Breaking News

‘পঞ্চতন্ত্র’ প্রাচীন ভারতের নীতি কাহিনি কীভাবে বিশ্বজয়ী হয়ে উঠল? প্রভাব ফেলল প্রাচীন আরবি সাহিত্যে? পর্ব-১

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি-জরাথ্রুষ্টের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন বুর্জয়ে।  ইসলামপন্থী ছিলেন আল মুকাফ্ফা, ওয়াইজ কাসিফি।  ইহুদি পন্থী ছিলেন জোহানেস হেটেল, ফ্রেঙ্কলিন এডগার্টেন।  এদেঁর মধ্যে একটা বিস্তর মিল কোথায় ছিল জানেন কি? এমন এক মিল যা হয়তো অত্যাশ্চর্যও বটে এবং বিস্ময়কর। এঁদের প্রত্যেকেরই পছন্দ ছিল পঞ্চতন্ত্র।

হ্যাঁ ভারতের মাটিতে জন্ম নেওয়া এমন এক কালজয়ী সাহিত্য যা এঁদের হাত ধরে বিশ্বের কোনায় কোনায় পৌঁছে গিয়েছে। ভারতের প্রচীন নীতি আদর্শের গল্পগাথা, কাহিনি বলা ভালো আত্মা এক নতুন উড়ানে যাত্রা শুরু করেছিল।  আজকের কাহিনি পঞ্চতন্ত্র ও বিশ্বযাত্রার কাহিনি।

পঞ্চতন্ত্রের নানা পুঁথিকে দেখলে, নানা ধরণের নামকরণ মেলে।  তন্ত্র খ্যায়িকা, পঞ্চ খ্যানকা, তন্ত্রোপখ্যানা। এমন কিছু নামকরণ মেলে। এ বিষয়ে প্যাট্রিক অলিভেল নামে এক ব্যক্তি বিস্তারিত গবেষণা করেন।  তাঁর দাবি, এর আসল নাম ছিল নীতি পঞ্চতন্ত্র খ্যায়িকা।  খ্যায়িকার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় ছোট গল্পগুচ্ছ।

সময়ের সঙ্গে বাদ পড়ে গিয়েছে নীতি ও খ্যায়িকা। পড়ে রয়েছে পঞ্চতন্ত্র।  পঞ্চতন্ত্রের পাঁচটি প্রধান বিভাগ রয়েছে। প্রথম বিভাগ হল মিত্রভেদ (বন্ধুদের মধ্যে বিভেদ)। দ্বিতীয় হল মিত্র সম্প্রাপ্তি (বন্ধুত্বের সৃজন)।  তৃতীয় কালোলোকিয়াম (শত্রুপক্ষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি)। চতুর্থ লব্ধ প্রাণাশম (লাভ ও ক্ষতি)। পঞ্চম অপরিক্ষীত কার্যকম (কোনও চিন্তা ছাড়াই কাজ করা)।

এই পাঁচ মূল শিরোনামের অধীনে রয়েছে একাধিক কাহিনি যা, জীবনের কোনও না কোনও সমস্যা শিক্ষাদান করে।  কিংবদন্তি রয়েছে, আজ থেকে প্রায় ২২০০ বছর আগে এই কাহিনিগুচ্ছ রচনা করেছিলেন কাশ্মীরে।

আরও পড়ুন- এখানেই দেখা যায় দ্রোণপুত্র অশ্বত্থামাকে

খাস পঞ্চতন্ত্র কাহিনির মধ্যেই রয়েছে, মহিলারোপ্যের রাজা অমরশক্তি, আশি বছরের বৃদ্ধ আচার্য বিষ্ণুশর্মাকে ডেকে পাঠান।  তিনি আবেদন করেন, তাঁর তিন সন্তান রয়েছে, যাঁদের জ্ঞানবুদ্ধির অভাব রয়েছে, তাদের আপনি শিক্ষা দিন। 

আচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পরেই রাজার তিন সন্তানের আচরণ দেখে পঞ্চতন্ত্র রচনার সিদ্ধান্ত নেন। পঞ্চতন্ত্র ঘিরে আরও মজাদার কাহিনি রয়েছে, তবে সেগুলি অনেক পরে রচিত হয় মূলত অনুবাদ হওয়া সংস্করণগুলিতে।  এখন প্রশ্ন পঞ্চতন্ত্র ভারতের বাইরে কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ল!

৫৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ, অর্থাত আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগে গুন্ডেশাহপুরে (ইরান) অনুশিরবাণ নামে এক রাজা ছিলেন।  তিনি একটি হাসপাতাল তৈরি করেন।  সেখানে প্রধান চিকিত্সার দায়িত্ব পান বুর্জোয়ে। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়, ভারতে গিয়ে আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরির জন্য কিছু গাছ গাছড়া নিয়ে এসো।  যা দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে পারে। কারণ সেই সময়ের অনেক আগে থেকেই ভারতের আয়ুর্বেদ বিদ্যা এমনকী জটিল শল্যপচার (অপারেশন) বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠেছিল।

আরও পড়ুন- রাজস্থানের আসল সোনার কেল্লা এটাই

রাজার নির্দেশে বুর্জোয়ে ভারতে আসেন।  ফিরদৌসির শাহনামা বইতে উল্লেখ রয়েছে, বুর্জোয়ে ভারতে এসে এক ঋষির সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। বুর্জোয়ে বলেন, তিনি কিছু বিরল জীবনদায়ী গাছগাছড়ার খোঁজ করছেন, তাঁকে সাহায্য করা হোক। তখন ঋষি জানান, বিনা জ্ঞান অর্জন করে, গাছগাছড়া নিয়ে কী করবে!

