Breaking News

নির্জন নিরিবিলি, কটা দিন কাটিয়ে আসুন সিঙ্গরাউলিতে, জঙ্গল ও কয়লা খাদানের অনন্য জগত্

অর্বিট ডেস্ক- কোল ইন্ডিয়ার নানা কয়লা খাদান রয়েছে সারা দেশ জুড়ে। আছে সাউথ ইস্টার্ন কোল্ড ফিল্ড লিমিটেড। বিলাসপুরে যার হেড কোয়ার্টার্স। তাদের খাদানগুলি অনেক জায়গা জুড়ে ছড়ানো। মধ্যপ্রদেশেই কিন্তু উত্তরপ্রদেশের সীমান্তে রয়েছে নর্দান কোল্ডফিল্ডস। এটির হেডকোয়ার্টার্স আদিত্য বিল্ডার গোষ্ঠীর হিন্দকোর রেনুকুটের কারখানার অদূরের সিঙ্গরাউলিতে। বর্তমানে সব কয়লা খাদানের মধ্যে এই নর্দান কোল্ডফিল্ডসই ভারতের সবচেয়ে মুনাফা অর্জনকারী সংস্থা।

সরকারি সংস্থা মাত্র যে ক্ষতির পাহাড় গড়ে, এ কথা যে সর্বৈব মিথ্যা, তা নিজে চোখে দেখতে হলে, নর্দান কোল্ডফিল্ডসের হেডকোয়ার্টার্স সিঙ্গরাউলিতে আসতে হবে।  এবং ভারতের সবচেয়ে বড় কয়লা খাদান জয়ন্ত আপনাকে নিজের চোখে দেখতে হবে।  এই খাদানগুলি সবই ওপেন কাস্ট বা খোলা মুখের খাদান। জয়ন্তে গেলে ব্যাপার স্যাপারের বিরাটত্ব দেখে স্তম্ভিত হতে হয়। ডায়নসর চোখের সামনে দেখলে যা অনুভূতি হত, অনেকটা সেইরকম।  চোখের সামনে ১০০ কোটি টাকার সাত তলা উঁচু ড্র্যাগলাইনের কাজকর্ম দেখলে।

রেওয়া চিড়িয়াখানায় সাদাবাঘ

আকাশ সমান উঁচু তাদের ড্রাইভিং কেবিনে বসে রোগা পটকা বেঁটেখাটো অপারেটরকে দেখলে এই বৈপরিত্য আপনাকে স্তম্ভিত করবে।

কত হাজার কোটি বছর ধরে গহন বানরাজিনীলা মাটি ও জলের নীচে থাকতে থাকতে প্রস্তরিভূত হয়ে কয়লাতে পর্যবসিত হয়ে গেছে। পরতে পরতে সেই বনরাজি, ড্রিফ্ট বা ইনসেটু পদ্ধতিতে কয়লা হয়ে তাকের পর তাক সেজে রয়েছে।  তাদের মাঝে মাঝে ওয়াটার টেবল বা জলস্তর। সেই জল দানবীয় পাম্প ব্যাবহার করে যেখানে ফেলা হচ্ছে সেখানে তৈরি হয়েছে হ্রদ। 

নাম তার বীণা সাগর।  ইনক্লাইন মাইনে খাদানের নীচে নামা অবশ্য খোলা মুখের খনি দেখার চেয়ে অনেক রোমহর্ষক। কিন্তু সিঙ্গরাউলিতে যাতায়াতের পথ অতিক্রম করা এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।  তদুপরি চারপাশে এতো বেড়াবার ও চড়ুইভাতি করবার জায়গা আছে যে, গেলে রথ দেখা কলা বেচা হবেও বিলক্ষণ।

শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস যা ম্যাক্লাক্সিগঞ্জ ও ডালটনগঞ্জ ইত্যাদি স্টেশন হয়ে যায়, তাতে বিকেলে রওনা হয়ে সকালে রেনুকুটে গিয়ে পৌঁছবেন। রেনুকুটে প্রথমে গিয়ে কোনও হোটেলে উঠতে পারেন।  তারপর সেখানে হিন্দলকোর কারখানা, রেনুসাগর, এনটিপিসি-র প্লান্ট দেখে দু একদিন বেরিয়ে একটি গাড়ির বন্দবোস্ত করে বেরিয়ে পড়া যায় সিঙ্গরাউলির উদ্দেশে।

আটটি খাদান রয়েছে নর্দান কোল্ডফিল্ডসে। সিঙ্গরাউলি, জয়ন্ত, বীণা, গোর্বি, আমলরি, ঝিঙ্গুরদা, কাকরি এবং খেদিয়া। চরকা নদী পেরিয়ে ওরি মোড় হয়ে মাইল তিনেক গেলে সিঙ্গরাউলি।  বীণাসাগরের পাশে শীতে চড়ুইভাতি হতে পারে।  তবে চলে যেতে পারেন মারা ও রাবণমারা গুম্ফায়। বৌদ্ধগুম্ফা হলেও দেখা যায় ১৬ ভূজা দুর্গামূর্তি।

