Breaking News

অপরূপ সৌন্দর্যের খনি দেবভূমি গাড়োয়াল

উখিমঠ সারিগ্রাম দেওরিয়াতাল চোপতা তুঙ্গনাথ চন্দ্রশীলা দোগলভিটা

উখিমঠ ছোট্ট জনপদ উখিমঠ মন্দাকিনির বামপাড়ে। গুপ্তকাশীর ঠিক বিপরীত দিকে, কিন্তু এই শহর কেদারনাথ যাওয়ার বাস রাস্তায় পড়ে না। ফলে পর্যটকদের বাড়াবাড়ি ভিড় উখিমঠে কখনওই হয় না। বাস স্ট্যান্ডকে ঘিরে বাজার হোটেল স্কুল ইত্যাদি। কিন্তু এই কর্মব্যস্ত অঞ্চল একটু পেরিয়ে গেলেই হিমালয়ের অন্তরঙ্গ রূপ- আকাশ জোড়া বরফে ঢাকা পাহাড়। সবুজ ধাপকাটা খেত, বহু নীচ দিয়ে বয়ে চলা মন্দাকিনি আর ভোরবেলা অজস্র পাখির কুজন। তবে উঠিমঠের আকর্ষণ শুধু প্রকৃতিক সৌন্দর্যে শেষ নয়। তীর্থক্ষেত্র হিসেবে উখিমঠের স্থান গাড়োয়ালের প্রথম সারিতে। স্বয়ং কেদারনাথ ও মদমহেশ্বর শীতের ছয় মাস এখানকার মন্দিরে অধিষ্ঠান করেন।

কীভাবে যাবেন- হরিদ্বার থেকে সরাসরি উখিমঠ যাওয়ার বাস ছাড়ে। এ ছাড়া ভাড়ার গাড়ি বা শেয়ার জিপ নিতে পারেন। আবার কেদারনাথ গামী যে কোনও গাড়িতে কুণ্ড এসে সেখান থেকে শেয়ার জিপে সহজে উখিমঠ পৌঁছতে পারেন। কুণ্ড থেকে উখিমঠ মাত্র ৫ কিমি। হরিদ্বার থেকে উখিমঠ যাওয়ার সুমো বুক করতে পারেন। এই পথে চাইলে শ্রীনগর, দেবপ্রয়াগ বা রুদ্রপ্রয়াগে একরাত কাটাতে পারেন। রুদ্রপ্রয়াগ থেকে উখি মঠ মাত্র দেড় ঘণ্টার পথ।

কোথায় থাকবেন- উখিমঠে গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউস রয়েছে। এছাড়া ঘরোয়া পরিবেশে থাকার জন্য রয়েছে মৈঠানি লজ বা ভারত সেবাশ্রম সংঘ ধর্মশালা। ভারতর সেবাশ্রম সংঘের স্থান নির্বাচন নিখুঁত। গুপ্ত কাশী বা রুদ্রপ্রয়াগ থেকে কুণ্ড হয়ে যে নির্জন বাস রাস্তাটি চোপতা বা বদ্রীনারায়ণ গিয়েছে তার থেকে একটা আঁকাবাঁকা শাখা পথ উঠে গেছে আধ কিমি দূরে উখিমঠ বাজারে। ভারত সেবাশ্রম সংঘ ঠিক এই মোড়ে আশ্রম গড়েছেন। কোলাহল নেই, অথচ মোটরপথের সুবিধা রয়েছে। জায়গাটির প্রকৃতিক সৌন্দর্য অনাবিল। তুষারশৃঙ্গ ও মন্দাকিনি নদী দুই দেখা যায়। এখানকার বাকি থাকার জায়গাগুলি নামে হোটেল হলেও বাস্তবে চটি। এদের মধ্যে মঙ্গল সিঙের চটি অধিকাংশ বাঙালি বেশি পছন্দ করেন।

