ডিজিটাল অ্যাডগুরু ডেস্ক- আজ থেকে ১০ বছর আগে পর্যন্ত যে ব্যবসাটিকে তৃতীয় শ্রেণির ব্যবসা হিসেবে ধরা হত, আজ সেই ব্যবসা একদম প্রথম সারিতে চলে এসেছে। তার নাম ভিডিও ও ডিজিটাল কন্টেন্ট সার্ভিস। আর এর জন্য গোটা দুনিয়া কৃতজ্ঞ সামাজিক মাধ্যমের কাছে। এমন এক নয়া দিগন্ত খুলে দিয়েছে, যেখানে ঘরে বসে নিজের পছন্দসই যে কোনও ব্যবসাকে দাঁড় করানো যায় ও এই লাগামহীন ঘোড়াকে ব্যবহার করতে পারলে যুদ্ধজয়ও করা যায়। Facebook, Whatsapp, Youtube, Vimeo, TikTok এই সমস্ত সামাজিক মাধ্যমে দেখতে পাওয়া যায় ছোট থেকে বড় ভিডিওর ছড়াছড়ি।
সমস্ত সামাজিক মাধ্যমে নানা বিষয়ের ওপর ভিডিও থাকছে, ভ্রমণ, খাবার, শিক্ষমূলক, ছোট ছবি, কমেডি, বিজ্ঞাপণ, যে কোনও সাম্প্রতিক ঘটনার ছবি আরও কত কি। আর এর ফলে বাজারে ভিডিও মার্কেটিঙের দামও বেড়েছে হুহু করে। ২০১৫ সাল থেকে সামাজিক মাধ্যমের উপর একটি গবেষণা করা হয়। সেখানে দেখা গিয়েছে, ভিডিওর কদর আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। যার প্রথম ঝলক দেখা যায় ইউটিউবে। এই ট্রেন্ড দেখে, বাজারে সামাজিক মাধ্যমকে ঢেলে সাজাতে থাকে ফেসবুকও। তারাও টেক্সের তুলনায় ভিডিওকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে শুরু করে। ফলে, আগে যেখানে ভিডিও প্রস্তুতকর্তাদের প্লাটফর্ম প্রায় ছিল না বললেই চলে, সেখানে এখন গোটা বিশ্বজুড়ে একটা বিশাল বাজার।
১। ভিডিও এডিটিং ব্যবসা- অনেকেই আগে নিজেদের অনুষ্ঠান বাড়ির ভিডিও তৈরি করাতো। সেখানে মূলত দেখা যেত গতানুগতির ফর্মাটে বিয়ে বাড়ি বা অন্নপ্রশাসন বাড়ির ছবি তোলা হত। টাকাও হয়তো তেমন পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন, এই সমস্ত অনুষ্ঠান বাড়িতে সারাজীবনের জন্য ধরে রাখা স্মৃতিকে ভালো করে সাজাতে পেশাদার ভিডিওগ্রাফার ও এডিটর খুঁজছেন, চাহিদা মতো টাকাও দিচ্ছেন। ফলে এই ব্যবসায় একটা বড় জোয়ার দেখা দিয়েছে গত চার পাঁচ বছরে।
আরও পড়ুন- ব্যবসা শুরুর আগে তিনটি বিষয় মাথায় রাখুন
২। প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতির জেরে এখন শর্টফিল্ম বানানো বা ঘরে বসেই ছবি বানানো অনেক কম খরচে এসে গিয়েছে। অনেকেই ইউটিউবে বা ফেসবুকে ছবি বানাচ্ছেন মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে বা কম দামি ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে। তবে হাতে মোবাইল বা এডিটিং সফ্টওয়ার অ্যাপ্লিকেশন জানলেই হল না। নিজের ক্রিয়েটিভি ভাবনাকে ব্যকরণ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলে অনেকটা ফল পাওয়া যায়। অনেকে সেভাবেও রোজগার করছে। তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে। ভালো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার একটা মূল্য রয়েছে। সেখানে ঠিকঠাক ব্যকরণ শেখা ও জানা জরুরি। ভাইরাল ভিডিওতে রাতারাতি একটি চ্যানেলের গ্রো হয় বটে, কিন্তু তার স্থায়িত্ব থাকে না। কিন্তু সৃষ্টিশীল কাজের স্থায়িত্ব বহু বছর ধরে থাকে। তাই চটকদার রাতারাতি বড় হওয়ার রাস্তায় না গিয়ে যত্ন নিয়ে ভিডিও এডিটিং ও ভিডিওগ্রাফি, স্ক্রিপ্টিং শিখুন ফল দীর্ঘস্থায়ী পাবেন। রাতারাতি ভাইরালের আশা করলেন আর স্বপ্নও হয়তো পূরণ হল, কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী পরের ভিডিও ভাইরাল না হলেই হতাশায় ভুগবেন। আর সেই হতাশা থেকে বেরনো কঠিন।
