Breaking News

যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধ তৈরি হয় এই পরজীবী থেকে, দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে

অর্বিট ডেস্ক– যৌনশক্তি বর্ধক হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন যে ওষুধ বাজারে রয়েছে, তার নাম ভায়াগ্রা। কিন্তু এটা জানেন কি? বহু হাজার বছর ধরে হিমালয়ের বুকেই জন্ম নেয় এমন এক ফাঙ্গাস যা সম্পূর্ণ আয়ুর্বেদিক। আর এই ফাঙ্গাসের চাহিদা রয়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে।

কেমিক্যাল নির্মিত ওষুধ থেকে যে ধীরে ধীরে পশ্চিমী দেশগুলি সরে এসে প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি ওষুধ জায়গা করছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ এশিয়া মহাদেশের দেশগুলিতে আন্তর্জাতিক ফার্মা লবি রাসায়নিক ওষুধই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

গত বছরের ঘটনা, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অফ নেচার একটি ফাঙ্গাসকে লুপ্তপ্রায় হিসেবে ঘোষণা করেছে, আর তা হল, হিমালয়ান ভায়াগ্রা। এটি আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত কর্ডিসেপ্স ফাঙ্গাস। বৈজ্ঞানিক নাম অফিওকর্ডিসেপ্স সাইনেন্সেস। সাইনেন্সেস নামটা রাখা হয়েছিল, কারণ এটি প্রথমে চিন ও তিব্বতে পাওয়া যেত।

এই ফাঙ্গাস আসলে একধরণের পরজীবী কিন্তু দেখতে গাছের শিকড়ের মতো। এই ফাঙ্গাস শুঁয়োপোকার মধ্যে জন্ম নেয়। শুঁয়োপোকা মারা যাওয়ার পর, তার শরীরে বেড়ে ওঠে এই ফাঙ্গাস।

ভারতের আযুর্বেদে যেমন শিলাজিতের ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে, তেমনই চিনসহ গোটা সাউথ ইস্ট এশিয়ায় এই প্রাচীন ওষুধি উপাদানের চাহিদা রয়েছে। এই ফাঙ্গাস মেলে ভারতের উত্তরাখণ্ডেও। এর স্থানীয় নাম কিড়া জড়ি। মাটির তলায় যে শুঁয়োপোকা থাকে, তার উপরে এই ফাঙ্গাস জন্ম নেয়।

শুঁয়োপোকা মারা গেলে তার শরীর থেকে এই ফাঙ্গাস গাছের শিকড়ের রূপ ধরে মাটির উপরে উঠে আসে। আর শুঁয়োপোকার শরীর মমির মতো হয়ে ওঠে। ছবিতে হলুদ রঙের যা দেখা যাচ্ছে, তাই শুঁয়োপোকার মৃত শরীর।

এই জড়িবুটি মেলে হিমালয়ের কোলে প্রায় ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার মিটার উঁচু ভূমিতে। এগুলি মেলে, উত্তরাখণ্ড, নেপাল, সিকিম, ভুটান ও চিনের কিছু অঞ্চলে। ভারতে এই ব্যবসা শুরু হয় ২০০০ সালের পর। চিন ও তিব্বতে এই প্রকৃতিক ভান্ডার শেষ হওয়ার পর, ব্যবসায়ীদের নজর ঘোরে, ভারত, নেপাল, ভুটানের দিকে। বর্তমানে এই ফাঙ্গাসের সবচেয়ে বড় আকর হল, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, তিব্বত ও ভুটান।

সবথেকে মজার ব্যাপার, এই ফাঙ্গাস, কোনও ভাবে ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায় না। যার ফলে এর দামও মারাত্মক। এই সব দুর্গম অঞ্চলে সাধারণ মানুষদের পৌঁছনো সম্ভব হয় না। ফলে স্থানীয় গ্রামবাসীদেরই ব্যবহার করা হয়। তারাই পুরো পরিবার মিলে এই ফাঙ্গাস সংগ্রাহ করে তুলে দেয় ব্যবসায়ীদের হাতে।

