ভিয়েতনামে বেড়াতে যাবো, কিন্তু কেন যাবো?
অনেকেই হয়তো রেরে করে বলে উঠবেন, আমার নাম, তোমার নাম ভিয়েতনাম। আধুনিক বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে বড়, জটিল যুদ্ধের ইতিহাস লেখা রয়েছে এই ভিয়েতনামেই।তারপর…?
তারপর আর কী, কমিউনিস্ট নেতা হো চি মিনের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনতা পায়।হ্যাঁ আশি শতাংশ যুব সমাজের কাছে হয়তো ভিয়েতনাম সম্পর্কে এমনই উত্তর পাওয়া যাবে।না কোনও সমালোচনায় নয়, এক ঝলকে দেখে নিই, ভিয়েতনাম, কেন বিশ্বের কাছে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র আজও। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশটি কী ভাবে মার্কিনিদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল।
প্রথমে আমরা দেখে নেবো, ভিয়েতনামের ম্যাপটিকে। এই ভিয়েতনামকে মূলত দুটি পর্বে ভাগ করা যাক, এক উত্তর ভিয়েতনাম, দুই দক্ষিণ ভিয়েতনাম। উত্তর ভিয়েতনামের প্রধান শহর হানোই, এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রধান শহর সাইগন (বর্তমানে হো চি মিন সিটি) এই ভিয়েতনামের উত্তরে চিন, এবং অন্য বা পশ্চিমে রয়েছে পড়শি দেশগুলি, লাউস, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া।
এই দেশগুলি এক সময় ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ফলে আগে নাম ছিল ফ্রেঞ্চ ইন্দো চায়না। ফ্রান্স এখানে দখল জমায় ১৮৬০ সালে ক্ষমতাসীন থাকে ১৯৪১ পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান কব্জা জমায়। প্রায় পুরো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতেই দখল জমায়। ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখে জাপান। ১৯৪৫ সালে মার্কিনিরা হিরোসিমা এবং নাগাসাকিতে অ্যাটম বোম্ব ফেলায় পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে জাপান। অগত্যা দখল ছাড়তে হয়। এই সময় জাপানের যে সমস্ত সেনা উত্তর ভাগে ছিল, তারা চায়নার কাছে আত্মসমর্পণ করে। কারণ, ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স এদের গ্রুপেই ছিল চিন। আগে দক্ষিণ ভাগে যারা মোতায়েন ছিল, তারা ব্রিটিনের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
এখানে দেখা যাচ্ছে, ভিয়েতনামের প্রায় দুটি ভাগ হয়ে গেল। এই সময় ফ্রান্স দাবি করে, আমাদের উপনিবেশ ছিল তাই ভিয়েতনাম ফের তাদের দেওয়া হোক। এ বিষয়ে চিন আপত্তি তোলে, যদিও ব্রিটেন রাজি হয়। ১৯৪৬ সালে ফ্রান্স যখন নতুন করে রাজত্ব জমাতে শুরু করে, তখনই শুরু হয় ইন্দো-চায়না যুদ্ধ। কারণ ভিয়েতনামের ভূমিজদের একাংশ এই নীতি মেনে নিতে পারেননি। এই ভূমিজদের নেতাই হলেন হো চি মিন, তাঁর দলের নাম ভিয়েত মিন।
হো চি মিন ১৯৪১ সাল থেকে জাপানিদের বিরুদ্ধে পরে ফ্রান্সের বিরুদ্ধেও স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই জারি রাখেন। যদিও এখানে ভূমিজদের একটা অংশ ফ্রান্সের রাজত্বই চাইছিল। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের সঙ্গে ব্যাপক যুদ্ধ চলে, এতে হার স্বীকার করে ফ্রান্স। ১৯৫৪ সালে জেনিভা চুক্তি স্বক্ষরিত হয়। ঠিক হয়, লাউস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া থেকে ফ্রান্স ক্ষমতা চ্যুত হবে এবং এই দেশগুলি স্বাধীন হবে। এই সময় ভিয়েতনাম দুটি ভাগে বিভক্ত হয়, উত্তরভাগ হো চি মিনের সরকার চলবে এবং দক্ষিণ ভাগে পশ্চিমীমুখী কূটনীতি ও রাজনীতি কায়েম থাকে, এখানকার নেতা হন নো ডিন ডিয়াম।
