে আন্তর্জাতিক স্তরে।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের পরিসংখ্যান ধরলে কেরালার কোদিনহী গ্রাম শীর্ষে রয়েছে। গবেষকরা তাঁদের যুক্তি দাবি করলেও, এই ঘটনা পরম্পরায় রহস্য এখনও অন্ধকারেই রয়েছে।