Breaking News

জানেন কি, ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের ইতিহাস ও কিংবদন্তী?

ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের ইতিহাস (Grishneswar Jyotirlinga)

ঘৃষ্ণেশ্বর শব্দটির বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় সহানুভূতির দেবতা। মহারাষ্ট্রের দৌতলতাবাদে ভেরুলে রয়েছে ঘৃষ্ণশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের মন্দির। এই মন্দিরের কথা উল্লেখ রয়েছে শিবপুরাণ ও পদ্মপুরাণে। ১৩-১৪ শতাব্দীতে এই মন্দিরে হামলা চালিয়ে ধবংস করে দেয় দিল্লির সুলতান। পরবর্তী সময়ে ১৬ শতাব্দীতে মারাঠা রাজা মালোজু ভোঁশলে এই মন্দির নির্মাণ করান। তিনি ছিলেন ছত্রপতি শিবাজীর পিতামহ। বর্তমানে যে মন্দিরটি দেখা যায়, এটি তৈরি করিয়েছিলেন ইন্দোরের রানি অহল্যাবাই হোলকার। তিনি কাশী বিশ্বনাথের মন্দিরটিও নির্মাণ করিয়েছিলেন।

ঘৃষ্ণেশ্বর মন্দিরকে ঘিরে কিছু কিংবদন্তী

ভেরুল গ্রামে কুসুমা নামে এক মহিলা বাস করতো তাঁর স্বামীর সঙ্গে। তিনি শিবভক্ত ছিলেন। কুসুমার সতীন তাঁকে হিংসে করতো। এদিন সেই সতীন কুসাুমার সন্তানকে হত্যা করে পুকুর পাড়ে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে সেই দেহ কলা পাতার বেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীতে। ঘটনার পর কুসুমা মনের দুঃখে দিন কাটাতো। যদিও মহাদেবের প্রতি তাঁর আস্থা ছিল অটুট।

তিনি মহাদেবের কাছে ভিক্ষা চাইতেন, যেন তাঁর সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। একদিন কুসুমা দেখেন, তাঁর সন্তান ফিরে এসেছে। কুসুমা বুঝতে পারেন এ মহাদেবের কৃপা। তিনি আবার তপস্যা শুরু করেন এবং মহাদেবের কাছে আর্জি রাখেন, তিনি যেন এই গ্রামে বাস করেন। মহাদেব খুশি হয়ে ভেরুল গ্রামে জ্যোতির্লিঙ্গের স্থাপনা করেন।

অন্য কিংবদন্তী হল, দেবগিরি পাহাড়ের কোলে এক সময় ব্রহ্মভেত্তা সুধর্ম নামে এক ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তাঁর এক স্ত্রী ছিলেন সুদেহ। তাঁদের দীর্ঘদিন কোনও সন্তান না হওয়ায়, সুদেহ তাঁর বোন ঘুষমার কাছে আর্জি জানান, তাঁর স্বামীকে যেন সে বিয়ে করে। ঘুষমা শিবভক্ত ছিলেন। তিনি স্থানীয় একটি ঝিলের পাশে রোজ মাটি দিয়ে শিবলিঙ্গ বানিয়ে জলে অর্পণ করতেন।

দিদির কথামতো ব্রহ্মভেত্তাকে বিয়ে করেন এবং একটি সন্তানও হয়। কিন্তু এর পরেই সুদেহ ঘুষমার প্রতি হিংসায় জ্বলতে থাকেন। দীর্ঘ সময় কাটে ঘুষমার সন্তান বড় হয়, তার বিয়েও হয়। একবার পারিবারিক গণ্ডগোলের জেরে, সুদেহ, ঘুষমার সন্তানকে খুন করে ওই ঝিলে ভাসিয়ে দেন। যেখানে ঘুষমা শিবলিঙ্গ অর্পণ করতেন। বিষয়টি জানতে পারেন ঘুষমার বউমা। তিনি পুরো বিষয়টি খুলে বলেন।

ঘুষমা মহাদেবের আরাধনা শুরু করেন। কদিনের মধ্যে জল থেকে তাঁর সন্তান ভেসে ওঠেন এবং জীবীত হয়ে যান। ঘুষমা যখন জানতে পারেন, তাঁর দিদি হংসার জন্য এই কাজ করেছেন, তখন নিশ্চয়ই মহাপাপের ভাগিদার হয়েছেন। কিন্তু তিনি চাননি, তাঁর দিদি এই মহাপাপের ভাগিদার হন। ঘুষমা মহাদেবের আরাধনা শুরু করেন এবং দিদিকে ক্ষমা করে দেওয়ার আর্জি জানান। মহাদেব তপস্যা তুষ্ট হয়ে ঘুষমাকে বর দেন এবং এই গ্রামে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গকে এখানে ঘুষ্ণেশ্বর বা কুসুমেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গও বলা হয়ে থাকে। ভারতের যতগুলি জ্যোতির্লিহ্গের মন্দির রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট মন্দির এখানে। এই মন্দিরে প্রবেশ করতে গেলে, পুরুষদের ধুতি এবং উপরের অংশ অনাবৃত রাখার প্রথা রয়েছে।

মন্দির খোলার সময়

দর্শন সকাল সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা।
(শ্রাবণ মাসে দর্শন) ভোর ৩টে থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত
দুপুরের পুজো দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ মিনিট পর্যন্ত।
সান্ধ্যপুজো বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত

আরও পড়ুন

মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের ইতিহাস

ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের ইতিহাস

ত্রিম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের ইতিহাস

ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গের ইতিহাস

ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের ইতিহাস

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

খুব সহজে আমেরিকার নাগরিক হওয়ার পথ ‘ডঙ্কি রুট’- এক অজানা কাহিনি

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- আমেরিকা, স্বপ্নের দেশ। একবার পৌঁছতে পারলেই একটা জীবন পরিপূর্ণ। অর্থ, আভিজাত্য, বৈভব, সামাজিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!