বেড়াতে ও আড্ডা দিতে ভালোবাসেন? তাহলে জুড়ে যান আমাদের ফেসবুক গ্রুপে ভ্রমণ আড্ডা

সারিগ্রাম- দেওরিয়াতাল- উখিমঠে একটা রাত কাটিয়ে ভোরবেলা চলুন দেওরিয়াতালে। জিপে করে ১২ কিমি দূরে সারিগ্রাম পৌঁছে যাবেন আধ ঘণ্টায়। হিমালয়ের কোলে শহুরে সভ্যতা থেকে বহু দূরে সারিগ্রামে একদিন কাটালে মন্দ হয় না। অপরূপা সারিগ্রাম থেকে দেখা যায় তুঙ্গনাথ ও চন্দ্রশীলা। থাকতে পারেন লখপত সিঙের দেওরিয়া লজে। না থাকতে চাইলে সোজা যেতে পারেন আড়াই কিমি দূরে বাঁঝধানো চড়াই রাস্তা দিয়ে হাল্কা ট্রেক করে ২৪৪৩ মিটার উচ্চতায় নীল সরোবর দেওরিয়াতালে।

আকাশ পরিষ্কার থাকলে উত্তর দিগন্তে চোখে পড়বে সারিবদ্ধ ভ্রাতৃখুন্টা, কেদারনাথ, সুমেরু, খরচাকুণ্ড, মন্দাকিনি, চৌখাম্বা। দেওরিয়ালে তালে কাচের মতো স্বচ্ছ জলে, চৌখাম্বার প্রতিচ্ছবি দেখার স্মৃতি জীবনে মোছার নয়। হাতে সময় থাকলে এবং একটু শারীরিক কষ্ট সহ্য করার মানসিকতা থাকলে থাকতে পারেন টেন্টে। একদম তালের পাশে। লখপত সিং ব্যবস্থা করে দেবেন। অথবা সরাসরি দেওরিয়া তালে গিয়ে ওখানকার অস্থায়ী ছাউনিতে রচপাল সিঙের সঙ্গে কথা বলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।

চোপতা- দেওরিয়াতাল থেকে সারিগ্রাম নেমে আসতে ঘণ্টাখানেকের বেশি লাগে না। ফিরে এসে জিপ ভাড়া করে চলে আসুন সোজা চোপতায়। উচ্চতা ৯৫০০ ফুট। এখানে কিছু থাকার জায়গা রয়েছে, তবে মঙ্গল সিঙের চটি অনেকে পছন্দ করেন। এ ছাড়া গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের ট্যুরিস্ট লজ। এ ছাড়া হোটেল বুগিয়াল।

এদের কয়েকটি ঘর রয়েছে রাস্তা থেকে উঁচুতে জঙ্গলের ভিতরে। ঠিক পিছন দিয়ে উঠে গেছে তুঙ্গনাথ যাওয়ার বাঁধানো রাস্তা। চোপতা তুঙ্গনাথে ইলেক্ট্রিসিটি নেই। তবে চোপতার কয়েকটি হোটেলে সোলার লাইট আছে। বড় রাস্তা থেকে একটু নেমে ঘুরে আসতে পারেন সামনের বুগিয়াল বা তৃণক্ষেত্র। সবুজ কার্পেটের মতো তৃণভূমিতে মেষপালক গুর্জরদের জীবনযাত্রা।

চটপট বানিয়ে ফেলুন রাজস্থানের সফরসূচি

তুঙ্গনাথ চন্দ্রশীলা- পরের দিন সকালে ট্রেক শুরু করুন তুঙ্গনাথের উদ্দেশে। পঞ্চকেদারের মধ্যে উচ্চতম ১২৭৭৬ ফুট। এবং সুন্দরতম এই তুঙ্গনাথ আবার বাসপথ থেকে এর দূরত্ব অনেক কম। মাত্র প্রায় চার কিলোমিটার। তবে একটু চড়াই। উচ্চতার কারণে অনেকে তুঙ্গনাথে রাতে না থেকে চোপতায় ফিরে আসেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনার চন্দ্রশীলা দেখা বাকি থেকে যাবে। আর রাতে থাকার ইচ্ছে থাকলে ধীরে ধীরে থেমে থেমে চলতে হবে। পথ কষ্টসাধ্য হলেও অসাধারণ, মাঝে মাঝে অসমান বাঁধানো পথের ধারে ছোট চায়ের দোকান, অল্প বিরাম নিতে পারেন। আকাশ পরিষ্কার থাকলে আপনার চোখের সামনে হিমালয়ের অজস্র জানা অজানা তুষারশৃঙ্গ।

