Breaking News

মানস কৈলাস সফর, দেখে নিন পুরো সফর পরিকল্পনা

অর্বিট ডেস্ক

মানস কৈলাস। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈনদের কাছে এক অত্যন্ত ধার্মিক স্থল হিসেবে পরিচিত। বহু বছর ধরেই হিমালয়ের কোলে মানস কৈলাস পর্বত এক অসম্ভব রহস্যময় হয়ে রয়েছে। হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট দেশে বিদেশের বহু মানুষ জয় করলেও কৈলাস পর্বত এখনও পর্যন্ত অজেয়।এই প্রতিবেদনে কৈলাস পর্বতের মহিমা বিশ্লেষণে যাবো না, সেটা অন্য কোনও দিন আলোচনা হতে পারে।

তবে আজকে থাকছে সার সংক্ষেপে মানস কৈলাস যাত্রার সফর পরিকল্পনা। আর এই পরিকল্পনায় থাকছে অতিরিক্ত যাত্রা সংযোজন যা কিছুটা কষ্টকর হলেও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ট্যুরের পরিকল্পনা ধরা হচ্ছে কাঠমান্ডু থেকে।

সফর সূচি

১ দিন। কাঠমান্ডু পৌঁছে বিশ্রাম। রাত্রিবাস কাঠমান্ডু।

২ দিন।কাঠমান্ডুর আশে পাশের অঞ্চল দেখে নেওয়া, পশুপতিনাথ মন্দির, বৌদ্ধনাথ এবং বুধানীলকণ্ঠ মন্দির। পারলে পুজো পর্ব সেরে নিতে পারেন এদিন। রাত্রিবাস কাঠমান্ডু।

৩ দিন।কাঠমান্ডু থেকে গাড়িতে যাত্রা শুরু। দুটি জায়গা হল্ট দেওয়ার জায়গা আছে, একটি ধুনচে ৬ ঘণ্টার পথ। অন্যটি স্যায়েব্রুবেসি সাড়ে চার ঘণ্টার পথ। দুটির মধ্যে যে কোনও একটি জায়গায় রাত্রিবাস।

৪ দিন।এদিন রাসুয়াগাধির উদ্দেশে রওনা ধুনচে থেকে হলে ১৫ কিমি। এই রাসুয়াগাধিতেই ইমিগ্রেশন, কাস্টম্সের কাজ মিটিয়ে কেরুঙের উদ্দেশে রওনা। কেরুং ১০৫ কিমি পথ প্রায় ৩ ঘণ্টার রাস্তা। রাত্রিবাস কেরুঙে।

৫ দিন।সকাল ৯টায় ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়ুন সাগার উদ্দেশে প্রায় ১০০ কিমি পথ ৫ঘণ্টার রাস্তা। রাত্রিবাস সাগাতে।

৬ দিন।সকাল ৮টায় ব্রেকফাস্ট সেরে মানস সরোবরের উদ্দেশে রওনা। ৪৫০ কিমি রাস্তা প্রায় ৮ ঘণ্টার জার্নি। এখানে পৌঁছে মানস সরোবর পরিক্রমা করুন। এখানে মানস সরোবর ঘুরে দেখার জন্য অন্য গাড়িতে উঠতে হবে। রাত্রিবাস মানস সরোবর সংলগ্ন এলাকায়।

৭ দিন।এদিন সকালে মানস সরোবরে স্নান সেরে, পুজো দিয়ে, বিকেলে যাত্রা শুরু করুন দারচেনের উদ্দেশে ২ ঘণ্টার পথ। রাত্রিবাস দারচেনে।

