বাংরিপোশি-সিমলিপাল-কেওনঝড়-সম্বলপুর-নৃসিংহনাথ
বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য ওডিশা। সমুদ্র, পাহাড়, অরণ্য এবং দেবস্থান নিয়ে পর্যটকদের হট ডেস্টিনেশন। পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগর আর পশ্চিমে পূর্বঘাট পর্বতমালা। ওডিশায় প্রকৃতিক বৈচিত্র যেমন রয়েছে, তেমনই রঙিন করে রেখেছে ৬২ উপজাতির মানুষ। সারা বছর জুড়ে নানা উতসবে রঙ্গিন হয়ে থাকে এ রাজ্য। পুরীর রথযাত্রা, কোনারক উত্সব, বিচ ফেস্টিভ্যালে মেতে ওঠেন স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক স্তরের পর্যটকেরা। ওডিশার হস্তশিল্প দেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে বিদেশেও সমাদৃত। কটকি, সমন্বলপুরী তাঁতের পাশাপাশি, পুরীর ঝিনুক, শঙ্খশিল্প, রঘুরাজপুরের কাঠখোদাই, পিপলির অ্যাপ্লিকের খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
বাংরিপোশি
সিমলিপাল যেতে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপরেই পথে পড়বে বাংরিপোশি। ফলে সিমলিপল যাওয়ার পথে বাংরিপোশিতে একটা রাত কাটানো যেতেই পারে। এই অঞ্চলে মূলত আদিবাসীদের বাস। এখান দিয়ে বয়ে চলেছে ওডিশার বিখ্যাত নদী বুড়িবালাম। চারদিকেো পাহাড়ি টিলা আর চোখ জুড়নো সবুজ মনকে শান্ত করে তোলে। হাতে সময় থাকলে ৪ কিমি দূরে দেখে নিতে পারেন বনদুর্গার মন্দির, ২ কিমি দূরে ঠাকুরানি পাহাড়। একটি প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে দেখে নিন ১৪ কিমি দূরে কানচিন্দা। বাংরিপোশি পৌঁছনোর সহজ উপায় হাওড়া থেকে ২৩২ কিমি দূরে ট্রেনপথে বালেশ্বর। বালেশ্বর থেকে বাসে বা গাড়িতে ৬০ কিমি দূরে বারিপদা। বারিপদা থেকে আরও ৩৫ কিমি দূরে বাংরিপোশি।
ওডিশা সরকারের বনবিভাগের বাংলোগুলোয় থাকতে হলে যাওয়ার অন্তত একমাস আগে যোগাযোগ করুন।
সিমলিপাল অভয়ারণ্য
ওডিশার এক চিত্তেকর্ষক অভয়ারণ্য সিমলিপাল। মযুরভঞ্জ জেলায় সবুজে মোড়া পাহাড়ি টিলায় ঘেরা বন্য-আবাস। বাংরিপোশি থেকে ৫৯ কিলোমিটার সড়কপথ ও বাসে বা গাড়িতে পৌঁছতে পারেন। সিমলিপালের মূল পরিচিতি ব্যাঘ্র প্রকল্প। বনভূমি ছড়িয়ে রয়েছে ২৭৫০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে। এখানে হাজারেরও বেশি প্রজাতির গাছ রয়েছে, তার মধ্যে শতাধিক প্রজাতির অর্কিড। বাঘ, হাতি, লেপার্ড, সম্বর, স্পটেড হরিণ, বার্কিং হরিণ, মাউস হরিণ, ময়ূর, ময়না, হর্নবিল ইত্যাদি। পাশাপাশি জঙ্গলের বুক চিরে বয়ে চলেছে বুধবলঙ্গা, খৈরি, সালন্দি, পলপলা। রয়েছে দুটি জলপ্পপাত বরেহপানি এবং জোরান্ডা।
ওডিশার সমস্ত জঙ্গলে ম্যালেরিয়া মশার উপদ্রব। মশার হাত থেকে বাঁচতে ক্রিম এবং ডাক্তারের পরামর্শে ম্যালেরিয়ার ওষুধ সঙ্গে রাখুন। জল পরিস্রুত রাখার জন্য জিওলিন জাতীয় ওষুধ সঙ্গে রাখুন।
কেওনঝড়
