Breaking News

গৌরবের মশাল এখনও বয়ে নিয়ে চলছে শিবপুর পাবলিক লাইব্রেরি

অর্বিটনিউজ ডেস্ক- সেই মাহেন্দ্রক্ষণের হদিশ হয়তো মেলে না, যদিও একদল তরুণতুর্কির লড়াইয়ে স্মারক বয়ে নিয়ে চলেছে নিজের ঐতিহ্যা। শিবপুর পাবলিক লাইব্রেরি। উনিশ শতকের সপ্তম দশকের সময়ই হাওড়ায় আধুনিক ইংরাজি শিক্ষার সূচনা হয়েছিল। সেই সময় হাওড়া শহরের মধ্যমশ্রেণির ইংরেজি শিক্ষিত তরুণেরা গঙ্গা পেরিয়ে কলকাতায় সরকারি ও সদাগরি অফিসে কাজ করতে যেত। সেই সময়ও পাঠাগার চিন্তার ভাবনা শুরু হয়নি। পরে ধীরে ধীরে সেই প্রচেষ্টা শুরু হল।

১৭৮ নম্বর শিবপুর রোড বর্তমানে যে পাঠাগারটিকে দেখা যায়, তারই ইতিহাসও বেশ চমকপ্রদ। একটা সময়ে ব্রাহ্মণ ও ব্যবসায়ী কুলের দৌলতে শিবপুর একটু রক্ষণশীল ছিল। যদিও সেই সময় শিবপুরসহ স্থানীয় এলাকার ইংরেজি শিক্ষিত যুবকেরা কলকাতায় চাকরি করতে যেত।

ঐতিহাসিকদের মত, ১৮৭৪ সালে শিবপুরের হালদার পাড়া লেনে কাঙ্গালীচরণ হালদার নিউজ রুম নামে একটি ছোট গ্রান্থাগার তৈরি করেন। তারই বছর তিনেক পর ৩৭ নম্বর রাজনারায়ণ চৌধুরী ঘাট রোডে একটি বাড়ির দুতলায়, দুটি রুম ভাড়া নিয়ে পাঠাগার স্থানান্তরিত করা হয়।

আরও পড়ুন- রাজস্থান সার্কিট সফরে দেখে নেওয়া রাজপুতদের রাজকাহিনি

আরও পড়ুন-অফবিট উইকেন্ডের খোঁজ করছেন, ঘুরে আসুন কাহালগাঁও

নব্য পাঠাগারটি রাস্তার উপর আকর্ষণীয় জায়গায় হওয়ায়, কলকাতার অফিস ফেরত যাত্রীদের কেউ কেউ সংবাদপত্র পড়তে আসতেন। ধীরে সামান্য জনপ্রিয়তা বাড়লে পাঠাগারের নামও বদলে গেল নিউজ রুম থেকে হল দ্যা শিবপুর রিডিং রুম। ধীরে ধীরে পাঠকের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। জানা যায়, এরপরেই পাঠাগারের কর্মীদের মধ্যে দলাদলি শুরু হয়।

ফলে কিছু যুবক দল থেকে বেরিয়ে নতুন পাঠাগার তৈরি করেন। একই পাড়ার মধ্যে দুটি পাঠাগার নির্মাণ হল। একই এলাকায় দুটি পাঠাগার তৈরি হওয়ায়, কোনওটি ঠিকঠাক ভাবে চলল না। দু দলের সংঘাত বাড়তে থাকলো, তার প্রভাব পড়ল পাঠকদের মধ্যে, এলাকার মানুষ পাঠাগারে যাওয়া বন্ধ করল, পাছে কোনও পক্ষ নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন- হাওড়ার অগ্নিযুগের প্রেক্ষাপটে হারানো এক গল্প, হ্যামিলটন সাহেবের শয়তানি কলম