কী হবে তাতে? আর যে ব্যক্তি জ্ঞানপ্রাপ্তি হয় না, সেতো নিজেই চলমান মৃত শরীর।  তাই সবার আগে প্রয়োজন জ্ঞান। বুর্জোয়ে পাল্টা ঋষির কাছে জানতে চান জ্ঞান কোথায় পাবো! ঋষি সেই সময় তাঁকে পঞ্চতন্ত্র দান করেন।  বুর্জোয়ে পঞ্চতন্ত্র নিয়ে ইরানে ফেরেন।

আরবি ভাষায়- কালিলা-ওয়া-দিমনা

আরও কিছু চালু কিংবদন্তী রয়েছে, তবে তার মধ্যে বুর্জোয়ের নিজের লেখা থেকে জানা যায়,  চিনের এক রাজা ছিল, তার এক উপদেষ্টা রাজাকে একটি কাহিনি শোনায়, এক ভারতের রাজা রায় ডাবশালিনের কাহিনি।  রায় ডাবশালিনের একদিন স্বপ্নাদেশ পান পূর্বের দিকে যাওয়ার।  রাজা পূর্বের দিকে যান, সেখানে এক গুহায় একটি বাক্স খুঁজে পান।  সেই বাক্সে একটি বার্তা ছিল, যেটি সিরিয়ার রাজার দেওয়া।

সিরিয়া রাজার বার্তা ছিল, এই পত্রপ্রাপক যেন সেরেন্দেব যান, সেখানে তিনি একজনকে পাবেন। এরপরেই রায় ডাবশালিন সেরেন্দেব যান।  সেখানে তাঁর দেখা হয় মুনি বিডপার সঙ্গে।  এই বিডপাই রাজা রায় ডাবশালিনকে জ্ঞান দান করেন পঞ্চতন্ত্র রূপে।  বিডপা- বিদপাই- বিদ্যাপতি। আসলে সেই মুনির নাম ছিল বিদ্যাপতি, তারই অপভ্রংশ রূপ বিডপা বা বিদপাই।

কাহানি যাই হোক, ৫৫০ খ্রিস্টাব্দে বুর্জয়ে ভারত থেকে পারস্যে পঞ্চতন্ত্রকে নিয়ে যান।  সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর খাস সহকারী ও অনুবাদক উজুর্গ মিহিরের সহায়তায় অনুবাদ করেন। পঞ্চতন্ত্রের নয়া নামকরণ হয়  কারিরক-উদ-দামানক। কিন্তু এই নামকরণ কীকরে হল? আসলে পঞ্চতন্ত্রের প্রথম বিভাগের একটি গল্পের নাম করাটক দমানক। সেই নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই কারিরক-উদ-দামানক।

প্রায় বছর কুড়ি পর, কারিরক-উদ-দামানকের অনুবাদ হয়ে সিরিয়া ভাষায়।  বাড নামে এক ইতিহাসকার অনুবাদটি করেন।  সিরিয়া ভাষায় অনুবাদ বইটির নাম রাখা হয়, কারিয়াগ-উদ-দামানগ। (এই বইয়ের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি দেখা যায় প্যারিসে)

৭৫০ খ্রিস্টাব্দ বাগদাদের খলিফা ছিলেন আল মানসুর। ওনার সভালেখক ছিলেন ইবন আল মুকাফ্ফা। তিনি মূলত রাজনৈতিক ও কূটনিতিক বার্তা, চিঠি, সন্ধিপত্র, দেওয়ানিপত্র লেখায় অত্যন্ত দক্ষ ও কুশলী ছিলেন। ইবন আল মুকাফ্ফা আরবি ভাষায় অনুবাদ করলেন কারিরক-উদ-দামানকের।  নামকরণ করা হল, কালিলা-ওয়া-দিমনা।

চলবে…

আমাদের ওয়াবসাইট কেমন লাগছে, কমেন্ট করুন আমাদের ফেসবুক পেজে।  আর আমাদের ক্যুইজ কন্টেস্টে অংশ নিতে গেলে অবশ্যই আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল বা হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হয়ে যান। রয়েছে আকর্ষণীয় উপহার।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

কাশ্মীরের এই পাঁচটি জায়গা একদম অফবিট, এবারে সফরের তালিকায় অবশ্যই রাখুন

স্বাতী চ্যাটার্জি- ভূস্বর্গ কাশ্মীর, মুঘল সম্রাট এই উপত্যকা দেখার পর বলেছিলেন, পৃথিবীতে যদি স্বর্গ বলে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!