পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি– একটি নির্জন নিরালা পাহাড়, আর তার উপরেই রয়েছে দুটি রহস্যময় গুহা। আপাত দৃষ্টিতে আর পাঁচটা বৌদ্ধ বা জৈনগুহার সঙ্গে মিল রয়েছে, কিন্তু হাজারও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে একটি রহস্যময় দরজা ও লিপি।
আসুন তাহলে যাওয়া যাক সেই বিখ্যাত জায়গায়, যা আজও বহু ভারতবাসীর কাছে অজানা হয়ে রয়ে গিয়েছে। আর এই সফরে আপনারা যদি আমাদের সঙ্গে কখনও যেতে চান তাহলে নিজের নাম ঠিকানা ফোন নম্বর দিয়ে ইমেল করে রাখুন tweekbazar@gmail.com বা হোয়াটস অ্যাপ করতে পারেন 9073503958 নম্বরে।
বাংলার পড়শি রাজ্য বিহার। ভারতের পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণের রাজ্যগুলি যতটা পর্যটনের জন্য বিখ্যাত, বাংলার পাশাপাশি বিহারও ততটা নয়। অথচ এই বিহারই ছিল একটা সময় অখণ্ড ভারতের রাজধানী। মগধ ও মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজধানী। সম্রাট অশোকের হাত ধরে এই বিহার থেকেই বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বজুড়ে এক চূড়ান্ত গতি পায়।
বিহার পর্যটনে ততটা জনপ্রিয় না হলেও, বেশ কিছু জায়গা রয়েছে যা দেখার ও জানার মতো। কিছু অঞ্চলে প্রকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে, আর কিছু জায়গায় রয়েছে প্রচীন ভারতের ঐতিহাসিক গুরুত্ব। আজকের যে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন তা হল সোন ভাণ্ডার বা স্বর্ণ ভাণ্ডার।
বিহারের রাজগীরে রয়েছে সোন ভাণ্ডার নামে একটি জায়গা। জঙ্গলের বুক চিরে চলে গিয়েছেপাহাড়ি রাস্তা। নির্জন নিরালা। আর পাহাড়ি পথেই একটি স্থানে রয়েছে সোন ভাণ্ডার গুহা। এই গুহাতে দুটি লিপির সন্ধান পাওয়া যায়, একটি গুপ্তব্রাহ্মী এবং অন্যটি শঙ্খলিপি। গুপ্তব্রাহ্মী লিপির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু শঙ্খলিপির পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি।
একটি গুহার মধ্যেই রয়েছে রহস্যময় দরজা তারই কিছু দূরে লেখা রয়েছে শঙ্খলিপিতে সঙ্কেত বার্তা। ইংরেজ শাসন কালে স্বর্ণভাণ্ডারের সূচনা মেলার পর, সোন ভণ্ডারে কামান দেগে রাস্তা খোলার চেষ্টা চালায় ব্রিটিশ আধিকারিকরা। কিন্তু সেই দরজা খোলা সম্ভব হয়নি। মনে করা হয়, দরজার কিছু দূরে যে শঙ্খলিপিতে সঙ্কেত বাার্তা রয়েছে, সেটি পাঠোদ্ধার করতে পারলেই রহস্যময় দরজা খুলে যাবে।
ইতিহাসের সূত্র থেকে জানা যায়, হরণ্য সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তর করেন রাজা বিম্বিসার। সেই সময় তিনি রাজগীরে নিজের রাজধানী স্থাপন করে। সময়টা ৫৪৪ খ্রিঃপূর্বাব্দ। তিনি মারা যায়, ৪৯২ খ্রিঃ পূর্বাব্দে। বিম্বিসারের মৃত্যু নিয়ে দু ধরণের ঐতিহাসিক সূত্র মেলে।
একটি জৈন পুঁথি মতে, অন্যটি বৌদ্ধ পুঁথি। বৌদ্ধধর্মের পুঁথির কাহিনি অনুসারে, বৌদ্ধ ভিক্ষু দুষ্টবন্ধু দিবাদত্তের প্ররোচনায় অজাতশত্রু তাঁর বাবা বিম্বিসারকে খুন করে সিংহাসনে বসেন। আবার জৈনধর্মের কিছু পুঁথি অনুসারে বিম্বিসার আত্মহত্যা করেছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
দুটি ভিন্নধর্মী পুঁথির সূত্র ধরলে একটি বিষয় কমন, তা হল, সম্রাট বিম্বিসারের মৃত্যুর পিছনে কোনও না কোনও রহস্য ছিল। আত্মহত্যা হোক বা খুন, রহস্য ছিলই। এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে বেশ কিছু কিংবদন্তী। মনে করা হয়, চক্রান্তের আভাস পাওয়ার পরেই, সম্রাট বিম্বিসার নিজের কোষাগারের বহু অর্থ, হীরে জহরত সরিয়েছিলেন এই গোপন গুহায়।
হয়তো কোনও জৈনমুনির সেই কোষাগার রক্ষণাবেক্ষণের ছিল। কোনও মুনিই হয়তো, শঙ্খলিপির মাধ্যমে সেই সুত্র খোদিত করে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এই শঙ্খলিপির পাঠোদ্ধার কেউই করতে পারেননি।
স্থানীয় কিছু গবেষকদের মত, একটা সময়ে নালন্দায় এই শঙ্খলিপির পাঠক্রম ছিল। কিন্তু বখতিয়ার খিলজির আক্রমণের পর নালন্দা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্গ মনে করে তছনছ করা হয়। এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কোনও রাজার সেনা মনে করে, লাগাতার মণ্ডচ্ছেদ করা হয়।
সোনভাণ্ডার গুহা কীভাবে যাবেন?
হাওড়া বেশ কয়েকটি ট্রেন যাচ্ছে বখতিয়ারপুর হয়ে। রাতের ট্রেন বিভূতি এক্সপ্রেস ধরে ভোর তিনটে নাগাদ নামুন বখতিয়ারপুর স্টেশনে। ভোর চারটে নাগাদ, বখতিয়ারপুর থেকে ট্রেন ধরুন রাজগীরের। রাজগীর স্টেশন থেকে সোন ভণ্ডারের পথ সাড়ে চার কিলোমিটার। অটো, গাড়ি বা ঘোড়ায় টানা গাড়ি করে ঘুরে নিতে পারেন।
Nice post. I learn something new and challenging on sites I stumbleupon every day.
It will always be interesting to read through content from other writers and practice a
little something from other web sites.