ফতেপুর সিক্রি ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। এটি মুঘল সম্রাট আকবরের রাজধানী ছিল এবং মুঘল স্থাপত্যশৈলীর এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে আজও টিকে রয়েছে। আগ্রার কাছাকাছি অবস্থিত এই নগরী তার স্থাপত্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত।
*প্রতিষ্ঠার ইতিহাস*
ফতেপুর সিক্রির ইতিহাস শুরু হয় ১৫৬৯ সালে, যখন সম্রাট আকবর শেখ সেলিম চিশতীর আশীর্বাদ লাভের পর তাঁর সম্মানে এখানে একটি নতুন শহর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৭১ সালে তিনি এটিকে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করেন এবং পরবর্তী ১৫ বছর এই শহর রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে, পানির অভাব এবং অন্যান্য কারণের জন্য ১৫৮৫ সালে আকবর রাজধানী আগ্রায় স্থানান্তরিত করেন।
*স্থাপত্য ও প্রধান স্থাপনা*
ফতেপুর সিক্রির স্থাপত্য মুঘল, পারস্য, এবং রাজস্থানি শৈলীর মিশ্রণে গঠিত। শহরের বিভিন্ন অংশে আকবরের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও স্থাপত্য দক্ষতার প্রতিফলন পাওয়া যায়।
*বুলন্দ দরওয়াজা:* ১৬০১ সালে গুজরাট বিজয়ের স্মরণে নির্মিত এই দরজাটি ভারতের অন্যতম বৃহত্তম প্রবেশদ্বার। এর উচ্চতা প্রায় ৫৪ মিটার।
*জামা মসজিদ:* আকবরের রাজকীয় মসজিদ, যা ফতেপুর সিক্রির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
*শেখ সেলিম চিশতীর দরগাহ:* সাদা মার্বেলে নির্মিত এই দরগাহ আকবরের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতীক। এখানে সন্তান কামনায় বহু মানুষ প্রার্থনা করে।
*পঞ্চ মহল:* পাঁচতলা এই ভবনটি আকবরের বিনোদন ও বিশ্রামের জন্য নির্মিত হয়েছিল।
*দিওয়ান-ই-খাস:* আকবরের গোপন পরামর্শ সভার স্থান, যেখানে তিনি নবরত্নদের সঙ্গে আলোচনা করতেন।
*পতন ও বর্তমান অবস্থা*
ফতেপুর সিক্রি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল, তবে ব্রিটিশ শাসনের সময় এটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমানে এটি ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এই ঐতিহাসিক স্থানটি পরিদর্শনে আসেন।
*উপসংহার*
ফতেপুর সিক্রি শুধুমাত্র একটি কেল্লা নয়, এটি মুঘল স্থাপত্য ও আকবরের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির এক উজ্জ্বল প্রতীক। ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এটি এক আকর্ষণীয় গন্তব্য, যেখানে মুঘল সাম্রাজ্যের গৌরবময় অতীতের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে।
