Breaking News

মহাশ্রীযন্ত্র কীভাবে কাজ করে? কুসংস্কার নাকি সত্যি কাজ করে! অর্বিট নিউজের বিশেষ প্রতিবেদন

অর্বিট ডেস্ক– দুনিয়া জুড়ে রয়েছে অসংখ্যা ফাঁদ। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের চোরাবালিতে পড়ছেন বহু সাধারণ মানুষ। লৌকিক বিশ্বাস, সংস্কার, কুসংস্কার নিয়েই আজকের অমৃতকথায় বিশেষ প্রতিবেদন।

ঈশ্বর এক কিন্তু তাঁকে ভিন্নজন ভিন্ন রূপে পুজো করেন, উপাসনা করেন।  কারও কাছে কোনও বিশিষ্ট দেবতা বা দেবীই একমাত্র আরাধ্য বাকি সমস্ত খাটো।  কেউ ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না, কেউবা বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসী এমন নানা ধাঁধার মধ্যেই সমাধান খোঁজার চেষ্টা চালানো হবে। এ বিষয়ে আমরা কথা বলবো বৈদিকশাস্ত্রে পণ্ডিত আচার্য নিগমানন্দ গিরি মহারাজের সঙ্গে।

প্রশ্ন- ঈশ্বর কি, তাঁকে কি দেখা যায়?

উত্তর– ঈশ্বর এক অবিনশ্বর শক্তি, যা গোটা ব্রহ্মাণ্ডকে পরিচালনা করছেন, ভিন্নরূপে, কখনও স্থায়ী, কখনও সচল, কখনও সৃষ্টির সঙ্গে কখনওবা বিধ্বংসের সঙ্গে।

প্রশ্ন- নিরাকার আর মূর্তিপুজোর মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর– কোনও পার্থক্য নেই। সহজ উদাহরণ হল, যখন একটি শিশু নিজে নিজে খেতে শিখে যায়, নিজের কাজ সময়ে করতে অভ্যস্ত হয়, তখন তাকে টিভি বা মোবাইল দেখিয়ে খাওয়াতে বা কাজ করাতে হয় না। কিন্তু যখন সে ছোট থাকে তাকে মোবাইল, টিভি বা কোনও খেলার উপকরণ দিয়ে ভোলাতে হয়। ফলে শিশুর মোটিভেশনের ক্ষেত্রে টিভি, মোবাইল, বা খেলার বস্তুর ভূমিকা নেই বললে চলবে না। অথচ সেগুলি জড়বস্তু।  আজকালকার মনোবিজ্ঞানীরাওতো একটি শিশুতে ভোলাতে বা মাইন্ডসেট চেঞ্জ করতে বহু জড়বস্তুর সাহায্য নেয়। সেগুলি জড় হলেও মনে কীভাবে প্রভাব ফেলে!

প্রশ্ন- তন্ত্র, মন্ত্র এসবের কি কোনও ক্ষমতা আছে? নাকি বুজরুকি, লোক ঠকানো বিষয়?

উত্তর– খুব ভালো প্রশ্ন, আজকাল ভক্তদের কাছে অনেক গল্প শুনি ও নানা টিভি সিরিয়াল আরও কতকি হচ্ছে সেগুলির খবর পাই।  আসলে তন্ত্র ও মন্ত্র এগুলিকে ভিন্ন জন ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করে, ভিন্ন ভাবে প্রচার করে। যার অধিকাংশই জানে না এগুলো কী ও কীভাবে করা হয়। আসলে সমাজের ৯৮ শতাংশ মানুষ এগুলো সম্পর্কে জেনেছে টিভি, সিনেমা, বা গল্প পড়ে।  তোমরা সবাইতো স্কুলে কলেজে পড়েছো? সেখানে কতজন মাস্টারমশাই বা দিদিমনিকে মন দিয়ে শুনতে? সব ছাত্রছাত্রী কি সব মাস্টারমশাই বা দিদিমনিকে মন দিয়ে শুনতো? বা শুনেছে? তাহলে এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, যাদের লেকচার শুনতে ভালো লাগত না, তারা কি অযোগ্য?