৮ দিন।সকালে একটু ভারী ব্রেকফাস্ট সেরেযাত্রা শুরু গন্তব্য তারবোচ। এবং সেখান থেকে যাওয়া যম দুয়ার। কোরা এলাকা সফরের এটি প্রথম পয়েন্ট।**চাইলে এখান থেকে ট্রেক করতে পারেন দিরাপুক ১২ কিমি রাস্তা প্রায় ৫-৬ ঘণ্টার। এখানেই উত্তরমুখী কৈলাস পর্বতের চরণ ছুঁতে পারবেন। রাত্রিবাস দিরাপুরে। অনেকে কৈলাস পরিক্রমা করেন, কিন্তু খুব কম লোক জানেন এবং যান এই চরণপর্বে। এটি মানস কৈলাস পরিক্রমার একটি সংযুক্ত অংশ, অনেকে এড়িয়ে যান। তবে যাঁরা কৈলাস পরিক্রমা করবেন না, তাঁরা ফিরে যেতে পারেন দারচেনে, এবং গ্রুপের অন্য সদস্যদের জন্য বিশ্রাম নিতে পারেন।

৯ দিন।কোরা সফরের দ্বিতীয় দিন, দিরাপুক থেকে দোলমা পাস হয়ে জুথুলপুকের উদ্দেশে হাঁটা পথে রওনা। ২২ কিমি পথ প্রায় ৮ ঘণ্টার যাত্রা। এই সফরের সবচেয়ে কঠিন পথ এটি। রাত্রিবাস জুথুলপুকে।

১০ দিন।এদিন ২ ঘণ্টার ছোট্ট ট্রেক করে পৌঁছন সাগাতে। এখানে থাকছে আপনার গাড়ি। ফিরে যান দারচেনে। সেখান থেকে আবার সাগা উদ্দেশে রওনা। রাত্রিবাস সাগাতে।

১১ দিন।এদিনের গন্তব্য কেরুং। রাত্রিবাস কেরুঙে।

১২ দিন।এগিন ফেরা কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ভায়া রাসুয়াগাধি হয়ে। বর্ডারে ইমিগ্রেশন কাস্টম্সের কাজ মিটিয়ে নিন। কাঠমান্ডুতে রাত্রিবাস।

১৩ দিন।কাঠমান্ডু থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা।

আমাদের পরামর্শ।কাঠামান্ডু ছাড়া বেশির ভাগ জায়গাতেই, অস্থায়ী টেন্ট লজ, বা সাধারণ মানের হোটেল, কেউ যদি ভেবে থাকেন, বা আকাশ কুসুম কল্পনা করে থাকেনমানস কৈলাস সহ, পরিক্রমার পথে যে সব জায়গায় রাত্রিবাসের ব্যবস্থা আছে, সেখানে থ্রি স্টার হোটেল পাবেন, তাহলে সেটা ভুল ধারণা। কাঠমান্ডু ছাড়া বিলাসবহুল হোটেল পাওয়া আকাশ কুসুম কল্পনা। এ ব্যাপারে ভালো করে হাতে অতিরিক্ত সময় নিয়ে খোঁজ খবর করে যাওয়া উচিত।

আরও পড়ুন- পাঁচ হাজার বছর ধরে বেঁচে আছেন তিনি

*মানস কৈলাস সফর ব্যয় সাপেক্ষ। তাই ভাববেন না, অতিরিক্ত টাকা খরচ করেছি মানেই, সেখানে নিজের সাজানো গোছানো থ্রি বি এইচ কে ফ্ল্যাট সমান হোটেল পাবেন। এবং সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের এমন আচরণ করবেন না, যেখানে তাঁরা বিরক্ত হয়।

*আমরা বেশ কিছু জায়গায় লক্ষ্য করেছি, বেশ কিছু গ্রুপে অবলীলায় অনেকেই মন্তব্য করে থাকেন, যেখানে ভালো হোটেল নেই, সেখানেও তাঁরা থ্রি স্টার হোটেলে থেকেছেন, এমন তথ্যকে বেদবাক্য বলে মেনে নিয়ে এগোবেন না। গুগুলে সার্চ করুন, একটু নিজের সফর সম্পর্কে যত্ন নিন, কিছু বিশ্বস্ত ভেরিফায়েড সোর্স থেকে খবর জোগাড় করুন। প্রয়োজনে একাধিক জায়গা থেকে জোগাড় করুন।

