বারাণসীতে আমি ও সেই মেয়েটা
পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি
২০১০, ১৬ নভেম্বর। আমার প্রথম বারাণসী যাত্রা। কিন্তু কাশীর বিশ্বনাথ দর্শনে গিয়ে এমন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হব, তা কস্মিনকালেও ভাবতে পারিনি। দু হাজার বছরের পুরনো এই শহরকে ঘিরে নানা গল্পকথা, কিংবদন্তীতো রয়েইছে। কিন্তু রহস্য যে পরতে পরতে রয়েছে, তা শব্দে প্রকাশ করে হয়তো কাউক বোঝানো যায় না, আর যাবেও না।
এখনও স্পষ্ট মনে আছে, ফাঁড়াটা তৈরি হয়েছিল, অফিস থেকেই। ছোটবেলা থেকে মা বলতেন, কোথাও যাওয়ার আগে, কোনও ঝগড়া, ঝামেলা না করাই ভালো, যাত্রা শুভ হয়। কিন্তু আমার ভবিতব্য বলুন বা অনাকাঙ্ক্ষিত অভ্যাস, ঝামেলা কেমন যেন উড়ে আসে অনাহুতের মতো। বারাণসী যাত্রার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই হয়েছিল। প্রায় টানা তিন মাস কাজ করছি, দু একদিনের ছুটির জন্য মাঝে দুবার আবেদন করেছি অফিসে। লোক কমের অজুহাতে বারবারই ছুটি বাতিল হয়েছে। মেজাজটা ছিল সপ্তমে। তাই হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিলাম, রইল ঝোলা, চললো ভোলা, সরাসরি এডিটর এবং এইচ আর ডিপার্টমেন্টে দুটো মেল পাঠালাম ৫ দিনের জন্য আসতে পারছি না। পরের দিন এই আর ডিপার্টমেন্ট থেকে একটি মেল এসেছিল, অফিসে দেখা করো, কিন্তু পাত্তা দিই নি।
মনে মনে ঠিক করেছিলাম বারাণসী যাবো। দেখবো ২ হাজার বছরের পুরনো শহরটাকে। ওয়েটিং লিস্টে টিকিট কেটে, রেলের এক অফিসারকে ধরে কনফার্ম করিয়েছিলাম টিকিট। আর একটি ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের কো আপারেটিভের হলিডে হোম বুক করে নিলাম।
১৬ নভেম্বর বিভূতি এক্সপ্রেস ধরে এক লম্বা ঘুম দিয়ে সোজা বারাণসীতে। হলিডে হোমে পৌঁছে, দ্বিতীয়বার মেজাজটা গেল চড়ে। ঘরের তালা খুলতেই বুঝলাম লর্ড ক্লাইভ যখন কলকাতা ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিল, সেই সময় থেকেই এই ঘরের দরজা বন্ধ। ধুলো জমে আছে, বিছানায় তোশক, গদি কিছুই নেই। স্রেফ একটা ফোল্ডিং ক্যাম্পখাট।
আসলে বাড়িটি প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। চারতলা হাভেলি টাইপ। তিন আর চারতলার মোট আটটি ঘর রয়েছে, সব কটি হলিডে হোমকে দেওয়া। তর্কাতর্কির মধ্যে জানতে পারলাম, বাড়ির মালিকের শ্যালক, আমার বরাদ্দ রুমটি অন্য জনকে দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আধ ঘণ্টা দাঁড়ান আপনার এই রুম পরিষ্কার করে দিচ্ছি। বিশ্বাস করুন, তখন একবারও মনে হয়নি, সবকটি রুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হলেও এটি কেন নয়? আর আমার বুকিং যখন রয়েছে, তখন এই ঘরটি বা অন্য কাউকে কেন দিলেন না?
