Breaking News

গুজরাট বেড়ানোর সেরা প্ল্যান, দেখে নিন

সুরাট বরোদা পাওয়াগড় আমেদাবাদ

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- গুজরাটের ব্যস্ত শহর সুরাট বা বরোদা দর্শন করে প্রাচীন শিল্পমন্ডিত জনপদ পাওয়াগড়ে এসে দুদিন কাটাতে পারেন। পাওয়াগড় থেকে আমেদাবাদ গান্ধীনগর হয়ে কলকাতা।

সুরাট- তাপ্তি নদীর তীরে সুরাট গুজরাটের এক ব্যস্ততম শহর। বস্ত্র আর হীরের ব্যবসার জন্য এই শহর বিখ্যাত। দিনে দিনে দেখে নেওয়া যায় শহরের একাধিক দর্শনীয় স্থান। শহরটা ঘুরে দেখতে পারেন অটোতে বা গাড়িতে। শহরের প্রাণকেন্দ্র গান্ধীবাগ বা রানিবাগ। ১৮৭০ সালে তৈরি এই উদ্যানে ছড়িয়ে রয়েছে বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে। ভরিয়ালি বাজারে দেখে নিন মিরজাম শামি রোজা মসজিদ। মসজিদের গায়ে বাহারি শিল্পকর্মের ছোঁয়া আজও দেখা যায়। ডাচ গার্ডেনে রয়েছে পর্তুগিজদের সমাধিক্ষেত্র। এখানের সমাধিসৌধগুলি শিল্পমণ্ডিত। ভেতরে প্রবেশ ও ছবিও তুলতে পারেন। ডাচ গার্ডেন ১৬ শতক জায়গা জুড়ে তৈরি।

শহরের একপ্রান্তে কান্তেশ্বর শিবমন্দিরটিও বেশ প্রাচীন। স্থানীয় মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সবুজের মাধে গড়ে উঠেছে স্বামীনারায়ণ মন্দির। বিরাট মন্দির চত্বর। এখানকার স্পিরিচ্যুয়াল মিউজিয়াম খোলা থাকে সাড়ে তিনটে থেকে সন্ধে সাতটা পর্যন্ত। তাপ্তি নদীর ধারে দেখুন ইসকন মন্দির। পোশাকি নাম শ্রীরাধা দামোদর মন্দির। মন্দিরের মধ্যে রঙিন চিত্রকলার কাজ আকর্ষক। এই মন্দিরের কাছেই রামবাড়ি আশ্রমে রয়েছে বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দিরগুচ্ছ। সুরাটের আর এক বিখ্যাত মন্দির অম্বানিনিকেতন অম্বাজিমন্দির। এখানেও দিনভর পুজো দিতে পুণ্যার্থীর ঢল নামে। অবশ্যই দেখে নিন সুরাটের বিখ্যাত টেক্সটাইল মার্কেট।

সুরাট থেকে ১৬ কিমি দূরে রয়েছে বিখ্যাত ডুমাস সমুদ্র সৈকত। অনেকে এই সৈকতকে ভুতুড়ে সৈকতও বলে থাকেন। এই সৈকতকে ঘিরে রয়েছে, নানা ভৌতিক গল্পকথা। সুরাট বেড়াতে মোটামুটি ৬ ঘণ্টা সময় লাগবে।

কীভাবে যাবেন- হাওড়া থেকে ট্রেন যাচ্ছে আমেদাবাদ এক্সপ্রেস, পোরবন্দর এক্সপ্রেসসহ কিছু ট্রেন। সুরাটের রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড কাছাকাছি। এখান থেকে গুজরাটের নানা জায়গার বাস পাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন– সুরাট স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডের কাছে অনেক বেসরকারি হোটেল রয়েছে বিভিন্ন মানের। বরোদা- বরোদা শহরের বর্তমান নাম ভদোদারা হলেও পুরনো নামের চল এখনও রয়েছে। গায়কোয়াড় রাজবংশের রেজারা বরোদাকে বেশ যত্ন নিয়ে সাজিয়ে তুলেছিলেন। শহরের পাশ দিয়ে বইছে বিশ্বামিত্র নদ। বরোদাকে আধুনিক করে তুলেছিলেন তৃতীয় সায়াজিরাও। বরোদাকে গুজরাটের সাংস্কৃতিক নগরিও বলা হয়। বরোদা ঘুরে দেখতে সময় লাগে মোটামুটি পাঁচ থেকে ৬ ঘণ্টা।