* কেন্দ্রীয় সরকার এই ট্যুরের আয়োজন করে থাকে। পাশাপাশি নেপালেও বেশ কিছু ট্যুর এজেন্সি আছে তাদেঁর সঙ্গেও কথাবার্তা চালিয়ে ট্যুর পরিকল্পনা সারতে পারেন।

*মে, জুন, জুলাই, অগাস্ট, সেপ্টম্বর এই ট্যুরের আয়োজন করা হয়। *মানস কৈলাস যাত্রা যেহেতু কষ্টকর ও দুর্গম পথ, কিছু অংশ ট্রেক করতে হয়, তাই অন্তত ছ মাস আগে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যোগা ট্রেনারের সঙ্গে পরামর্শ করে অনুশীলন শুরু করতে পারেন। নেপালের এজেন্সি থেকে প্যাকেজে গেলে, তাদের সঙ্গে দক্ষ গাইড থাকে, তাদের উপর ভরসা রাখুন। প্রয়োজনে কলকাতা থেকে কোনও এজেন্সি মারফৎ গেলে দক্ষ বা সারভাইভাল কৌশল জানা দক্ষ গাইড সঙ্গে থাকছে কিনা দেখে নিন। কারণ নেপালের ট্যুর এজেন্সির গাইড ৫০জনকে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আপনি বা আপনার ছোট টিমকে আলাদাভাবে যত্ন দেওয়ার সুযোগ কম। সে ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি আপনার পক্ষে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক, কোনটা নয় এটা বুঝতে সাহায্য করবে।

*ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যেটি অপ্রিয় সত্যি কথা। কিছু সহযাত্রী থাকেন, পুরো ট্যুরের পুঙ্খানুপুঙ্খ জেনে নিয়ে গিয়েও, পরিকল্পিত ট্যুর প্ল্যানকে নিজের ইচ্ছেমতো ঘাঁটার চেষ্টা করেন। এবং গ্রুপের অন্য সদস্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তাই অনুরোধ এমন সদস্য সফরের মাঝখানে প্রভাবিত করলে, তাঁকে গুরুত্ব দিলে সমস্যা বাড়বেতো কমবে না।*ট্যুর সম্পর্কে আপনি নিজে যান, বা কোনও এজেন্সির সঙ্গে, তাঁদের কাছে যে কোনও ধরণের প্রশ্ন আগে ভাগেই করে নিন, বা নিজে পড়াশুনা করে নিয়ে তাঁদের কাছে প্রশ্নগুলো রাখুন। প্রশ্ন করা, জানা, ট্যুর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বুঝে নেওয়া আপনার অধিকার। তাই, পুরো ট্যুরটি ছবির মতো জেনে নিন। তারপর পুরো সিদ্ধান্ত নিন।

*আপনি যে কোনও ট্যুরে যান, তা সে একা যান, গ্রুপে যান বা এজেন্সি মারফৎ, প্রত্যেকটি ফরম্যাট ট্যুরে একটি নিয়ম মেনে চলতে হয়, সেটা একা গেলে বোহেমিটান ট্যুর করলেও মানতে হয়, সেগুলি মেনে নিয়ে চলাই স্রেয়।*মানসিক প্রস্তুতি শুরু করে দিন। ৭০ পর্যন্ত বয়স সীমা। নেমে পড়ুন এক মহাযাত্রার পথে। আপনার যাত্রা শুভ হোক।

আরও পড়ুন- এখানে প্রতি ঘরে জন্ম নেয় যমজ সন্তান

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

‘বিলুপ্ত ব্যাবিলনের সাম্রাজ্য’ ইরাকে প্রচীন রূপকথার নগরী ব্যাবিলনের ইতিহাসের খোঁজে

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- ব্যাবিলোনিয়ার উত্তর অ়ঞ্চলে অবস্থিত ব্যাবিলন ছিল ক্ষুদ্র একটি গ্রাম। এই অপরিচিত গ্রামটির আশ্চর্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!