মাথা তখন গরম তেলে ফুটছে, আমি ব্যাগ দুটিকে রেখে, সোজা গঙ্গার ঘাটের দিকে গেলাম, বললাম ঘর পরিষ্কার হলে, ফোন করবেন দয়া করে। বাইরে খাবার সেরে একটু গলিগুলো ঘুরে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ফিরলাম হলিডে হোমে। হ্যাঁ রুমটা প্রায় পুরোটাই পরিপাটি করে তুলেছে। নতুন, চাদর, নতুন বালিশ সবই রয়েছে।
বাথরুমটাও পরিষ্কার করে গেছে। নিজের কপালের দোষ ভেবেই আর কোনও বাড়তি বিতর্কে গেলাম না। মালপত্র রেখে, স্নান সেরে নিলাম। প্রথম দিনের পরিকল্পনা ছিল, বিকেলে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির সংলগ্ন গলুগুলো ঘুরে দেখবো, আর সন্ধে নাগাদ আরতি। তারপর রাতের খাবার সেরে গোধুলিয়া এলাকায় কিছু এধার ওধার ঘুরে সোজা রুমে। লম্বা ঘুম দিয়ে পরের দিন বিন্ধ্যাচল আর চুনারগড় কেল্লা।
পরিকল্পনামতো, আরতি, গলিভ্রমণ এবং রাতের খাবার সেরে দশটা নাগাদ রুমে ফিরলাম। তখনও গলিগুলো জমজমাট। দরজার চাবি খুলতেই নাকে একটা পচা গন্ধ যেন তীরের মতো বিঁধলো। কেমন খটকা লাগলো, ইঁদুর মরে নেইতো? আলো জ্বালিয়ে ভালো করে চারপাশ খুঁজে দেখলাম, কিছুই নেই। গন্ধটাও মিনিট খানেকের মধ্যে মিলিয়ে গেল।
হাত পা ধুয়ে একটু ফ্রেস হয়ে, ক্যামেরা নিয়ে বসলাম, ছবিগুলো দেখার জন্য। মিনিট পনেরোর মধ্যে আবার যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য পচা গন্ধটা ফিরে এলো। কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না গন্ধটা আসছে কোথা থেকে। আবার ভালো করে, চারপাল, খাটের তলা, বাথরুম এমনকী ঘরের বাইরেও একটা চক্কর দিলাম। কিন্তু গন্ধের উৎস স্থল খুঁজে পেলাম না। ঘরের জানলার বাইরের দিকটা একবার দেখলাম, নীচ দিয়ে লোকজন যাতায়াত করছে, কোথাও কিছু নেই।
ক্যামেরা অফ করে, মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ তৈরি হয়ে, বিশ্বনাথ মন্দিরে যাবো। ফাঁকায় ফাঁকায় দর্শন হবে এই ভেবে। তন্দ্রা ঠিক এসেছে, এমন সময়, কে যেন মুখের সামনে জোরে নিশ্বাস ছাড়ল আবার গন্ধটা নাকে এসে বিঁধলো। প্রায় লাফিয়ে খাটের উপর উঠে বসলাম। মনে হল একটা গরম হাওয়া আমার ডানদিক থেকে বাঁদিকে চলে গেল।
নভেম্বর মাস, শীতের আমেজ রয়েছে, দুটো কম্বল ছিল গায়ে। জানালা একটু খুলেই রেখেছিলাম। তবু কেমন একটা অদ্ভুতুড়ে পরিবেশে শরীরটা হাল্কা হতে শুরু করলো। সামান্য জল খেয়ে আবার শুয়ে পড়লাম, অন্ধকার ঘরে ড্যাব ড্যাব করে চারপাশ তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে রইলাম। ঘুম এলো না। না আর পচা গন্ধটাও পাওয়া যাচ্ছে না। এবার ছোখ বন্ধ করলাম। আর অফিসের কথা ভাবতে ভাবতে ধীরে ধীরে চোখ নুয়ে এলো।
হঠাৎ কীসের একটা শব্দে চোখ খুললো, চোখ খুলতেই দেখি, জানলার গরাদ ধরে একটা বছর ষোলর মেয়ে ঝুলছে। মুখটা বোঝা যাচ্ছে না। পুরোটাই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। এমন সময় বিকটশব্দে অ্যালার্মটা বেজে উঠল, লাফিয়ে উঠতেই, দেখি জানালা ফাঁকা, পাশের বাড়ির আলো জানালা ভেদ করে এ ঘরে পড়েছে, জানালাটা যেমন খোলা ছিল, তেমনই রয়েছে। কিন্তু মেয়েটা? স্বপ্ন দেখলাম কি? বিছানা থেকে নামতে গিয়ে ঘরের বাঁদিকের দেওয়ালে ফের একবার মেয়েটার ছায়াচিত্র দেখলাম। গাটা কেমন যেন ছ্যাঁক করে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের আলো জ্বাললাম।