আরও পড়ুন- ছোট ছুটির খোঁজে দেখে নিন ওডিশার অফবিট জায়গা

বরোদায় প্রথমেই দেখে নিন গায়কোয়াড় রাজবাড়ি বা লক্ষ্মীবিলাস প্রাসাদ। ঝাঁ চকচকে বিশাল প্রাসাদের একাংশে বিশেষ অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা যায়, তবে সোমবার বন্ধ। ইন্দো সেরাসেনিক ঘরানায় তৈরি এই প্রাসাদ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। প্রাসাদের কাছে রয়েছে মহারাজা ফতে সিং সংগ্রহশালা। প্রবেশের সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।

সুর সরোবর জলাশয়ের কাছেই রয়েছে ন্যায় মন্দির। এটি বরোদার আদালত। ভবনের গঠনশৈলী দেখার মতো। সুর সরোবরের মাঝে বিশাল এক মহাদেব মূর্তি রয়েছে, জলাশয়টি বেশ প্রাচীন। হাজিরা টম্ব, বানানো হয়েছিল কুতুবুদ্দিন খানের স্মৃতির উদ্দেশে, তাঁর সমাধিও রয়েছে এখানে। দেখে নিন কীর্তিমন্দির, এটি তৈরি করিয়েছিলেন তৃতীয় সায়াজিরাও। এখানে গায়কোয়াড় রাজারানিদের মূর্তি রয়েছে। ভেতরে নিয়মিত প্রার্থনা হয়। বরোদার মিলিটারি ক্যাম্পে রয়েছে ই এম ই শিবের মন্দির। শহরের মাঝেই রয়েছে সায়াজিবাগ, বিশাল উদ্যান। বাগানের একাংশে টয়ট্রেন, চিড়িয়াখানা, প্ল্যানেটোরিয়াম। এর আগে দেখে নিতে পারেন বরোদা মিউজিয়াম। এটিও দেখার মতো।

কীভাবে যাবেন- সুরাট থেকে বরোদা ১৬০ কিমি। সরাসরি বাস রয়েছে। হাওড়া থেকে পোরবন্দর ও আমেদাবাদ এক্সপ্রেস এখানে থামে।

থাকবেন কোথায়– বরোদার মিয়াজিগঞ্জ ও প্রতাপগঞ্জে অনেক হোটেল রয়েছে। তার মধ্যে হোটেল যুবরাজ, হোটেল তুলসী, হোটেল চন্দন, হোটেল প্রুডেন্ট।

পাওয়াগড়- হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত পাওয়াগড় এখধারে যেমন তীর্থক্ষেত্র তেমন এটি ঐতিহাসিক জনপদ। পাওয়াগড়ের প্রবেশদ্বার হল চম্পানের। একটি ছোট গ্রাম্য জনপদ। এখানেই ছিল সুলতান মহম্মদ বেগাড়ার রাজধানী। তার ফেলে আসা ইতিহাসের অংশ এখনও রয়েছে। তক চম্পানেরকে চিনতো মহম্মদবাদ। গ্রামের প্রবেশ পথের বাঁদিকে রয়েছে প্রচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। দুর্গের প্রবেশের ডানদিকে বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে অটো ভাড়া করে দেখে নেওয়া যায় ঐতিহাসিক সৌধ্য। সময় লাগবে ঘণ্টা তিনেক।

চবেড়া, চৌহান বংশের রাজাদের পর ১৮৮৪ সালে সুলতান মহম্মদ বেগাড়ার অধীনে আসে এই জনপদ। মোঘলরাতো দখল করেইছিল, ব্রিটিশদের হাত থেকেও বাঁচেনি চম্পানের। দুর্গের প্রবেশ পথে রয়েছে সাহের কি মসজিদ। এখানের সমস্ত মসজিদেই বেশ উঁচু মিনার দেখা যায়। ১৫ শতকে তৈরি জামি মসজিদ। বড় তালাও জলাশয়ের পাশে রয়েছে কবুতরখানা প্রাসাদ। এখানে গ্রীষ্মকালে রাজপরিবেরের লোকেরা সময় কাটাতেন। একে একে দেখুন নাগিনা মসজিদ, কেভাড়া মসজিদ, দিল্লি দরওয়াজা, জৈনমন্দির, গেবনশাহ এভি কুয়া। চম্পানেরের মতো পাওয়াগড় পাহাড়ে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।