এখানে আসল বিষয় হল, দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষমতা। সেই মাস্টারমশাই বা দিদিমনির কথাবার্তা, জ্ঞান, আচার ব্যবহার কতটা আমাদের মনে প্রভাব ফেলছে, সেখানেই সাফল্য।  একজন ছাত্র বা বা ছাত্রী মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত একাধিক বিষয় পড়ে, সবার কি সব বিষয় ভালো লাগে? সবেতে সমান নম্বর পায়? তেমন তন্ত্র ও মন্ত্র এগুলো একটি বিষয়। অঙ্কের মাস্টার অনেক হয়, কিন্তু কিছু মাস্টারই ভালো নাম করে, তার নাম ছড়িয়ে পড়ে।

শ্রীযন্ত্র- প্রতীকী ছবি, ব্যবহারের জন্য নয়।

প্রশ্ন– মহাশ্রীযন্ত্রটি ঠিক কী!

উত্তর– বৈদিক শাস্ত্রে বহু যন্ত্রের কথা ও মন্ত্র রয়েছে। ভিন্ন ব্যবস্থায় সেগুলি ব্যবহার হয়। মহাশ্রীযন্ত্র মহাশক্তির আধার। এটি সেই শক্তির উপাসনা করা যার দ্বারা ব্রহ্মাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। বলা যেতে পারে সুপ্রিম এনার্জি।

প্রশ্ন-তাহলে শ্রীযন্ত্র বা মহাশ্রীযন্ত্র বাড়িতে রাখলে কি কল্যাণ, সুখ, সমৃদ্ধি এসব হবে?

উত্তর– না, হবে না।  কোথায় লেখা আছে, শ্রীযন্ত্র বাড়িতে রাখলে কল্যাণ হবে? যাঁরা বলছে, মিথ্যে কথা, ডাঁহা মিথ্যে।

প্রশ্ন– কিন্তু আপনি যে দৈনিক দুবার শ্রীযন্ত্রের উপাসনা করেন?

উত্তর– উপাসনা করি, রেখে দিই না। কেউ যদি ভাবে এসব বাড়িতে রাখলে ভাগ্য বদলে যাবে, মা, বাবার কৃপা হবে, তাহলে ভুল। ওসব কিছু হয় না। শাস্ত্রে পুরো বলেই দেওয়া আছে, আসল হচ্ছে কর্মযোগ।

প্রশ্ন– কর্মই যদি করবে, তাহলে আবার ঈশ্বর উপাসনা কেন?

উত্তর– মোক্ষমার্গের দুটিই পথ, জ্ঞান ও কর্মযোগ। কর্ম মানেই উপাসনা। আলাদাভাবে ঈশ্বর সাধনা যে করতেই হবে, তার কোনও মানে নেই। যে যাই কর্ম করুক, তা যদি সমাজের ও ধরিত্রীর কল্যাণে হয়, সেটাই ঈশ্বর উপাসনা।  তবে কর্ম কিন্তু পবিত্র মন নিয়ে করা উচিত্।

প্রশ্ন– শ্রীযন্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, তাহলে?

উত্তর– আমি তাতো বলিনি, ধরা যাক তুমি তোমার বাচ্ছার জন্য একটি অভিধান কিনে আনলে। সেটি ভালো করে আলমারিতে গুছিয়ে রাখলে, তাতে কি তোমার সন্তানের জ্ঞান সঞ্চয় হবে? তাহলে? বইটিকে নিয়মিত পড়তে হবে এবং সেই শব্দগুলি, চেনা, জানার পর তা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। তবেইতো শব্দগুলি মাথায় থাকবে এবং ঠিক জায়গায়, ঠিক শব্দের প্রয়োগ করতে পারবে।

প্রশ্ন– অভিধান থেকেতো জ্ঞান সঞ্চয় হয়। শ্রীযন্ত্র বা অন্যান্য যন্ত্রের থেকেতো আর তেমন জ্ঞান সঞ্চয় হয় না! আর দুটি বিষয়তো এক নয়।

উত্তর– যে ব্যক্তি অঙ্কে কাঁচা আর ইতিহাসে খুব ভালো, তার জীবন কি থমকে যায়? শ্রীযন্ত্র একটি শক্তি আধার, তেমন অন্যান্য যন্ত্র ভিন্ন শক্তির আধার। একে উপাসনা করলে, যে মানসিক শক্তির জন্ম নেয়, সেই উপলব্ধী একমাত্র সেই ব্যক্তিই করতে পারে।  আর সেই মানসিক শক্তি তার কর্মে উদ্যোগ জোগায়। সেটাই সাফল্য এনে দেয়। কারও মস্তিষ্ক যদি, যে কোনও পরিস্থিতিতে ঠান্ডা থাকে, শৃঙ্খল থাকে, সেই সাফল্য পায়। সে যে কাজই করুক।  যে কোনও নেগেটিভ শক্তিকে সরিয়ে রাখতে পারে।