ভোরেই স্নান সেরে বিশ্বনাথ গলি পেরিয়ে উঠলাম কচোরি গলিতে। আলো তখনও ফোটেনি। রাস্তায় লোক বেরোতে শুরু করেছে। মূলত মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য। বিশ্বনাথ মন্দিরের কাছে পৌঁছতেই। সিকিউরিটি চেক। নিরাপত্তাকর্মী যেভাবে আমার সারা শরীর জুড়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা চালালেন সেখানে ক্যামেরাতো দূর অস্ত্, সামান্য একটি দু টাকার পেনও রেহাই পেল না।
ক্যামেরা নিয়েতো নয়ই এমনকি পেন নিয়েও ভিতরে যাওয়া যাবে না। নিয়ম বলে কথা, অন্য এক নিরাপত্তাকর্মীর কাছে সেগুলি জমা দিয়ে ভিরতে প্রবেশ করে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে মাথা ঠুকে, চারপাশটা ঘুরে নিলাম, বহু ভক্ত নানারকম মানত করছেন, অনেক কিছু আবদারও করছেন, মাস হিস্টিরিয়া আমারও কাজ করল, আবার একবার মাথা ঠুকে ভালো করে আবদার জুড়ে বসলাম, বললাম, হে ভগবান, জীবনের নানা জটিল সমস্যার সমাধান করো। পরক্ষণেই আবার কেমন একটা মনে হল, পৌরাণিক গল্পে পড়েছি, স্বয়ং মহাদেবকে প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
আজ বকাসুর তো, কাল জলন্ধর, কাল অন্ধকাসুরতো আবার কাল ওমুক অসুরের সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে হয়। কারণ একটাই সৃষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখতে। এদিকে কোটি কোটি ভক্ত, তিনি আর কত সমস্যার সমাধান করবেন।
এমন সব আজগুবি ভাবনা, ভক্তদের পর্যবেক্ষণ করতে করতেই ভোরের আলো ফুটে গেল। মন্দির চত্বর থেকে বেরিয়ে গলি পথ ধরে গোধুলিয়ার দিকে পা বাড়ালাম। দুটো সিঙ্গাড়া আর বড় ভাঁড়ের চা পান করে ব্রেকফাস্ট সারলাম। হেঁটেই গেলাম গির্জামোড়ের কাছে, একটা ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে, ১৭৫ টাকায় জনপ্রতি খরচে চুনারগড় ফোর্ট এবং বিন্ধ্যাচল ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।
সকাল আটটা। ট্রেভেল এজেন্সির দরজা খুললো বটে কিন্তু কপাল খারাপ। সাফ জানালেন আজ সব গাড়ি ভর্তি। কালকের জন্য টাকা জমা দিতে পারেন। অগত্যা প্ল্যান চেঞ্জ। কালই যাওয়া হবে চুনারগড় আর বিন্ধ্যাচল। তাহলে আজ! ঠিক করলাম আজ রামনগর আর সারনাথ। রিজার্ভ গাড়ি যাবে না। তাই লোকাল ট্রান্সপোর্ট।
ফের কচোরি গলির রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটে চলে এলাম ময়দাগিন মোড়, ওখান থেকে অটো ধরে রাজঘাট ব্রিজের কাছে নামলাম। আবার একটা বড় অটো ধরে, রাজঘাট ব্রিজ পার হয়ে ফের অটো চেঞ্জ করে রামনগর ফোর্ট। দুপুর দুটো নাগাদ রামনগর চত্বরে একটা হোটেলে খাবার খেয়ে, ফের শেয়ার অটো ধরে সারনাথ।
সন্ধে নাগাদ ফিরলাম হলিডে হোমে। প্রচুর হাঁটা, আর স্থানীয় পরিবহণের ধকল, দুয়ে মিলে শরীর তখন বিছানা ছাড়তে চাইছিল না। ভাবলাম, ঘণ্টা খানেক জিরিয়ে নিয়ে, রাতের খাবার সারতে বেরোবো।
সন্ধে সাড়ে ছটা বাজে, মোবাইলে ঘণ্টা খানেকের অ্যালার্ম দিয়ে, শরীর ছেড়ে দিলাম বিছানায়। পুরো বেহুঁশ। ফের একবার ঘুম ভাঙল সেই পচা গন্ধটায়। ঘড়িতে তখন বাজে রাত সাড়ে নটা। সাড়ে সাতটার অ্যালার্ম, ক বার বেজেছে কি বাজেনি, কিছুই জানি না। মোবাইলে সাড়ে নটা দেখে খাট ছেড়ে লাফিয়ে বাথরুমে, চোখে মুখে জল দিয়ে বেরোলাম খেতে। জানি না কী খাবার পাবো?