কেওনঝড় এক শান্ত নিরিবিলি পাহাড়ি এলাকা। সবুজ টিলায় ঘেরা কেওনঝড়ে মূলত ওঁরাও, মুণ্ডা, সাঁওতালি ওবিভিন্ন আদিবাসীদের বাস। শহর থেকে ৪ কিমি দূরে অনন্য প্রাকৃতিক শোভার মাঝে রয়েছে বিষ্ণু ও জগন্নাথ মন্দির। ৩০ কিমি দূরে সীতা নদীর তীরে সীতাবিজ্ঞি। এখানে রয়েছে পাহাড়ের গায়ে আঁকা প্রাচীন ফ্রেস্কো। ছোট বড় পাহাড়ের নানা নাম লব, কুশ, রাবণছায়া ইত্যাদি। দুটি জলপ্রপাত আছে সাংঘাঘরা এবং ৯ কিমি দূরে বাদঘাঘরা। বৈতরণী নদূর উত্সস্থলে যেতে হলে ৪৫ কিলোমিটার দূরে যেতে হবে। জায়গার নাম গোনাশিকার। ৫০ কিমি দূরে রয়েছে তারিণীদেবীর মন্দির।
সম্বলপুর
সম্বলপুর নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শ্যামলেশ্বরী দেবীর নাম। সম্বলপুর ওডিশার এক জেলা সদর এবং এক জমজমাট বাণিজ্য নগরী। এখানকার তাঁত শিল্প বিখ্যাত। শহরের গা ছুঁয়ে বয়ে চলেছে মহানদী। বদ্ধরাজ পাহাড়ের পাদদেশে সম্বলপুরের অবস্থান। শ্যামলেশ্বরী দেবী ছাড়াও এ শহরে রয়েছে বড় জগন্নাথ গোপালজি এবং ব্রহ্মপুরা। তবে এখানমকার বিশেষ আকর্ষণ হিরাকুঁদ বাঁধ ও ঊষাকোটি অরণ্য। সম্বলপুর যেতে হলে হাওড়া থেকে ইস্পাত এক্সপ্রেস ধরে যাতে পারেন বা কোরাপুট এক্সপ্রেস। সম্বলপুরের সঙ্গে পুরী ওভূবনেশ্বরের রেল যোগাযোগ রয়েছে। এছাড়া পুরী, ভূবনেশ্বর, কটক, বালেশ্বর থেকে বাস রয়েছে।
আরও পড়ুন- রাজস্থানের সফর পরিকল্পনা
সম্বলপুরেই রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম বাঁধ হীরাকুঁদ। অতীতে ঝারা সম্প্রদায় আদিবাসীদের বাস ছিল এখানে। প্রতিবছর মহীনদীর বন্যায় বিপুল প্রাণহাণি ও প্রকৃতিক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হত। সেই বিপর্যের হাত থেকে রক্ষা পেতে তৈরি হয় এশিয়ার বৃহত্তম বাঁধ।১৯৫৭ সালে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর হাতে উদ্বোধন হয় এই বাঁধের। সম্বলপুর থেকে ১৬ কিমি দূরে রয়েছে এই বাঁধ। সম্বলপুর থেকে সহজেই ঘুরে নিন ঊষোকোটি বা বাদরামা অভযারণ্য। ১৯৬২ সালে এটি অভযারণ্যের তকমা পায়। এর আয়তন ৩৭০ বর্গকিলোমিটার। এই অরণ্য ভ্রমণ করতে হলে নভেম্বর থেকে জুন আসল সময়।
নৃসিংহনাথ
সম্বলপুর থেকে বাসে ১৪০ কিমি দূরে পাইকমল। সেখান থেকে ৪ কিমি রিকশা বা অটোতে নৃসিংহনাথের মন্দির। সম্বলপুর থেকে সরাসরি পাইকমলের বাস না পেলে প্রথমে বড়গড়, সেখান থেকে বাস বা শেয়ার জিপে পাইকমল। এটি ওডিশার বোলাঙ্গি জেলায় অবস্থিত। গন্ধমাদন পর্বতের উত্তর ঢালে এক বিষ্ণুতীর্থ হল নৃসিংহনাথ। দেবতার দেহ সিংহের এবং মাথাটি বিড়ালের। এই মন্দির নির্মাণ হয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে। বিশল্যকরণীর খোঁজে হনুমান এই পর্বতেই এসেছিলেন বলে কিংবদন্তী রয়েছে। এই মন্দির পথে শয়ে শয়ে বাঁদরের দেখা মেলে। এই পাহাড়ে এখনও বহু ওষধি গাছ রয়েছে। যা স্থানীয় উপজাতিরা সহস্রাব্দ ধরে ব্যবহার করে আসছে। ল্যাটরাইট এবং বক্সাইট দুই ধরণের পাথর মিশ্রিত এই পাহাড়। চলার পথে কিছু জলধারা চোখে পড়বে। সেগুলি হল চালধারা, কপিলধারা, সপ্তধারা। এসবের মিলিতধারায় তৈরি হয়েছে পাপহরণ নালা। এছাড়া দেখে নিতে পারেন সীতাকুণ্ড, পঞ্চপাণ্ডব, সত্যঅম্বা, পাথার