দেশের ঠিক মাঝামাঝি ভাগে সেভেনটিন্থ প্যারালালে দুই দেশের সীমানা নির্ধারণ হয়। ফলে উত্তরভাগের রাজধানী হল হানোই, এবং দক্ষিণভাগের রাজধানী সাইগন। হানোই এখনও পুরো দেশের রাজধানী। কারণ সর্বশেষে দক্ষিণ ভিয়েতনাম হেরে যায় উত্তরের কাছে। ১৯৭৫ সালে সাইগন শহরের নাম বদলে নাম রাখা হয় হো চি মিন সিটি।
১৯৫৬ সালে দুটি দেশে বিভক্ত, ভিয়েতনাম, উত্তরভাগকে সমর্থন করছে USSR , PRC (Peoples Republic China) অন্যদিকে দক্ষিণকে সমর্থন দিচ্ছে USA, UK এবং অন্যান্য পশ্চিমী দেশ। কারণ, এই সময় সারা দুনিয়াতেই তখন চলছে কোল্ড ওয়ার বা ঠান্ডা লড়াই।
এখানে মনে রাখা দরকার একদিকে ঠান্ডা লড়াই চলছে, তার সঙ্গে জেনিভা চুক্তির পরেও ভিয়েতনামে উত্তর ও দক্ষিণে চাপা লড়াইও জারি ছিল। তার কারণ, নো ডিং ডিয়াম, যিনি দক্ষিণ ভিয়েতনাম শাসন করছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। ওনার বিরুদ্ধে বহু বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের হত্যা করার অভিযোগ ওঠে, কারণ তিনি নিজে একজন ক্যাথলিক ছিলেন, আর ভিয়েতনামে ক্যাথলিক মাইনরিটি ছিল। ফলে এক লপ্তে ক্ষমতায় আসার পরেই বিধর্মীদের ট্রার্গেট করেন। ফলে ডিয়ামের বিরোধিতা শুরু হয়। আর এই সময় দক্ষিণ অংশ থেকে তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে ভিয়েত কোং গোষ্ঠী। এই ভিয়েত কোং গোষ্ঠী মূলত দক্ষিণে গেরিলা যুদ্ধ চালাতো। এটিও কম্যুউনিস্ট পার্টি ছিল, আর এই গোষ্ঠীকে পুরোপুরি মদত দিত উত্তরের হো চি মিন। আর এরা চাইত সম্পূর্ণ ভিয়েতনাম।
কোনও উত্তর দক্ষিণ বিভাজন থাকবে না। পুরো স্বাধীনতা চাই। এখানে মনে রাখা দরকার জেনিভা চুক্তিতে একদিকে হো চি মিন অন্যদিকে ডিয়ামকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল বটে তবে সেটি কিন্তু কেয়ারটেকার হিসেবে। কথা ছিল নির্বাচন হবে, তার পর ফের নির্বাচিত ক্ষমতাসীন দল সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু নো ডিং ডিয়াম দক্ষিণে কোনও নির্বাচন হতে দেয়নি। বরং টেনশনকে জিইয়ে রেখেছিলেন। এবং কয়েক বছর ক্ষমতাতেও ছিলেন। আর তার এই চিন্তাভাবনায় পুরো মদত জোগায় আমেরিকা।
এই সময়ই নতুন এক তত্ত্ব খাড়া হয়, মূলত কমিউনিজমকে সামনে রেখে, ডোমিনো তত্ত্ব।এই তত্ত্বের জনক, আমেরিকার ডিউইট ডি আইসেনহাওয়ার। তিনি একগাদা বইকে পাশে রেখে মডেল পেস করেন, একটি বই ভারসাম্য হারালে পাশের বইটিতে ধাক্কা লাগবে…একে একে পরপর সব বইগুলি পড়বে।
এখানেও তাই, কমিউনিজম, USSR এর সাফল্যের পর চিন, ভিয়েতনাম, লাউস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড একে একে গ্রাস করবে…এবং ভারতেও এর প্রভাব মারাত্মক আকারে পড়বে। কমিউনিজিমের বাড়বাড়ন্তকে আটকাতেই এখানে কূটনৈতিক থাবা বসাতে শুরু করে আমেরিকা।
১৯৫০ থেকেই ভিয়েতনামের উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে আমেরিকা। এবং দক্ষিণ অংশকে নানা রণকৌশলগত সাপোর্ট দিতে থাকে। আর এই প্রক্রিয়া চলে মার্কিন প্রেসিডেন্ড জন এফ কেনেডির সময় পর্যন্ত। কেনেডির সময়, ভিয়েতনাম নিয়ে নিরাপত্তা পরামর্শদাতার সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়। আর এর পরেই দক্ষিণে মার্কিন সেনা মোতায়েনের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। কিন্তু এই সময় পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে আমেরিকা লড়াইয়ে সামিল হয়নি।