রাত পৌনে এগারোটা। হোটেলের খাবার খেয়ে রুমে ঢুকেছি, সে আর এক বিপদ। সারা ঘরে গোড়ালি পর্যন্ত জল জমে রয়েছে। বাথরুমে ঢুকে দেখি, কল খোলা। সেই সময় নিজেকে মনে হচ্ছিল রুম ছেড়ে পালাই, এতো বড় ভুল করলাম? তাড়াহুড়োর মধ্যে কল খুলে চলে গেছি? কিন্তু এটাতো হওয়ার কথা নয়? মানুষ ভুলো মনে কোনও কাজ করলে, রিফেক্স কাজ করে! রাতে ৫০ টাকা গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে ক্লিনারকে দিয়ে জল পরিষ্কার করালাম, ভুলটা আমারই।
সব কিছু চুকলো তখন ঘড়িতে রাত বারোটা। সকাল ছটায় অ্যালার্ম সেট করে। বাথরুমের জলের কল ভালো করে দেখে শুয়ে পড়লাম। শীতের রাত, তবু ঘরটার মধ্যে কেমন যেন ভ্যাপসা গরম, অস্বস্তিকর। জানালাটা সামান্য খুলে দিলাম। চোখ জুড়িয়ে এলো। কোথা থেকে যেন টপ টপ করে জল পড়ার আওয়াজ হচ্ছে। চোখ খুলেই আওয়াজটা ভালো করে শোনার চেষ্টা করলাম।
মোবাইলে দেখলাম রাত একটা। বিছানায় শুয়েই বোঝার চেষ্টা করছি জলের আওয়াজটা কোথা থেকে আসছে, মনে হচ্ছে বাথরুম থেকে। উঠে বাথরুমে গেলাম, না কোথাও কোনও জল পড়ছে না। এবার আওয়াজটা মনে হচ্ছে, ঘরের বাইরের কলে। দরজা খুলে বাইরে গিয়েও দেখি কল বন্ধ, কোনও জল নেই। আবার মনে হচ্ছে, যেন শব্দটা বাথরুম থেকে আসছে। চারদফা এদিক ওদিক করেও শব্দের উৎসস্থল খুঁজে পেলাম না। মনে হল, কেউ যেন আমাকে নিয়ে খেলা করছে।
মনের ভ্রম ভেবে, এবার সব দিক ভালো করে দেখে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। ব্যস জলের শব্দও বন্ধ। মনে মনে ভাবলাম বাঁচা গেছে। ধীরে ধীরে চোখ জুড়িয়ে এলো। কিন্তু প্রকাণ্ড একটা কী একটা পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। শব্দটা এতোই জোরে ছিল যে বুকে ধড়পড়ানি শুরু হয়ে গেল।
চুপচাপ বেশ কিছুক্ষণ বসে রইলাম। নিজেই ধন্দে পড়ে গেলাম, স্বপ্ন দেখলাম! নাকি সত্যি কিছুর আওয়াজ ছিল। ফের একবার তীব্র আওয়াজটা হল, যেন বাসন পড়ল, আর শব্দটা এলো বাথরুম থেকেই। সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমে গিয়ে দেখলাম কোথাও কিছু নেই। বাসনতো নয়ই, বাথরুমে ধাতুর কোনও জিনিসই নেই। বালতি, মগ রয়েছে, তাও প্লাস্টিকের।
গতকাল রাতে একটি মেয়ে ছায়াছবি আর আজ এমন বিচিত্র আওয়াজ। কিছুতো সমস্যা রয়েছে এ ঘরে। রাতভোর ঘুম হল না, কিন্তু মাঝে মধ্যেই পচা গন্ধটা গরম বাতাসের সঙ্গে মিশে আসছিল। না রাতভোর আর কোনও শব্দ হয়নি ঠিকই, কিন্তু এভাবে থাকা সম্ভব নয়।
সকালে ফ্রেস হয়েই, বাড়ির মালিকের কাছে গেলাম দেখা করতে। হরবিন্দর কাপুর। পাঞ্জাবী হলেও বারাণসীতে প্রায় তিন পুরুষের বাস। বেনারসী শাড়ির আড়ত রয়েছে। গদিতে যাওয়ার পরেই, প্রশ্ন, বলেন সাহব, কিমন আছেন? আমি কোনও ভনিতা না করেই বললাম, আমি হাওড়া থেকে এসেছি ব্যাঙ্কের হলিডে হোমে, জানলাম আপনি কাপুর হাভেলির মালিক আপনি। আমাকে দেওয়া হয়েছে ১২ নম্বর রুম। আমার মনে হয় রুমটায় সমস্যা আছে।
কাপুরবাবু বললেন, ঘরে কুচু সমস্যা নাই। আপকা ক্যায়া প্রোবলেম হ্যায়? বললাম, মাঝে মাঝেই কেমন পচা গন্ধ, জলের শব্দ আর বিচিত্র বিচিত্র ঘটনা ঘটছে। আমার কথা শুনে, শান্ত চোখে আমাকে ভালো করে দেখে বললেন, ডক্টর দিখান। আপনার কী মনে হয়? এই বাজারে ওই ঘোরে ভূত আছে? আপনি যে হাভেলিতে থাকছেন, তার উত্তরে কাশী বিশ্বনাথ বাবার মন্দির, দক্ষিণে মণিকর্ণিকা ঘাট, পশ্চিমে অন্নপূর্ণা মন্দির, আর পূর্বে হনুমান মন্দির। চারপাশ দিয়ে ঘিরা আছে, আর আপনি ভূতের ভয় পাচ্ছেন?
