রাজস্থানের অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ দুর্গগুলোর মধ্যে রণথম্বর কেল্লা (Ranthambore Fort) বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এটি শুধুমাত্র একটি সামরিক দুর্গ নয়, বরং রাজপুত ইতিহাস, বীরত্ব, ও ঐতিহ্যের প্রতীক। ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত এই দুর্গ রাজস্থানের সৌন্দর্য ও গৌরবের অন্যতম দৃষ্টান্ত।
*প্রতিষ্ঠার ইতিহাস*
রণথম্বর দুর্গের ইতিহাস প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো। এটি ৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে চৌহান রাজবংশের শাসনকালে নির্মিত হয় বলে ধারণা করা হয়। চৌহান রাজা রাজা সোধা দেব এবং পরে প্রথ্বীরাজ চৌহান এই দুর্গকে শক্তিশালী দুর্গে পরিণত করেন।
১. *দিল্লির সুলতানদের আক্রমণ:* ১২৯৯ সালে আলাউদ্দিন খলজি এই দুর্গ দখল করেন এবং এটি দিল্লির সুলতানদের শাসনের অধীনে আসে।
2. *রাজপুতদের পুনরুদ্ধার:* হাম্মির দেব চৌহান ১৩২৬ সালে এই দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন এবং এটি আবার রাজপুত শাসনের অধীনে চলে আসে।
3. *মুঘল শাসন:* পরবর্তীকালে মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৬৯ সালে দুর্গ দখল করেন এবং এটি মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
4. *কচ্ছওয়া রাজাদের শাসন:* ১৭তম শতকে জয়পুরের কচ্ছওয়া রাজারা রণথম্বর দুর্গের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং এটি রাজপুত রাজাদের অন্যতম প্রধান দুর্গে পরিণত হয়।
*দুর্গের স্থাপত্য ও প্রধান আকর্ষণ*
রণথম্বর দুর্গের স্থাপত্য রাজস্থানি ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ। দুর্গটি ৭০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত, যা একে একটি কৌশলগত সামরিক অবস্থানে উন্নীত করেছে।
– *ত্রিনেত্র গণেশ মন্দির:* দুর্গের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই মন্দির, যা রাজপুত ও অন্যান্য ভক্তদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।
– *বদল মহল:* একসময়ের রাজকীয় বাসস্থান, যেখানে রাজাদের বাসস্থান ও সভা কক্ষ ছিল।
– *পদ্ম তালাব:* দুর্গের অভ্যন্তরে অবস্থিত বিখ্যাত জলাশয়, যা ঐতিহ্যবাহী জল সংরক্ষণ ব্যবস্থার নিদর্শন।
– *রাজা হাম্মির মহল:* রাজপুত বীর হাম্মির দেবের বাসস্থান, যা রাজপুত স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন।
*রণথম্বর জাতীয় উদ্যান ও দুর্গের সম্পর্ক*
রণথম্বর দুর্গ আজ রণথম্বর জাতীয় উদ্যানের অংশ, যা বাঘ সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত। এই দুর্গ থেকে চারপাশের বিস্তীর্ণ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অঞ্চল দেখা যায়, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক স্থানের এক অনন্য সংমিশ্রণ সৃষ্টি করেছে।
*উপসংহার*
রণথম্বর দুর্গ কেবলমাত্র একটি প্রতিরক্ষা দুর্গ নয়, এটি রাজপুত বীরত্ব, ঐতিহ্য ও স্থাপত্যের এক জীবন্ত নিদর্শন। ইতিহাসের নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী এই দুর্গ আজও তার গৌরবময় অতীতের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এবং পর্যটকদের মুগ্ধ করে রাখে।