মারাতে বৌদ্ধগুম্ফা

গারারিয়া বন বাংলোয় বা মারা বনবাংলোয় থাকা সুবিধেজনক নয়। অত্যন্ত ছোট তবে বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে।  কাচেন নদী, ভূতালি নালা, ঝিংগিঝারিয়া নালা, মাছবান্ধা নালা ইত্যাদি সুন্দর নালা গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে।  যাঁরা একটু বেশি রোমাঞ্চ পছন্দ করেন, তাঁরা যেতে পারেন বিন্দুল। অন্যদিকে সিধিও যেতে পারেন।  বা সাদা বাঘের রাজ্য রেওয়া।

এই সব অঞ্চলকে আগে বলতো ব্যারণ। আন্দামানের কালাপানির মতো রেওয়ার মহারাজা নির্বাসন দিতেন এখানে দাগি আসামি ও দুর্ধর্ষ শত্রুদের, পরাভূত করার পরে।  এই ভীষণ বনে ভয়ানক সব বন্য জন্তুর হাতে দুরারোগ্য অসুখে, পানীয় জলের অভাবে, তীব্র গরম ও বিভত্স শীতে তারা মারা যেত। স্থানীয় মানুষ মনে করেন এখনও এই অঞ্চলে নানা দুষ্ট আত্মার বাস।

রেওয়া ছিল করদ রাজ্য। সিধি হল রেওয়ারই সাব ডিভিশন। নর্দান কোল্ফিল্ডসের এই সমস্ত খাদান সিধি ডিভিশনে পড়ে।

খোলামুখ খাদানের আইন হচ্ছে, যেহেতু পাথরের উপরের ভাগ সরিয়ে মাটি কেটে নানা স্তর ভেদ করে কয়লা স্তরে পৌঁছতে হয় (কোথাও প্রায় ভূস্তরে থাকে কয়লা) তাই যতখানি নষ্ট হল প্রকৃতি, ততখানি নবীকৃত করতে হয় নতুন গাছ লাগিয়ে।  তাই বনবিভাগের প্রতিনিধিও পাকাপাকি ভাবে থাকেন ওই সব অঞ্চলে।  কোথায় কোন কোন গাছ লাগানো হবে। কোনও ফুলের গাছ বা গন্ধবাহী, সব তারাই কাদানের ভারপ্রাপ্ত অফিসারের সঙ্গে বসে ঠিক করেন।

যে সব অঞ্চলে রিমুভাল অফ ওভারবার্ডেন এর পর নতুন অরণ্য রোপিত হয়েছে, সেই সব অরণ্যে প্রাণ আসেনি এখনও, কুমারি পুজো করে যেমন মা দুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হয়।  তেমনই অরণ্য যুবতী হতে সময় নেয়।  স্বল্প দিনে রোপিত গাছ গাছলিতে পোকা থাকে না। পোকা থাকে না তাই পাখি আসে না, পাখি আসে না তাই সাপ আসে না, সাপ আসে না তাই ময়ূর আসে না, ময়ূর আসে না তাই চিতা আসে না, ঘাসবন থাকে না, বনে ফুল ফল ফোটে না, তাই হরিণ আসে না, গরিণ আসে না তাই বাঘ আসে না।  এই চক্রে চক্রায়িত হয়ে চলে বনচক্র।

সেরা অফারে নজর রাখতে আমাদের ফেসবুকপেজ ফলো করুন। ছবিতে ক্লিক করলেই ফেসবুক পেজ পেয়ে যাবেন।

এই জঙ্গলে পথপাশে একধরণের বেগুনি ফুল ফোটে। নাম বেশরম। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, যেখানে এই ফুল দেখা যায়, সেখানে ভূস্তরের নীচে কয়লা মেলে। সিঙ্গরাউলিতে রেনুকুট না হয়ে এসে, অন্যপথেও আসা যায়। কলকাতা থেকে যে কোনও ট্রেনে বেনারস এসে, সেখান থেকে বাসে বা ট্যাক্সিতে সিঙ্গরাউলিতে আসা যায়, রবার্টসগঞ্জের রাস্তাঘাট পেরিয়ে। রবার্টসগঞ্জও ম্যাকলাক্সিগঞ্জের মতো একটি অ্যাঙ্গলোইন্ডিয়ান কলোনি ছিল। তবে শোনা যায়, অ্যাঙ্গলোইন্ডিয়ানদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না।  

নর্দান কোলফিল্ডসের ভি আইপি গেস্ট হাউস রয়েছে সিঙ্গরাউলিতে তবে তা সাধারণের জন্য নয়।  জয়ন্ত ও অন্যান্য খাদানেও গেস্টহাউস আছে।  তবে তা কোল ইন্ডিয়ার কর্মচারিদের জন্য। তবে সিঙ্গরাউলিতে বেশ কিছু বাজেট ও দামি হোটেল রয়েছে। সেখানে থাকা যেতে পারে ও স্থানীয় গাড়ি ভাড়া করে বেড়ানো যেতে পারে।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

পাশের রাজ্যেই রয়েছে প্রকৃতির এক আদিম জায়গা, বেড়িয়ে আসুন চুপিসারে

স্বাতী চ্যাটার্জি- কাশ্মীর, কেরালা, দক্ষিণভারত, উত্তরভারতসহ গোটা ভারততো বেড়াবেন। আমাদের দেশে দেখার জায়গা অনেক। প্রাকৃতি, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!