আমি বললাম, আমি ভূতের ভয় পাচ্ছি এ কথাতো একবারও বলিনি। কিন্তু কিছু একটা সমস্যা আছে। আর যে দিন এসেছি, সেদিন দেখলাম, ওই ঘরটা সম্পূর্ণ অপরিচ্ছন্ন ছিল, বোঝাই যাচ্ছিল ওই ঘরটি দীর্ঘদিন বন্ধ। হলিডে হোমেতো প্রায়ই লোক আসে, তাহলে ওটা আগে থেকেই পরিষ্কার কেন ছিল না।
আমার প্রশ্নগুলো হয়তো ভালো লাগলো না, তাই কাপুরবাবুর গলাটা হঠাৎ খাদে নামিয়ে বললেন, আটটা রুম হলিডে হোমকে দেওয়া। ব্যাঙ্ক বাড়তি বুক করে পাঠিয়েছে, তাই আপনাকে দেওয়া হয়েছে, না হলে ফেরত পাঠিয়ে দিতাম। আপনি অসুবিধায় পড়বেন তাই ওই রুম দেওয়া হয়েছে। ওটা আমরা দিই না, কারণ ওটা আমাদের গেস্টদের জন্য রাখা থাকে। আর আমাদের গেস্ট সবসময় আসে না, তাই পরিষ্কার হয় না। যা হোক, এখন অনেক কাজ আছে, জয় রামজীকি।
তর্ক বাড়ালাম না। বুঝলাম, আমাকে বেরিয়ে যওয়ার সঙ্কেত দিলেন। কিন্তু মনটা কেমন হয়ে উঠল। চুনারগড়, বিন্ধ্যাচল যাওয়ার কথা, টাকাও অ্যাডভান্স করে এসেছি। কিন্তু যেতে ইচ্ছে করছে না। ওই হাভেলির চারপাশের বাড়িগুলোতে গিয়ে খোঁজখবর শুরু করলাম। দু তিনটে বাড়িতে খোঁজখবর নিয়ে তেমন কোনও সূত্র পেলাম না। যাকেই জিজ্ঞেস করি, প্রত্যেকেই বলে কিছুই জানি না।
কিন্তু সেই বলার মধ্যে কেমন যেন মিথ্যে গন্ধ বেরিয়ে আসছিল। চার নম্বর বাড়িতে খোঁজ করতে গিয়ে যা ঘটল, তাতে আমার সন্দেহ পাকা হয়ে উঠল। হঠাৎ দেখি বাড়ির মালিকের শ্যালক এসে হাজির, রীতিমতো, হুমকির সুরে বললেন আপনি কি কলকাতার টিকটিকি আছেন? ডিটেকটিভ? আপনার ঘোর পচন্দ না হলে ছেড়ে দিন? এটা কাশী আছে, বিনাপয়সাতে বডি পোড়ানোর ব্যবস্থা আছে।
তখনই ঠিক করলাম ঘর ছাড়বো, আর রহস্যটাও আমাকে জানতে হবে, তাতে বেড়ানোর প্ল্যান চেঞ্জ হোক। ঘরের সন্ধান করতে এলাম দশাশ্বমেঘ ঘাটের কাছে, ভাগ্যক্রমে একটি লজ পেয়েও গেলাম, বুকও করলাম দু দিনের জন্য। এবার হাঁটতে হাঁটতে এলাম দ্বারভাঙ্গা ঘাটের কাছে।
বেশ ক্ষাণিক্ষণ বসে চিন্তা করছি। ঘাটে অনেকেই আসছেন স্নান করতে। ফের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলাম। অনেকেই এড়িয়ে চলে গেলেন। একজন বয়স্ক মানুষকে ধরলাম। সোজা কাচুমাচু মুখ করে বললাম, বাবাজি একটা সমস্যায় পড়েছি, একটু হেল্প চাই। বাবাজি আমাকে ভালো করে দেখে বললেন, বাতাইয়ে।
আমি কলকাতা থেকে এসেছি। বিশ্বনাথ গলিতে কাপুর ভিলায় আছি। কিন্তু দু দিন ধরে অদ্ভুদ এক সমস্যায় পড়েছি। পুরো কথা শেষ করার আগে বাবাজি হাঁটতে শুরু করলেন। বুঝলাম ইনিও এড়িয়ে যাচ্ছেন। আমি বললাম বাবাজি প্লিজ বাতাইয়ে। বাবাজি বললেন, মেরে পিছু আইয়ে চুপচাপ। আমি কথা না বাড়িয়ে বাবাজির পিছু নিলাম, দ্বারভাঙ্গা ঘাটের পাশ দিয়ে সোজা খাড়াই সিঁড়ি উঠে গেছে। ওনার সঙ্গেই চললাম সিঁড়ি বেয়ে। ওঠার সময়ই ভালো করে চারপাশটা দেখতে শুরু করলেন বাবাজি।