মার্কিনিরা পুরো দমে ময়দানে নামে, গাল্ফ অফ টংকিনের ঘটনার পর। গাল্ফ অফ টংকিন হল, উত্তর ভিয়েতনামের হানোইয়ের কাছে একটি উপকূলে। দাবি করা হয়, ১৯৬৪ সালের অগাস্টে একটি মার্কিন জাহাজ আসে গাল্ফ অফ টংকিনে। তাতে হামলা চালায় উত্তর ভিয়েতনামের তিনটি নৌসেনার প্লাটুন। এর পরেই মার্কিন সেনেটে গাল্ফ অফ টংকিন রেজোল্যুশন নেয়, এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়। পরে জানা যায়, পুরো ঘটনাটাই সাজানো। আসলে মার্কিন সেনার একটা অজুহাত ছিল, সরাসরি লড়াইয়ে নামার। এই সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন লিন্ডেন বেন জনসন।
তিনি ১৯৬৫ থেকে ৬৭ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামে ৫ লক্ষ সেনা মোতায়েন করান। এই সময় মার্কিনিরা এয়ারফোর্সে প্রথম সারিতে, সেটিকে পুরো দমে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই এয়ারফোর্সের মাধ্যমে, ভিয়েতনামে এতো বোমা ফেলা হয়, সম্ভবত পুরো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এতো বোমা ব্যবহার হয়নি। শুধু তাই নয়। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে ছিল দুটি ভয়ঙ্কর অস্ত্র। ১। নাপাম ২ এজেন্ট ওরেঞ্জ। নাপামের কাজ জঙ্গলে আগুন লাগানো আর এজেন্ট ওরেঞ্জ গাছের পাতা ঝরিয়ে দিত। ফলে পাহাড়, বন জঙ্গলে যেন ওপর থেকে পরিষ্কার দেখা যায়।
এর ফলে বহু মানুষ মারা যায়। অনেকে পঙ্গু হন, আহত হন। এই দুটি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে প্রচুর পরিবেশের ক্ষতিও হয়, চাষাবাদ পুরো ধ্বংস হয়ে যায়। জমি বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত অনূর্বরের খাতায় চলে যায়।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের বৈচিত্রটা ছিল অন্য জায়গায়, এখানে মূলত ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত বাহিনী ও গেরিলা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয় মার্কিন সেনাদের। পাহাড়, নদী, জঙ্গলে ভরপুর থাকায় মার্কিনিদের রসদ পৌঁছতেও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে এই প্রতিকূল পরিবেশ মার্কিন সেনাদের নাস্তানাবুদ করে তোলে, কারণ তারা এই পরিবেশে যুদ্ধের জন্য কোনওদিন প্রস্তুত ছিল না। প্রশিক্ষিতও ছিল না।
সব থেকে ইন্টেরেস্টিং পয়েন্ট, ভিয়েতনামের গেরিলা বাহিনী, মাটির তলায় টানেল তৈরি করে নিয়েছিল এবং সেই টানেলে প্রবেশ করতে গেলে থাকতো অসংখ্য বহু বুবি ট্র্যাপ। (যা এখনও সংরক্ষিত আছে।) চু চি টানেল বলে। মূলত সমস্যা যেহেতু দক্ষিণে ছিল, তাই এখানে পুরো দক্ষতা ও কুশলতার সঙ্গে মার্কিনিদের জবাব দেয় ভিয়েত কোং গোষ্ঠী। গেরিলাযুদ্ধে যাদের জুড়ি মেলা ভার।
তারা জানত, মার্কিন এয়ারফোর্সের সামনে লড়তে গেলে জঙ্গল, নদীতে নয়, মাটির তলা থেকে লড়াই চালাতে হবে।
১৯৬৮ সালের জানুয়ারি, এই সেই মহেন্দ্রক্ষণের মাস। সংগঠিত হল টেট অফেন্স।
ভিয়েত কোং-এর পূর্ব পরিকল্পনা ছিল, সারা ভিয়েতনাম জুড়ে এক সঙ্গে হামলা চালানো হবে। তার মধ্যে, মার্কিন সেনাঘাঁটি, মার্কিন কনস্যুলেট ছিল প্ৰধান লক্ষ্য। পরিকল্পনা মতো, একাধিক জায়গা, একই সঙ্গে, একই সময়ে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। ভিয়েত কোং গোষ্ঠী ভেবেছিল, দক্ষিণের সরকার রাতারাতি তাদের দখলে চলে আসবে, কিন্তু সেই সাফল্য না পেলেও, এতো বড়ো হামলা বিশ্বের নজর কাড়ল, উত্তর ভিয়েতনাম একটা মানসিক জোর পায়। এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামের বাসিন্দারাও যারা ভেবেছিলেন মার্কিন সেনার সঙ্গে ভিয়েত কোং পেরে উঠবে না, তারাও উল্টো পথে ভাবতে শুরু করলেন।