প্রশ্ন– আরও যদি একটু খুলে বলেন, ঠিক বুঝলাম না।

উত্তর– ধরা যাক, একটি শিশু সে পড়াশুনা করছে আর তার পাশে অনেক শব্দ হচ্ছে। সে কিন্তু পড়াশুনাতেই মনোনিবেশ করে আছে। আবার কিছু বাচ্ছা আছে, কানের কাছে কোনও শব্দ হলেই সে দিকে মন চলে যায়। তখন এই মনকে নিয়ন্ত্রণ করার চর্চা চালাতে হয়।  মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই এক শক্তির প্রয়োজন।  এটা তারই উপাসনা।  যার মধ্যে সেই ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে, তার প্রয়োজন নেই।

Donate us

প্রশ্ন– শ্রীযন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে কি কোনও নিয়ম, বিধিনিষেধ রয়েছে?

উত্তর – অবশ্যই রয়েছে, খাবারের ক্ষেত্রে আছে, আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে রয়েছে, এখানেও তেমন বিধিনিষেধ রয়েছে।

প্রশ্ন– সেইসব বিধি নিষেধ কি কি আছে?

উত্তর-শ্রীযন্ত্রের ফল পেতে হলে, নিয়মিত উপাসনা জরুরি, ইচ্ছেমতো উপাসনা করলাম, কোনওদিন করলাম না এমন করা উচিত্ নয়। যেমন শরীরচর্চা, নিয়মিত সুখাদ্য, সুপাঠ্য ভালো জীবনযাত্রার জন্য জরুরি, তেমনই, শ্রীযন্ত্র উপাসনাটাও জরুরি। তবে এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই শোধন করানো উচিত্।

প্রশ্ন- এটি শোধন কীভাবে করা হয়? পদ্ধতি কি?

উত্তর– বৈদিকশাস্ত্র মতে যাঁরা দীক্ষা নিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের গুরুর কাছে পদ্ধতি জেনে নিতে পারেন। শোধন হচ্ছে একটি ক্রিয়া, এটিতে যাঁরা দক্ষ, তারা এর প্রয়োগ জানেন। এবং বিধিনিষেধ তাঁদের ক্ষেত্রেই বলে দেওয়া হয়।  সবার জন্য সব বিধি নয়।

প্রশ্ন-বাজারে বেশ কিছু শ্রীযন্ত্র কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলি কিনে ব্যবহার করা যায় কি?

উত্তর– প্রত্যেক মানুষের শরীরের সঙ্গে মৌলিক ধাতুর যোগ রয়েছে, সেগুলি দেখে ব্যবহারের বিধি বলা হয়। যেমন অনেকে সোনা পরেন, কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে কালো হয়ে যায়, রুপো বা তামা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এমন অনেকের শরীরে রং পরিবর্তন দেখা যায়। সেক্ষেত্রে ধাতুদোষ কার কী আছে, সেটা দেখেই শ্রীযন্ত্র ব্যবহার বা যে কোনও যন্ত্র ব্যবহার করার বিধি রয়েছে।

অনেক ধন্যবাদ গুরুজি, আজকের আলোচনায় অনেক কিছু জানা গেল। প্রণাম নেবেন।

অমৃতকথা বিভাগে এমন বহু প্রচীন শাস্ত্র সম্পর্কে জানতে আজই আমাদের পেজ ফলো করতে পারেন।
আমাদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ বা টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হতে পারেন।

আর আপনার জীবনে কোনও সমস্যা থাকলে লিখে জানান আমাদের
ফেসবুক পেজে অথবা ফেসবুকে মেসেজ করতে পারেন।

আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।
আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের কিছু অজানা কথা, জেনে নিন পুজোর সময়

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি– কৈলাস থেকে লঙ্কা, জীবজগতের সমগ্র পশুর যিনি পতি, তিনিই পশুপতি। দেবাদিদেব মহাদেব। ব্রহ্মাণ্ডের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!