সকাল দশটা। বাবাজির পিছু নিলাম, বেশ ক্ষাণিক্ষণ হাঁটার পর, ঢুকলাম আরও একটি পুরনো হাভেলিতে। বাবাজি এখানেই ভাড়া থাকেন। এখানে আরও অনেক ভাড়াটে রয়েছেন। এই হাভেলিও যে প্রায় একশো দেড়শো বছরের পুরনো তা বলাই যায়।
চারপাশ এতো ঘিঞ্জি, যে আলো ঘরের ভিতর ভালো করে প্রবেশ করে না। এখানকার প্রত্যেক বাসিন্দাই যে নিম্নবিত্ত তা বোঝা যায়, পরিবেশ দেখে। কেউ টুকটাক পুজো করে অর্থ উপার্জন করেন, কেউ নৌকা চালিয়ে, কেউবা রিক্সা।
বাবাজি জল বাতাসা দিলেন খেতে। আমার প্রয়োজন নেই বললেও, অতিথি সেবার অজুহাত দিয়ে কার্যত জোরই করলেন। আমি সেই আবেদন ফেলে দিলাম না।
এর পর বাবাজি যা ঘটনার কথা আমায় শোনালেন, তা শুনে আমার গা শিউরে উঠল। এক লহমায় মনে হল, আমার হৃদপিণ্ড থেকে রক্তের স্রোত আর মাথার দিকে যাচ্ছে না। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, এমন ভয়াবহতা আর নৃশংসতা যেন আমাকে কোনও দিন চাক্ষুষ করতে না হয়। সেই সঙ্গে এক অদ্ভুত ভয় আমার মাথার উপর চেপে বসল।
প্রায় বছর চল্লিশের আগের ঘটনা। কাপুর হাভেলি তখন ছিল মেহেতা হাভেলি। সেখানকার কিছু বাসিন্দা ছিল বিহার, গুজরাটি, পাঞ্জাবি এবং বাঙালি। প্রত্যেকেই ভাড়াটে।
মাস খানের ধরে এক দম্পতি ভাড়া নিয়েছিল, তারা এসেছিল রাজস্থান থেকে। দুজনেরই খুব কম বয়স। ছেলেটির নাম রতন সিং রাঠোর আর তাঁর স্ত্রীয়ের নাম ঝুমলি। কয়েক দিনের মধ্যেই হাভেলির প্রত্যেক বাসিন্দার সঙ্গে মিলে মিশে যায়, ওরা দুজনে। প্রচণ্ড হাসিখুশি আর মিশুকে মেজাজের হওয়ার দরুণ দুজনেরই কাজ পেতে অসুবিধা হয়নি। ছেলেটি একটি হোটেলে কাজ পায়, আর মেয়েটি একটি বেনারসী শাড়ি তৈরির কারখানায়। ওরা বাসিন্দাদের বলেছিল, এসেছে গুজরাট থেকে। তাই কেউ জানতো না ওরা দুজনেই রাজস্থানি।
বিষয়টি পুরোপুরি জানা যায় সেই বছরই হোলির সময়। আর সেই জানাটা প্রায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে গোটা কাশীতে। বাবাজি বললেন, হোলির দিন ছিল, ভোর পাঁচটা হবে, তিনি এসেছিলেন দ্বারভাঙ্গাঘাটে স্নান সারতে। হঠাৎ দেখলেন দশাশ্বমেধঘাটের কাছে কিছু লোকের জটলা। কৌতুলহল বশত বাবাজি যান তাঁদের কাছে, জানতে পারেন, বিশ্বনাথ গলির ভিতর মেহেতা হাভেলিতে প্রায় ১০০ লোক হামলা চালিয়েছে।
কাশীতে ভোর থেকে রাস্তায় লোকচলাচল শুরু হয় যায় বটে, তবে দিনের মতো এতো ভিড় থাকে। বাবাজি কৌতুহল নিয়েই মীর ঘাটের পাশ দিয়ে বিশ্বনাথ গলির রাস্তা ধরলেন, যাওয়ার পথেই থমকে যেতে হল তাঁকে। দশ বারোটি উন্মত্ত যুবক হাতে তলোয়ার নিয়ে, কী একটা জিনিসকে লাথি মারতে মারতে নিয়ে আসছে। ছেলেগুলি কাছে আসতেই ভ্রম কাটে বাবাজির, এতো কোনও যুবকের মুণ্ডু। এই দৃশ্য দেখে বেশ ক্ষণিক্ষণ রাস্তার মধ্যেই পাথর হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ঘটনাটি সারা বারাণসীতে ছড়িয়ে পড়তে বেশিক্ষণ সময় লাগেনি।