আরও পড়ুন- সপ্তাহ শেষে অল্প খরচে দেখে নিন অসাধারণ অফবিট জায়গা, উইকেন্ড স্পেশাল

চম্পানের থেকে পাহাড় ঘুরে ৫ কিমি পথ চলে গিয়েছে মাচিতে। সেখান থেকে কেবলকারে চড়ে পৌঁছে যান পাহাড়ের চূড়ায়। রোপওয়ে চালু থাকে সকাল আটটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ওপরে দেখে নিন লাকুলিসা পশুপতিনাথ মন্দির, দিগম্বর জৈন মন্দির, বিখ্যাত সতীপীঠ মহাকালিকা মন্দির। পাওয়াগড়ের পাহাড়ে মনোরম পরিবেশে দু তিনদিন অনায়াসে কাটানো যেতে পারে।

কীভাবে যাবেন বরোদা থেকে চম্পানের যেতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাস রয়েছে দূরত্ব প্রায় ৫০ কিমি। চম্পানের থেকে মাচি যেতে শেয়ার জিপ পাওয়া যায় বাসস্ট্যান্ডের সামনে। চম্পানের থেকে আমেদাবাদ ১৬৪ কিমি।

থাকবেন কোথায়- পাওয়াগড় পাহাড়ে রয়েছে গুজরাট ট্যুরিজিমের আবাসস্থল। এখানে থাকতে হলে আগাম হোটেল বুক করে যআওয়া ভালো।

আমেদাবাদ- সবরমতী নদীর ধারে আমেদাবাদ শহর তৈরি হয়েছিল ১৪ শতকে। ইতিহাসের নানা ঘটনার সাক্ষী এই শহর। সুলতান আহমেদ শাহ ছিলেন আমেদাবাদের প্রতিষ্ঠাতা। তাই শহরের নামও আহমেদ শাহের নামে। দিনে দিনে ঘুরে দেখে নেওয়া যেতে পারে শহরটিকে। মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বাস ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে। বাস ছাড়ে ও বুকিং হয়, লালদরজা সিটি বাসস্ট্যান্ড থেকে । চাইলে নিজেরা অটো বা গাড়ি ভাড়া করেও দেখে নেওয়া যায়।

চতুর্দশ শতকে কুতুবুদ্দিনের রাজত্বকালে তৈরি হয় কাংকারিয়া হ্রদ। হ্রদের জলে বোটিং করা যায়। এই পথেই দেখে নিতে পারেন নেহরু বালভাটিকা উদ্যান, চিড়িয়াখানা। শহরের বাইরে রয়েছে ইসকন মন্দির। অবশ্যই দেখে নিন সবরমতী নদীর ধারে গান্ধী আশ্রম। এখানে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের শো হয়। একে একে দেখে নিন সর্দার প্যাটেল মিউজিয়াম, ক্যালিকো মিউজিয়াম, জামি সিং জৈন মন্দির, স্বামী নারায়ণ মন্দির, জুমা মসজিদ। মানেকচকে দেখুন রানি হাজিরা সৌধ। রানি সিপরি মসজিদ। শহরের কেন্দ্রে ভদ্রফোর্ট লাগোয়া ভদ্রকালী মন্দির। আমেদাবাদ থেকে ২৫ কিমি দূরে রাজ্যের রাজধানী গান্ধীনগরে দেখুন অক্ষরধাম মন্দির।

আপনি যদি বেড়াতে ভালোবাসেন সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন তাহলে জুড়ে যান আমাদের ফেসবুক গ্রুপ ভ্রমণ আড্ডা-তে

কীভাবে যাবেন- চম্পানের থেকে আমেদাবাদ ১৬৪ কিমি, বাসে যেতে পারেন। আবার বরোদা এসে বাস বদল করে আমেদাবাদ যাওয়া যায়। আমেদাবাদ স্টেশন থেকে ২ কিমি দূরে গীতামন্দির সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড।

কোথায় থাকবেন- গান্ধী আশ্রমের কাছে গুজরাট ট্যুরিজিমের হোটেল রয়েছে। স্টেশনের কাছে অনেক বেসরকারি হোটেল রয়েছে। হোটেল রাজ প্যালেস, হোটেল সম্মতি, হোটেল শকুন্ত, হোটেল এক্সেল, হোটেল সবর ইন।

সোমনাথ পোরবন্দর দ্বারকা ভুজ

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

পাশের রাজ্যেই রয়েছে প্রকৃতির এক আদিম জায়গা, বেড়িয়ে আসুন চুপিসারে

স্বাতী চ্যাটার্জি- কাশ্মীর, কেরালা, দক্ষিণভারত, উত্তরভারতসহ গোটা ভারততো বেড়াবেন। আমাদের দেশে দেখার জায়গা অনেক। প্রাকৃতি, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!