৩। অনেকেই বেড়াতে যান, স্টিল ও ভিডিও ছবি তুলে আনেন, কিন্তু ঠিকঠাক সাজিয়ে এডিট করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে, ভালো স্ক্রিপ্ট তৈরি করে, এডিট করেও আয় করা যায়। মার্কেটের রিভিউ মতে এর অনেক ডিমান্ড রয়েছে। চাইলে কোনও কোম্পানির কাছে আবেদন করেও এমন ভিডিও বানানোর প্রস্তাব দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভালো আয়ের রাস্তা রয়েছে।
৪। শিক্ষামূলক ভিডিও- অনেকেই এডুকেশন টিউটোরিয়াল নিয়ে ভিডিও বানান, কিন্তু সমস্ত যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও ঠিকঠাক প্রেজেন্ট করতে পারেন না। কন্টেন্ট প্রস্তুত করতে পারেন না। তার অন্যতম কারণ ভিডিও এডিটিঙের থাম্বরুলগুলোই তারা মাথায় রাখেন না। ফলে ভিডিও এডিটিঙের ব্যাকরণগুলো শেখা জানা অত্যন্ত জরুরি। এখানে একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে, যেমন অনেকে অভিনয় করেন, কিন্তু যারা পাকা অভিনেতা তারা প্লাটফর্ম বুঝে অভিনয় করে। এই প্লাট ফর্ম কি? সেটি কি থিয়েটার? সেটি কি টেলিভিশন ভিডিও? সেটি কি বড় পর্দারর জন্য? বা সেটি কি যাত্রা? এক বিষয়ের উপর ভিন্ন প্লাটফর্মে অভিনয় করতে গেলে প্রয়োজন জ্ঞান, কোন প্লাটফর্মে একই চরিত্র কতটা লাউড ও সফ্ট অভিনয় হবে। ভিডিও এডিটিঙের ক্ষেত্রেও তাই। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাকরণ শিক্ষা।
৫। আপনার ভিডিওগ্রাফি ও এডিটিং সম্পর্কে টেকনিক্যাল নলেজ ভালো হলে শুরু করে দিতে পারেন বিজ্ঞাপণ ব্যবসা। তবে বিজ্ঞাপণ ব্যবসাতেও কতগুলি বিষয় সম্পর্কে পড়াশুনা জরুরি, বাজার সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি নয়তো। পণ্য অনুসারে বাজারের চলতি ধারা বোঝা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আমরা আগামী দিনে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আজকাল দেখা যাচ্ছে, অনেকেই ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, গুগুল অ্যাওয়ার্ডে পোস্ট করাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে দাবি করছেন। কিন্তু যারা এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন, একমাত্র তারাই বুঝতে পারছেন ওটি আসলে দিল্লি কা লাড্ডু। বিজ্ঞাপণেও প্রয়োজন কন্টেন্ট। আর সেই কন্টেন্টে থাকে সাইকোলজি, প্রোডাক্ট ভ্যালু, প্রক্সিমিটি, সোশাল রেসপন্স, কোয়ালিটি ভ্যালু, অডিয়েন্স ভিজিবিলিটি। যা হোক একটা বিজ্ঞাপণ বানিয়ে এলাকা সেট করে, বয়স সেট করে, হাজার দশেক টাকা ইনভেস্ট করে লাইক পাওয়া যায়, লিড পাওয়া যায় না। তাই ডিজিটাল মার্কেট বুঝতে গেলে পাবলিকের মন বোঝা জরুরি। বাজার তৈরি করা জরুরি। এটিও বেশ ইন্টেরেস্টিং সাবজেক্ট একবার শিখতে শুরু করলে নেশা লেগে যাবে। আগামী দিনে এ বিষয়ে আরও বেশি করে জানতে হলে আমাদের পেজ ফলে করতে পারেন। ডিজিটাল অ্যাডগুরু