সারা কাশীতেই দাবানলের মতো খবর ছড়িয়ে পড়ল, দাঙ্গা লেগেছে। বিশ্বনাথ মন্দিরের কাছে একটি মসজিদ রয়েছে, সেখান থেকে পালে পালে লোকেরা বেরিয়ে পড়ল তলোয়ার নিয়ে। ঘটনা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মোড় নিল হিন্দু মুসলিমের দাঙ্গায়। বেশ কিছু ঘরে আগুন লাগানো হল, দুপক্ষেরই কিছু মানুষ মারা গেলেন। সেদিনই কাশীতে নামল সেনা, কার্ফু জারি করা হল।
সমস্ত কাশীর লোক তখন ঘরবন্দি। রাস্তাঘাট ফাঁকা, দু জনের বেশি লোক রাস্তায় বেরোলেই, সোজা গারদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আটকে রাখা হচ্ছে সপ্তাহ খানেক। প্রায় দশ দিন পর খবরের কাগজে আসল ঘটনা সামনে এলো।
মেহেতা হাভেলিতে গুজরাটের বাসিন্দা বলে যে দম্পতি এসেছিল, তাদের আসল বাড়ি ছিল রাজস্থানে। সেখানেই উচ্চ বংশের ছেলে রতনসিং। আর ঝুমলি নীচু জাতের।
দুজনে রাজস্থানে থাকতে পারবে না বলেই, ভিন রাজ্যে চলে আসে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে বিয়ে করে এখানে তারা থেকে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু দুজনেরই বাড়ির লোকেরা কোনও না কোনও সূত্রে জানতে পারে। হোলির দিন, রতনসিং ভোরবেলা গঙ্গার ঘাটে আসছিল স্নান করতে, মূল ফটকের সামনেই তাঁকে পাকড়াও করে তাঁর বাড়ির লোকেরা। কোনও কথা না শুনেই, এক কোপে তার মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়। তাঁর মুণ্ডু নিয়ে ফুটবল খেলতে খেলতে সোজা নিয়ে আসা হয় গঙ্গায়, আর একদল, তাঁর ধড়ের পায়ে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে আসে মণিকর্ণিকা ঘাটে, একটি জ্বলন্ত চিতায় তাঁকে ছুঁড়ে দেওয়া হয়।
আর মেয়েটির বাড়ির লোক, মেহেতা হাভেলির প্রত্যেক ঘরে তল্লাশি চালায়, অবশেষে মেয়েটিকে পায় তারা যে ঘরে ছিল। সেই ঘরের মধ্যেই তাঁকে টুকরো করা হয়। তারপর ঘরে থাকা কেরোসিন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর, হাভেলির প্রত্যেক বাসিন্দা রাতারাতি ঘর ছেড়ে পালায়।
পুরো ঘটনা সামনে আসতেই হিন্দু মোর্চা সমিতির প্রধান এবং মসজিদের ইমাম দুজনেই লজ্জিত বোধ করে, দুই পক্ষের মধ্যে অকাল হোলি খেলা হয় সম্প্রীতির জন্য। দুপক্ষই প্রতিজ্ঞা করে, এমন ঘটনায় তারা আর পা দেবে না।
প্রায় দিন পরনেরো কেটে গেছে ঘটনায়। পুলিশ রতনসিং ও ঝুমলির বাড়ির লোকসহ প্রায় একশো জনকে গ্রেফতার করে। ধীরে ধীরে মামলা ঠান্ডা হয়।
কিন্তু মেহেতা হাভেলিতে আর কেউ বাস করতে চায়নি। প্রায় দশ বছর বাড়িটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। আশে পাশের বাড়ির লোকেরাও বলতে শুরু করে রাত হলেই ওই বাড়ি থেকে কেমন অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়। খবর ছড়িয়ে পড়ে মেহেতা হাভেলি ভূতের বাড়ি।
দশ বছর বাদে এক পাঞ্জাবী, বেনারসী শাড়ি ব্যবসায়ী প্রেম কাপুর বাড়িটি জলের দরে কিনে নেয়। বিদ্যানন্দ সরস্বতীজিকে দিয়ে পুজো করানো হয়, সেই সময়, তিনি ছিলেন কাশীর সবচেয়ে বড় পণ্ডিত এবং অন্নপূর্ণা মন্দিরের প্রধান পূজারি। সেই পুজোর পর থেকে হাভেলি নিয়ে আর কোনও অদ্ভুত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে নতুন করে যে সমস্ত ভাড়াটেরা আসতেন, তাঁরা প্রায় এক থেকে দু মাসের মধ্যে ঘর বদল করতেন। তাঁরা কিছু না বললেও, গুজব ছড়িয়ে যায়, ভৌতিক বাড়ি।