চলুন মেঘ সূর্যের দেশ অরুণাচল

অতিরিক্ত মালপত্র অবশ্যই রেখে আসবেন, নামমাত্র ভাড়ায় চোপতার হোটেলে বা চটিতে। তবে মনে রাখবেন, তুঙ্গনাথে শীত মারাত্মক, তার উপর প্রবল হাওয়া। ফলে গরমের জামাকাপড় যেন কম না থাকে। এ ছাড়া এপথে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হয়। তাই বর্ষাতি সঙ্গে রাখবেন। আর চোপতার কোনও দোকান থেকে ভাড়া করে নিতে পারেন হাঁটার লাঠি। আপনার সামর্থ্য অনুসারে দেড় থেকে ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারেন তুঙ্গনাথ।

মন্দিরের কাছে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে রাত কাটানোর সাধারণ কয়েকটি চটি রয়েছে। এদের মধ্যে বচ্চন সিঙের চটি শ্রদ্ধেয় ঊমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আমাল থেকেই বাঙালিদের কাছে প্রিয়। চটিগুলিতে কমন বাথরুমই রয়েছে। অ্যাটাচড বাথরুম চাইলে থাকতে পারেন মন্দির থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে দেবলোক হোটেলে। থাকা খাওয়া মোটামুটি। মালপত্র রেখে প্রথমেই দেখে নিন মন্দির। কেদারখণ্ডের অন্য সমস্ত মন্দিরের মতো গঠনশৈলী। সেই ওডিশা স্থাপত্যের ধাঁচ। সামনে নন্দীমূর্তি। ভিতরে আলো আঁধারিতে পঞ্চকেদার, শঙ্করাচার্য, ব্যসদেব, শিবের মূর্তি রয়েছে।

ছোট ছুটির খোঁজে ওডিশার অফবিট জায়গা

তুঙ্গনাথে রাত কাটিয়ে পরের দিন ভোরে রাত থাকতেই বেরিয়ে পড়ুন, শ্রীরামচন্দ্রের তপস্যাভূমি চন্দ্রশীলার উদ্দেশে। চন্দ্রশীলা তুঙ্গনাথ থেকে মাত্র এক কিলোমিটার। কিন্তু ভালো চড়াই রয়েছে। কাজেই সময়ে না বেরোলে সূর্যোদয় ভালো করে দেখা সম্ভব নয়। পারলে স্থানীয় কাউকে পথ দেখানোর জন্য সঙ্গে নিতে পারেন। আর টর্চ ও লাঠি যেন সঙ্গে থাকে।

আকাশ পরিষ্কার থাকলে চন্দ্রশীলা থেকে দেখতে পাবেন চৌখাম্বা, গঙ্গোত্রী, কেদারনাথ, কেদারডোম, বন্দরপুঞ্জ, নীলকণ্ঠ, হাতি, ঘড়ি, ত্রিশূল, গৌরীশঙ্কর, যোগিন, সুমেরু, দুনাগিরি, নন্দাদেবী, নন্দাঘুন্টিসহ গাড়োয়াল ও কুমায়ুন হিমালয়ের অজস্র তুষারশৃঙ্গ।

দোগলভিটা- চোপতা থেকে ফেরার পথে সোজা হরিদ্বার নেমে আসতে পারেন বা একটা রাত কাটাতেই পারেন কুণ্ড, গুপ্তকাশী, চন্দ্রপুরী, সিয়ালসোর বা দোগলভিটায়। চোপতা থেকে উখিমঠ যাওয়ার পথে আট কিমি দূরে দোগলভিটায় একটা রাত কাটাতে পারেন। নিঝুম উপত্যকা। ঘন জঙ্গল, সবুজ বুগিয়াল, ছোট্ট ঝরনা, সাদা পাহাড়, সবই মিলবে এখানে।

আগে এখানে একটি পি ডব্লিউ ডির বাংলো ছিল বর্তমানে কয়েকটি লজ রয়েছে। কুণ্ড থেকে আট কিমি দূরে রুদ্রপ্রয়াগ যাওয়ার পথের পাশে সিয়ালসোরেও রাত কাটাতে পারেন। সিয়ালসোরে থাকার জন্য গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের রেস্ট হাউস রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি সাধারণ হোটেলও রয়েছে।

আরও পড়ুনরুদ্রপ্রয়াগ চন্দ্রপুরী সিয়ালসোর কেদারনাথ

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

খুব সহজে আমেরিকার নাগরিক হওয়ার পথ ‘ডঙ্কি রুট’- এক অজানা কাহিনি

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- আমেরিকা, স্বপ্নের দেশ। একবার পৌঁছতে পারলেই একটা জীবন পরিপূর্ণ। অর্থ, আভিজাত্য, বৈভব, সামাজিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!