এই ঘটনার আগে পর্যন্ত, উত্তর ভিয়েতনাম একটা সাই ওয়ারে, মানসিক যুদ্ধে হীনমন্যতায় ভূগছিল, তাই তারা সরাসরি মার্কিনিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেনি। অন্যদিকে, মার্কিনসহ পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমগুলি তখন প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছে, ভিয়েত কোং শেষের পথে।
কিন্তু টেট অফেন্সই হয় টার্নিং পয়েন্ট। উত্তর ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণের জনগন জোর পায় মার্কিন সেনার বুকে এতো বড় আঘাত হানায়। দক্ষিণের অধিকাংশ নাগরিক সহ উত্তর ভিয়েতনামও জোর পায়। এর পরেই ১৯৬৮ সালে সেই কুখ্যাত গণহত্যা মাই লাই ম্যাসাকার। যে গ্রামে গিয়ে মার্কিনসেনা নির্বিচারে নারী ও শিশুদের উপর অত্যাচার চালায়।
এই ছবি মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বেরোতেই, আমেরিকাতে যুদ্ধবিরোধী সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়। প্রথমে ক্যাম্পাসে বিরোধ, পড়ে তা জনমানসে ছড়িয়ে পড়ে। চাপে পড়ে মার্কিন প্রশাসন। এই সময় আমেরিকাতে ড্রাফ্ট অপোজিশন দেখা দেয়। (সেই সময় কলেজ পড়ুয়াদের বাধ্যতামূলক সেনাতে কিছু সময়কাল দিতে হত)…এখানেই পড়ুয়ারা বেঁকে বসে।
আওয়াজ ওঠে, যেখানে আমাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, সেখানে কেন এই লড়াই? এই সময় আরও একটা বড় ভূমিকা দেখা দেয় সংবাদ মাধ্যমে, সেই সময় টেলিভিশন এসে গিয়েছে আমেরিকায়। ফলে যুদ্ধের বিভৎসতার ছবি সরাসরি দেখা, সেটাও মারাত্মক ইমপ্যাক্ট ফেলতে থাকে।
কারণ মার্কিন সেনাদের সঙ্গে থাকা ওয়ার করেসপন্ডেন্টরা সরাসরি ফিড পাঠাতেন। তা দেখানো হত, না কাটছাঁট করে। এর ফলে জনমত মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে উঠতে থাকে।
১৯৬৮ সালে রিচার্ড নেক্সন প্রতিশ্রুতি দেন, ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে মার্কিন সেনা সরাবেন, এই প্রতিশ্রুতিতেই তিনি পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৭০। তিনি ভিয়েতনামে মার্কিন সেনা কমাতে থাকেন এবং দক্ষিণে ভিয়েতনামি সেনার সংখ্যা বাড়াতে থাকেন।
১৯৭৩ সালে প্যারিসে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়, যেখানে একটি অংশে যুক্ত ছিল আমেরিকা। এর পরেই, আমেরিকা ভিয়েতনাম থেকে সারা সেনা সরিয়ে নেয়। এর পরেই, উত্তর ভিয়েতনাম দক্ষিণ ভিয়েতনামের উপর হামলা চালায়। ফের শুরু হয় যুদ্ধ। ২ বছর লড়াইয়ের পর সাইগনে কব্জা জমায় উত্তর ভিয়েতনাম। ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে দক্ষিণকে দখলে নেওয়ার পর তৈরি হয়, সোশালিস্ট রিপাবলিক অফ ভিয়েতনাম।
এই দীর্ঘ লড়াইয়ে ৫৮ হাজার মার্কিন সেনা মারা যায়, আহত হয়, দেড় লক্ষ। ভিয়েতনামি মারা যায় প্রায় ২০ লক্ষ। বহু সাধারণ মানুষ মারা যান।
ইমপ্যাক্ট কী দাঁড়ালো, প্যারিস চুক্তি নামে হলেও, এটা ছিল মার্কিনিদের কাছে প্রথম এবং সবচেয়ে বড় হার। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্ব জানল, আধুনিক অস্ত্র হাতে থাকা মানেই, যুদ্ধ জয় তার পকেটে নয়।
এবং মার্কিনিরাও পরে অনুভব করে, কোনও লড়াইয়ে গেলে দেশের মানুষের পাল্স বোঝা জরুরি, স্রেফ ক্ষমতার দম্ভে সিদ্ধান্ত নেওয়া মূর্খতামি। আর এই পরিস্থিতির পর, ঠান্ডা লড়াইয়ের চিত্র ও মাত্রাও অনেকটা বদলে গিয়েছে।