এজেন্টের মাধ্যমে এই জড়িবুটি নেপাল হয়ে চলে যায়, গোটা সাউথছ ইস্ট এশিয়ায়। ২০১৮-১৯ সালে, এই ফাঙ্গাস যারা সংগ্রাহ করতো, তাদের দেওয়া হত, ১০ লক্ষ টাকা কিলো দরে। আর এই ফাঙ্গাসই সাউথ ইস্ট এশিয়ার বাজারে বিক্রি করা হয় ২০ লক্ষ টাকা কিলো দরে। প্রথম দিকে এর দাম কম ছিল, কিন্তু ২০০৭ সালের পর এর দাম লাগামছাড়া ভাবে বাড়তে শুরু করে।

মজার ব্যাপার, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, ভুটানের পাহাড়ি গ্রামীন এলাকার মানুষ যাঁরা শহরের দিকে আসত কাজ করতে তারা আবার ফিরে যায় গ্রামে। এই ফাঙ্গাস উত্তরাখণ্ড, নেপাল, ভুটান, সিকিমের গ্রামীন মানুষদের জীবন বদলে দিয়েছে। ভারতের উত্তরাখণ্ডে পিথোরাগড় ও চামোলি জেলার গ্রামীন মানুষদের হাতে এর ফলে বিপুল অঙ্গের টাকা এসেছে স্রেফ এই ফাঙ্গাস সংগ্রাহ করে।

চিনের প্রাচীন ওষুধে এই ফাঙ্গাসের ব্যবহার করা হত শুধুমাত্র যৌনশক্তি বর্ধন হিসেবে। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে এই ফাঙ্গাস থেকে ওষুধ তৈরি করে অনৈতিকভাবে মার্কেটিং করা হচ্ছে। যেমন, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে, ক্যান্সার সারায়, সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে ইত্যাদি। যদি এগুলির কথা প্রাচীন চিনা ওষুধ বিধিতে বলা নেই।

১৯৯০ সালে চিনের কিছু রানারের বিরুদ্ধে ডোপিঙের অভিযোগ ওঠে, তারা দাবি করেছিল, ডোপিং নয়, তাদের ট্র্যাডিশনাল ওষুধ ফাঙ্গাসের স্যুপ পান করেছিল। ২০০০ সালেও সিডনি অলিম্পিকে ডোপিঙের অভিযোগ ওঠার ফলে কয়েকজন চিনা খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া হয়। তারাও একই দাবি করেছিল। দেখা যাচ্ছে, এই ওষুধের চাহিদা তৈরি হয়েছিল, মূলত অ্যাথলেটদের হাত ধরেই। তারপর থেকেই এর বাজার বাড়তে থাকে।

পাহাড়ি এলাকায় এই ফাঙ্গাসকে ঘিরে ঠান্ডা লড়াইও শুরু হয়েছে, মূলত এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে। কে কতটা জায়গা দখলে নিতে পারবে। যদিও এই গণ্ডগোলের অনেকটাই পুলিশের কাছেও পৌঁছয় না, যেতেহু অসাধু ব্যবসা। আরও ইন্টেরেস্টিং পয়েন্ট হল, মে জুন মাসে, এলাকার সব স্কুল খালি হয়ে যায়। কোনও পড়ুয়া স্কুলে আসতে চায় না। কারণ ওটাই সিজিন ফাঙ্গাস সংগ্রাহ করার। আর পুরো পরিবার জুড়ে ময়দানে নেমে পড়ে ফাঙ্গাস সংগ্রহ করতে।

এই অসাধু ব্যবসার ফলে, বহু বাসিন্দা ক্ষেত বন্ধ করে দিয়েছে, স্কুল ড্রপ আউটের সংখ্যাও হুহু কর বাড়ছে। কারণ বছরে দু মাস খেটে সারা বছর স্বচ্ছল জীবন যাপনের রাস্তাই বেছে নিচ্ছে তারা।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

কাশ্মীরের এই পাঁচটি জায়গা একদম অফবিট, এবারে সফরের তালিকায় অবশ্যই রাখুন

স্বাতী চ্যাটার্জি- ভূস্বর্গ কাশ্মীর, মুঘল সম্রাট এই উপত্যকা দেখার পর বলেছিলেন, পৃথিবীতে যদি স্বর্গ বলে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!