রাজস্থানের উদয়পুর শহরের প্রায় ২২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত একলিঙ্গজি মন্দির শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান নয়, এটি রাজস্থানের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ। প্রাচীন এই মন্দিরটি ভগবান শিবকে উৎসর্গীকৃত এবং এটি মারওয়ার রাজ্যের শাসকদের কুলদেবতা হিসেবে পরিচিত।
মন্দিরের ইতিহাস
একলিঙ্গজি মন্দিরের ইতিহাস প্রায় ৮ম শতাব্দীতে ফিরে যায়। এটি রাজস্থানের মেবার রাজ্যের শাসক বাপ্পা রাওয়াল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে মন্দিরটি বিভিন্ন রাজা ও সম্রাটদের দ্বারা সংস্কার ও সম্প্রসারিত হয়। মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের নাগরা স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম উৎকৃষ্ট নিদর্শন। মন্দিরের প্রধান গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গটি চতুর্মুখী, যা চারটি দিকের প্রতীক হিসেবে শিবের সর্বত্রব্যাপী সত্তাকে প্রকাশ করে।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
মন্দির চত্বরটি মার্বেল ও গ্রানাইট পাথরের সংমিশ্রণে নির্মিত। এখানে একাধিক ছোট বড় মন্দির রয়েছে, যা বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতি উৎসর্গীকৃত। প্রধান মন্দিরের গর্ভগৃহে অবস্থিত শিবলিঙ্গটি অতি বিখ্যাত। মন্দিরের চারপাশে মনোরম খোদাই করা পিলার, তোরণ এবং কারুকার্য মুগ্ধ করে। মন্দিরের সৌন্দর্য এবং তার ইতিহাস দেখলে রাজপুত যুগের স্থাপত্য ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জাগে।
উৎসব ও আচার
প্রতি বছর মহাশিবরাত্রি এবং কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় একলিঙ্গজি মন্দিরে বিশেষ পূজা ও উৎসব আয়োজন করা হয়। মহাশিবরাত্রির সময় মন্দিরে ভক্তদের ঢল নামে এবং দিনব্যাপী ভজন ও কীর্তনের আয়োজন করা হয়।
কলকাতা থেকে একলিঙ্গজি মন্দির ভ্রমণের যোগাযোগ ব্যবস্থা
কলকাতা থেকে উদয়পুর হয়ে একলিঙ্গজি মন্দিরে পৌঁছানো সম্ভব। যাতায়াতের জন্য নীচের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করতে পারেন:
বিমানপথ:
কলকাতা থেকে উদয়পুরের মহারানা প্রতাপ বিমানবন্দর পর্যন্ত সরাসরি বা সংযোগ ফ্লাইটে যাত্রা করতে পারেন। বিমানবন্দর থেকে মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। ট্যাক্সি বা বাসে সহজেই পৌঁছানো যায়।
রেলপথ:
কলকাতা থেকে উদয়পুর সিটি রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনে যাত্রা করতে পারেন। উদয়পুর থেকে একলিঙ্গজি মন্দিরে ট্যাক্সি বা লোকাল বাস পাওয়া যায়।
সড়কপথ:
উদয়পুর থেকে একলিঙ্গজি মন্দির সড়কপথে প্রায় ৩০ মিনিটের দূরত্বে। স্থানীয় ট্যাক্সি বা প্রাইভেট ভাড়া গাড়িতে পৌঁছানো সম্ভব।
মন্দিরের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
নাগদা মন্দির: একলিঙ্গজি মন্দিরের কাছাকাছি অবস্থিত এবং এটি প্রাচীন সোলাঙ্কি স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত।
উদয়পুরের পিচোলা লেক: শহরের অন্যতম আকর্ষণ এবং নৌকাভ্রমণের জন্য বিখ্যাত।
সাজ্জনগড় প্যালেস: মেবার রাজাদের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ, যেখান থেকে সূর্যাস্তের অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
ভ্রমণ পরামর্শ
পর্যটন মৌসুম: অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় মন্দির পরিদর্শনের জন্য উপযুক্ত।
থাকার ব্যবস্থা: উদয়পুর শহরে বিভিন্ন বাজেটের হোটেল ও রিসর্ট সহজলভ্য।
খাবার: রাজস্থানি খাবারের স্বাদ নিতে উদয়পুরের স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলি অবশ্যই পরিদর্শন করুন।
উপসংহার
একলিঙ্গজি মন্দিরের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব রাজস্থানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ভক্তি, সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যের অপূর্ব সমন্বয়। কলকাতা থেকে সঠিক ভ্রমণ পরিকল্পনা করে আপনি মন্দিরের আধ্যাত্মিকতা এবং রাজস্থানের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন।
