অর্বিট ডেস্ক– প্রতিবেদনের শুরুতেই একটা প্রশ্ন করা যাক। আজ থেকে দুশো আড়াইশো বছর আগে যখন মর্ডান মেডিসিন বা অ্যালোপ্যাথি চিকিত্সা ব্যবস্থা ফুলে ফেঁপে ওঠেনি, তখন কী ভাবে জটিল রোগের চিকিত্সা হত? আরও একটি প্রশ্ন করা যাক, করোনার মহামারী বিশ্বজুড়ে হানা দেওয়ার পর, একটি আওয়াজ ভারতে তুলকালাম ফেলেছিল, আরও বেশি করে হাসপাতাল তৈরি করা হোক। সে না হয় হল, কিন্তু সেখানে চিকিত্সা করবে কারা? রাতারাতি হাসপাতাল তৈরি করে দেওয়া যায়, কিন্তু রাতারাতি ডাক্তার তৈরি করা যায়কি?
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পড়লে, বহু মন্দিরের নিদর্শন মেলে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও কিন্তু আলাদা করে হাসপাতালে কোনও নিদর্শন মেলে না, কারণ সেই সময় কবিরাজ, বদ্যিদের আশ্রম, টোল, আশ্রমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মন্দিরেই থাকতো চিকিত্সার ব্যবস্থা। আয়ুর্বেদ ও যৌগ চিকিত্সা। আচার্য সুস্রুতের হাত ধরে শল্য অর্থাত অপারেশনও শুরু হয়। আজ সারা বিশ্ব মানতে বাধ্য হয়েছে, প্রচীন শল্য চিকিত্সার জন্ম এ ভারতেই। এবার আসি আজকের পর্বে। হাঁপানি বা অ্যাস্থমা। মডার্ন মেডিসিনের ভাষায় এটি একটি ইনকিউরেবল ডিজিজ। অর্থাত রোগটি সারার নয়। ফলে মেডিসিন আর ইলহেলারই জীবনের এমাত্র সঙ্গী হয়ে ওঠে। আজকাল শিশুদের মধ্যেই এই প্রবণতা বড্ড বেশি করে দেখা যাচ্ছে।
যাঁদের ফুসফুস দুর্বল, তাঁরা যে কী কষ্টে ভোগেন এই হাঁপানির জেরে, তাঁরাই বোঝেন। অথচ ছোট খাটো সহজ সরল কয়েকটি যোগ আর খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনলেই, এই রোগ থেকে স্বস্তি মেলে।
ভ্রমণ প্রাণায়ম
এই যোগ অত্যন্ত সহজ ও সরল, যে কেউ করতে পারেন। তবে শৈশব বয়স থেকে এর অভ্যাস করলে, ভবিষ্যতে হাঁপানির মতো জটিল, কষ্টদায়ক রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। যাঁদের হাঁপানি আছে, এবং মডার্ন মেডিসিনে অভ্যস্ত হয়ে আছেন, তাঁরাও অভ্যাস করতে পারেন। সুফল কয়েক মাসেই মিলবে। তবে শুরু করবেন বিধি মেনে।
পদ্ধতি- সকালে এবং সন্ধ্যা ধোঁয়া ও ধুলো বর্জিত রাস্তায় বা মাঠে বের হতে হবে। যাদের বাইরে বেরনোর সুযোগ নেই, তাঁরা ঘরের আঙ্গিনায়, খোলা বারান্দায় বা ছাদে পায়চারি করতে পারেন। মেরুদণ্ড সরল সটান করে হাঁটতে হবে। প্রথমতঃ ৪ বার পদক্ষেপ তালে তালে ১, ২, ৩, ৪ মনে মনে উচ্চারণ করে, দু নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। শ্বাস নেওয়া শেষ হলে, আবার ১, ২, ৩, ৪ মনে মনে গুনে তালে তালে হেঁটে শ্বাস ছাড়তে হবে। মনে রাখবেন, শ্বাস নিতে যতক্ষণ নিলেন, ছাড়তেও সেই সময় ব্যবহার করতে হবে।
এই ভাবে প্রথ কয়েকদিন ৪ থেকে ৬ বার করবেন। পরের বার এক সপ্তাহ অন্তর পদক্ষেপ বাড়াতে হবে, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬। এই ভাবে ৮ থেকে ১২ পদক্ষেপ পর্যন্ত আয়ত্ত করতে হবে। তবে মনে রাখবেন, এটি প্র্যক্টিসের সময়, যেন হাঁপিয়ে না যান। সামান্য হাঁপিয়ে গেলেই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবেন।
একদম শুরুতে কম কম করে করবেন। শুরুর দিকে ৬ মিনিটের জন্য করবেন। ধীরে ধীরে, সময় বাড়াবেন। জোর করে করার চেষ্টা করবেন না। শরীর যতটা চাইবে ততটাই করবেন। এক দু বছর টানা অভ্যাস করলে যতক্ষণ হাঁটবেন, ততক্ষণও করতে পারেন।
উপকারীতা- হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ও অন্যান্য দেহরক্ষাকারী যন্ত্রগুলি সবল হয়। রক্ত পরিষ্কার হয়, শরীরে দুর্বলতা দূর হয়। এই ভ্রমণ প্রাণায়ম যদি টানা আধ ঘণ্টা করার মতো ক্ষমতা অর্জন করে, তাহলে টায়ফয়েড, যক্ষা, প্লুরিসি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাঁপানি প্রভৃতি রোগ থেকে অনেকটা সুরক্ষা পাওয়া যায় এবং প্রাণঘাতী আকার নিতে পারে না। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ভ্রমণ প্রাণায়ম অত্যন্ত উপকারী।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে কোনও খবরের আপডেট পেতে আমাদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ বা টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিতে পারেন।