তারপর থেকে পুরো ঘর সারানো রং করানো সব কিছুই হয়, কিন্তু ভাড়াটে আসে না। শুনেছি এই বছর দশেক হবে, কিছু লোক থাকে। আর অধিকাংশ ঘর কলকাতার একটি ব্যাঙ্ককে হোটেল করার জন্য ভাড়া দিয়েছে। আমি শুনেছিলাম বিদ্যানন্দজী পরামর্শ দিয়েছিলেন, যে ঘরটিতে ঘটনা ঘটেছে, সেটিকে যেন বন্ধ করে রাখা হয়। সেই থেকে ঘরটা বন্ধই রাখা আছে। প্রেম কাপুরের ছেলেই এখন বাড়ি ভাড়া, শাড়ির ব্যবসা চালান। কাশীতে ওদের প্রায় ৫টি এবং হাভেলি রয়েছে।
পুরো ঘটনা শোনার পর, আমার পা তখন কাঁপছে, দুপুর বারোটা বাজে, ঠান্ডার দাপট না থাকলেও, অদ্ভুত কাঁপুনি তখন আমাকে ঘিরে ধরেছে, বাবাজির হাভেলি থেকে কাপুর হাভেলি প্রায় ২০ মিনিটের রাস্তা হাঁটাপথে। মনের মধ্যে জোর কষে নিয়ে, এগোলাম, নতুন হোটেলে বায়না দেওয়া আছে, আজই, এখুনি চেঞ্জ করবো ঘর। ঘরের সামনে গিয়ে ক্লিনারকে খবর দিলাম।
ক্লিনার এলো, আমি চাবি দিয়ে বললাম, আমার যা মালপত্র আছে, সব বের করে আনো। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে বললাম, আমার সব মালপত্র বের করে আনে। তাঁর হাতে ৫০ টাকা দিয়ে বললাম তোমাদের মালিককে বলে দিও আমি চললাম। হাতে ঘরের চাবি দিয়ে, সোজা দশাশ্বমেধ ঘাটের হোটেল।
এখন বেশ কিছুটা স্বস্তি লাগছে, কিন্তু ঘটনার কথা মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু করলো। এমন সময়ই এক ভদ্রলোক, আমার কাছে এলেন, বললেন, আপনি কাপুর হাভেলিতে ছিলেন না! আমি বললাম হ্যাঁ। ভদ্রলোক বললেন, আমরাও ওখানে উঠেছিলাম, সাত দিনের জন্য এসেছি কাশীতে, ওখানেই উঠেছিলাম। চারদিন ছিলাম। আজই এখানে উঠলাম।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তা ছাড়লেন কেন? ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, একটা কথা বলবো কিছু মনে করবেন না।
বললাম, না। বলুন। আমাদের প্রথম দু দিন কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু আপনি ওই বাড়িতে আসার পর থেকেই কেমন গণ্ডগোল শুরু হয়। আপনার রুম থেকে অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। দু রাত ধরে কী করছিলেন বলুনতো? আরও কয়েকজন বোর্ডার ছিলেন, তারাও আজই ঘর ছেড়েছেন।
তারপর দেখলাম আপনিও ছাড়লেন। সবাই বলছিল, আপনি আসার পর থেকেই বিরক্তিকর সমস্যা ফেস করেছে সবাই। আপনি যেদিন জল খুলে চলে গেছিলেন? সেদিন আপনার নীচের তলার বোর্ডারের রুমের বিছানা ভিজে গেছিল। ছাদ ছুঁয়ে জল পড়েছে। মালিকের কাছে কমপ্লেনও করেছিল। তার উপর সারা রাত ধরে ধুপদাপ করে পায়চারি করেছেন। দশবার বাথরুমের গেছেন, দুমদাম করে দরজা বন্ধ করেছেন। এমন কথা সব বোর্ডাররা বলছিল।
আমি ভদ্রলোকটিকে কোনও উত্তর দিতে পারলাম না। এড়িয়ে চলে এলাম।