ভূমিকা: গুজরাটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান লোথাল, যা সিন্ধু সভ্যতার একটি প্রধান নগরী হিসেবে পরিচিত। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৪০০ অব্দে নির্মিত এই শহর ছিল বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সমুদ্রবন্দর। লোথাল নামটির অর্থ ‘মৃতের ঢিবি’, যা প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের সময় প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন দ্বারা নিশ্চিত হয়েছে।
ইতিহাস ও আবিষ্কার: ১৯৫৪ সালে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ (ASI) লোথাল শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করে। এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র, যেখানে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী যেমন রত্ন, তামা, হাতির দাঁত, এবং মনোক্রোমিক মৃৎপাত্র তৈরি ও রপ্তানি করা হতো। এখানকার উন্নত নৌবন্দরই প্রমাণ করে যে, সে সময়ের মানুষ সমুদ্রপথে বাণিজ্যে পারদর্শী ছিল।
স্থাপত্য ও পরিকল্পনা: লোথাল নগরটি সুচারুভাবে পরিকল্পিত ছিল। এর বিস্তৃত নালা-নর্দমা ব্যবস্থা, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, এবং বৃহৎ আকারের গুদাম প্রমাণ করে যে এটি ছিল একটি সুসংগঠিত শহর। সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো এর ডকইয়ার্ড, যা এক সময় নৌযানের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণ করত।
বাণিজ্য ও অর্থনীতি: লোথাল ভারত, মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক), এবং পারস্য উপসাগরের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য করত। এখানকার প্রধান পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল কাঁসা, শেল, পুঁতি, তুলা ও মহামূল্যবান পাথর। শহরটির সমৃদ্ধি তখনকার বাণিজ্যিক দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার নিদর্শন বহন করে।
উপসংহার: লোথাল শুধুমাত্র একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নয়, এটি আমাদের অতীতের এক গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন সমুদ্র বাণিজ্য ও নগর পরিকল্পনার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