এই অবস্থায় রায়বাহাদুর রাজকুমার সেন দুইপক্ষকে নিয়ে বসলেন, দুপক্ষের সমঝোতা হল। দুটি পাঠাগার মিলে একটি নতুন নামে পাঠাগার জন্ম নিল। ১৮৭৯ সালে শিবপুর পাবলিক লাইব্রেরি। আবার পুরো নয়া উদ্যোমে শুরু হল পাঠাগারকে সমৃদ্ধ করার কাজ। ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত ভালই চলছিল। চাঁদা আদায়, নিত্যনতুন পুস্তর রাখা, জনপ্রিয়তাও বাড়ছিল এলাকায়। কিন্তু আবার মতভেদের ভূত হানা দিল। তবে সেই সব গণ্ডগোল কেন হয়েছিল, তার পিছনে কীসের ইন্ধন ছিল, তা কোথাও লিপিবদ্ধ নেই। লাইব্রেরি আবার দ্বিতীয়বার লাটে ওঠার জোগাড়।

আরও পড়ুন- জানুন কালাপানি কারাগারের অজানা কথা, সঙ্গে আন্দামানের ট্যুর প্ল্যান

এবার ময়দানে দেখা গেল সেই বৃদ্ধ কাঙ্গালীচরণ হালদারকে। তাঁর কাঁধেই চাপল পাঠাগারের যাবতীয় দায়িত্ব। তিনি স্থানীয়দের আব্হান জানালেন, ১৮৮৭-৮৮ সালে হাওড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও স্থানীয় যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর অনুরোধে, কিছু যুবক শ্রম দান করতেন। যদিও কয়েক মাস অন্তর তারা আবার ছেড়েও চলে যেতেন।

আরও পড়ুন- কাশ্মীর ও হিমাচলের দুটি জবরদস্ত ট্যুর প্ল্যান

১৮৯০ সালে স্থানীয় শিক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পাঠাগার কমিটি তৈরি করা হয়। এই সদস্যদের বৈঠক, আলোচনায় পুরনো নিয়ম বদলে নতুন নিয়ম নীতি আনা হয়। এরপর পাঠাগার বেশ ভালোই চলছিল, তেমন কোনও বিবাদ দেখা যায়নি। ১৮৯৭-৯৮ সালে প্রবল ভূমিকম্পে পাঠাগারের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আবার পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট পাঠাগার নির্মাণের হিড়িক শুরু হয়।

আরও পড়ুন- গাড়োয়াল সফরে কী দেখবেন, কেন দেখবেন?

নানা ডোমাডোলের মধ্যে পাঠাগার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। ১৮৯৮ সালে ১০ এপ্রিল একটি আলোচনা সভা হয়। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট ডিউক সাহেবও ছিলেন। পাঠাগারের জন্য জি টি রোডে দুকাঠা জমিও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চড়া দামের জন্য পাঠাগার কর্তৃপক্ষ এগোয়নি। যদিও এর পরেই সদস্যরা নয়া পাঠাগার ভবনের জন্য এগোতে শুরু করে।

দীর্ঘ সংগ্রামের পর নতুন জায়গা কিনে ১৯১৮-১৯ সালে শিবপুরে নতুন গৃহ নির্মাণ করে পাঠাগার শুরু হল। পুরনো ভবন থেকে বই নিয়ে আসার সময় দেখা গেল, বহু বই পোকায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছু অর্থ সংগ্রহ করে পাঠাগার সমৃদ্ধ করার কাজ চলল। ১৯২৯ সালে হাওড়া পুরসভার চেয়ারম্যান বরদাপ্রসন্ন পাইনের সহযোগিতায় পাঠাগার লাগোয়া সভাগৃহ, মঞ্চ তৈরি হল। পাঠাগারের কল্যাণে বহু স্থানীয় গুনী মানুষের অবদান রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিনোদবিহারী হালদার, কিরণচন্দ্র সিংহ।

আরও পড়ুন- হাওড়ার অগ্নিযুগের প্রেক্ষাপটে হারানো এক গল্প, হ্যামিলটন সাহেবের শয়তানি কলম

**তথ্য সহায়তা- হাওড়া শহরের ইতিবৃত্ত- অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

হাওড়ার শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস, এক স্বর্ণময় অধ্যায়, বর্তমানে স্বপ্নের অতীত

অর্বিট ডেস্ক– হাওড়া শহরে একটা সময়ে দুরন্ত বেগে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। রেলওয়ে প্রতিষ্ঠার পর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!