Breaking News

আদিম অরণ্য প্রচীন লোককথার দেশ, মৃত্যুর পর এখানে কিছুদিনের অতিথি হয়ে থাকেন অশীরীরা, বিচারের আশায়

অর্বিট ডেস্ক- শিলং থেকে নেমে সারারাত বাস চলেছে, আসামের কালি জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এ টি রোড ধরে। সমতম রাস্তা ছেড়ে পশ্চিমমুখী বাসটা আবার বাঁ দিকে পাহাড়ি রাস্তায় মোড় নেওয়ার পর পুবদিকটা চাপা লাল হয়ে গিয়েছিল। গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে আসা অনেকগুলো নাইট সার্ভিস বাসও প্রায় এক সঙ্গে এসে পৌঁছে গেল পশ্চিম গাড়ো পাহাড়ের ছোট্ট শহর তুরায়। 

হালে একটু আধটু শহুরে ছোঁয়া লেগেছে, বাসস্ট্যান্ডের পাশে সুপার মার্কেট, কিছু হোটেল এবং কয়েকটি চার পাঁচতলা বাড়ি।  এখান থেকে প্রায় অনেকটা দূরে হাপাড় শেষে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে বাংলাদেশ। উল্টোদিকে খাড়া উঁচু নকরেক পাহাড়চূড়ায় কয়েক টুকরো সাদা মেঘ তখন কালচে সবুজ জঙ্গলে গা ভাসিয়ে থমকে আছে।

দু তিন দিনের মতো খাবার নিয়ে পরদিন ভোর ৫টায় বাঘমারা যাওয়ার সরকারি বাসে কয়েকজন পর্যটক। গারো পাহাড়ে শীতঘুম ভেঙেছে সবে। মার্চ মাসের মাঝামাঝি, ঝিরঝিরে হাওয়ায় এখন লাট্টু পাইনের কোঁড় উড়ে আসে। বেশ কিছু গারো বাংলা বলতে পারে। গারোদের গ্রাম মেঘালয়ের পাহাড় ছাড়িয়ে উত্তরে আসাম আর দক্ষিণের বাংলাদেশের মধ্যেও বিস্তৃত ছিল।

দক্ষিণ পশ্চিমমুকো একটা ঢালু রাস্তা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে নামছে বাসটা। পাঁচ মিশালি গাছের জঙ্গল আর মাঝে মধ্যে ঝকঝকে বাঁশের বাড়ির কয়েকটা গ্রাম পেরিয়ে  পৌঁছে গেলাম প্রায় সমতলে। ঘণ্টাতিনেক পর বারেংগাপাড়ায় কিছুক্ষণ জলখাবারের বিরতি।

এদিকে অল্প সংখ্যায় কোচ ও রাভা উপজাতির বাস। আর সেই পার্থক্য ধরা পড়ে গ্রামের মহিলাদের পোশাক দেখে।  বাংলাদেশ সীমানার ধার দিয়ে  পুবদিকে বাঁক নিল। রাস্তার ডানদিকে ছোট ছোট সিমেন্টের পিরামিডের সারি। এপারে বারত ওপারে বাংলাদেশ। 

মাঝখানে অদৃশ্য লক্ষ্ণণরেখা ভেঙে চাষ করে চাষিরা। আবার পাহাড়ি রাস্তা শুরু। এবার চোখে পড়ে সুন্দর জহ্গল আর ছোট ছোট নদী। বাসটা নদীর ধার ঘেঁষে এসে বাঘমারা বাজারে এসে দাঁড়াল।  এখানে একটি সরকারি পর্যটক নিবাস রয়েছে। এখান থেকে জোগাড় করতে হয় বালফাক্রাম জাতীয় উদ্যানে প্রবেশের অনুমতি।

এখানকার সার্কিট হাউস থেকে সিমসাং নদীর অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়।  সিমসাং, সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতেই নাম হয়েছে সোমেশ্বরী। গারো পাহাড়ের জল পৌঁছে যাচ্ছে ময়মনসিংহে।

বালফাক্রাম নামটা এসেছে দুটি গারো শব্দ থেকে বালোরা বা হাওয়া যেখানে অনবরত বয়ে যায় বা ফাক্রাম। স্থানীয়দের প্রচীন বিশ্বাস, এই হাওয়ার উত্পত্তি অসংখ্য আত্মার  শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে । গারোদের প্রচীন লোকথা অনুযায়ী সমস্ত গারো মানুষকেই মৃত্যুর পর এই বালফাক্রামে অশরীরী হয়ে কাটাতে হয় কিছুদিন।

শাড়ি, জুয়েলারি ও লেদার ব্যাগের বিপুল সম্ভার ORDERPRIME.IN

তাই এই জায়গা হল আসলে থেমাং আসেং আর্থাত্ আত্মার আবাসস্থল। বিধির বিধান শোনার জন্য এখানে আত্মারা  অপেক্ষা করে। প্রত্যেক আত্মাকে এখানে আসার সময় একটা করে স্বাস্থ্যবান গরু নিয়ে আসতে হয় বিচারকদের দক্ষিণা হিসেবে। সেই গরু বাঁধা হয়, বোলডাক গাছের গোড়ায়।

বালফাক্রামের ব্যবস্থা ও পরিচালনার দায়িত্বে আজীবন রয়েছে গিয়েছে কয়েকজন বিশিষ্ট আত্মা। একজন বীর যোদ্ধা দিক্কি। রয়েছেন তাঁর মামা মাচরু এবং ছোটভাই বান্দি। গারো পাহাড়ের সেরা দুই সুন্দরী সোরে এবং গিটিং দুই ভাইয়ের দুই উপপত্নী।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

অযোধ্যার রাম মন্দির: ইতিহাস, কিংবদন্তি ও এক মহামন্দিরের পুনর্জন্ম

অযোধ্যা, যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর অন্যতম পবিত্র স্থান, ভগবান শ্রীরামের জন্মভূমি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে নির্মিত শ্রীরাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!