Breaking News

চটপট ঝালিয়ে নিন কুমায়ুন সফরের বিস্তারিত সফর পরিকল্পনা

স্বাতী চ্যাটার্জি কুমায়ুন ভ্রমণ শুরু হতে পারে, নৈনিতাল থেকে। তবে পুজোর পর নৈনিতালের থিকথিকে ভিড় এড়াতে চাইলে রাত্রিবাস করতে পারেন ভীমতালে। পক্ষী প্রেমিকরা কুমায়ুনের প্রথম রাত প্যাংগট বা মুক্তেশ্বরে কাটালে ভোর হবে পাখির ডাকে। দ্বিতীয় রাত থাকুন বিনসরে। বিনসর থেকে কৌশানী, চৌকরি হয়ে চলুন মুন্সিয়ারি। মুন্সিয়ারি থেকে পাতাল ভুবনেশ্বর হয়ে ফিরে চলুন কাঠগোদাম। স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি বিজড়িত মায়াবতী দর্শনে আগ্রহীরা পাতালভুবনেশ্বর থেকে লোহাঘাট হয়ে ঘুরে আসতে পারেন মায়াবতী।

নৈনিতাল– ১৯৩৮ মিটার উচ্চতায় ঢেউ খেলানো সাতটি পাহাড় দিয়ে ঘেরা নৈনিতাল। পরাধীন ভারতের ইংরেজ শাসকদের নজর পড়েছিল, মনোরম এই পাহাড়ি অঞ্চলের ওপর। ১৩৭২ মিটার লম্বা ও ৪৫৭ মিটার চওড়া লেকের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে বোটিং পয়েন্ট। ইচ্ছে হলেই ভেসে পড়তে পারেন। লেকে পাড়ে রয়েছে ম্যাল রোড, দোকানপাট, হোটেল, পাহাড়ের কোলো সারিবদ্ধ বাক্সবাড়ি, জামা মসজিদ, গথিক শৈলির সেন্ট জোন্স চার্চ, সতীপীঠ নয়নাদেবীর মন্দির, গুরুদ্বার, গোবিন্দবল্লভ পন্থ, হাই অল্টিটিউড জু, টিবেটান মার্কেট।

পাখির চোখে নৈনিতালকে দেখতে হলে, চলুন কেবল কারে প্রায় আড়াই কিমি দূরে স্নো ভিউ পয়েন্টে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে নন্দাদেবী শৃঙ্গ দেখতে পাবেন। রোপওয়ের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে। লেকের উত্তর প্রান্তে মল্লিতাল এবং দক্ষিণপ্রান্তে তাল্লিতাল। শহর থেকে ২৩ কিমি দূরে পাহাড় আর জঙ্গলের মাঝে সাততাল।

পাখি দেখার এক অনবদ্য ঠিকানা। নৌকায় লেক সফর সেরে নিতে পারেন। কুমায়ুন হিমালয়ের এই গহীন, নির্জন অরণ্যে অবাধ আনাগোনা হিমালয়ান বুলবুল, গ্রে বুশ চ্যাট, রুফাস বেলিড নিলটাভা, ব্ল্যাক ইগলের মতো পাখিদের। পাখি েদখতে যেতে পারেন প্যাংগটেও। পাইন, ফার, ওক আর গুরাসের ছায়ায় এই নির্জন ছোট্ট গ্রামে হিমালয়ের পাখিদের ছড়াছড়ি। ব্রাউন ফ্রন্টেড উডপেকার, হিমালয়ান ব্লু টেইল, ওরিয়েন্টাল টার্টেল ডাভ, মেরুন অরিয়োলদের চিনিয়ে দেন স্থানীয় অভিজ্ঞ গাইড। পক্ষীপ্রেমীকরা প্যাংগটে দু একদিন থাকতে পারেন।

শহর থেকে ২৬ কিমি দূরে ১২২০ মিটার উচ্চতায় নয় কোন বিশিষ্ট নওকুচিয়া তাল। এখানেও বোটিঙের ব্যাবস্থা রয়েছে। প্রকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে। বোটিং করা যায় নৈনিতাল থেকে ২২ কিমি দূরে ভীমতালেও। ১৩৭০ মিটার উচ্চতায় এই লেকের মাঝে ছোট একটি দ্বীপ রয়েছে। এখানে ১৭ শতকে নির্মিত ভীমেশ্বর মন্দির দেখে নিতে পারেন।

কীভাবে যাবেন- রেলপথে ও সড়পথে কুমায়ুন হিমালয়ের প্রধান প্রবেশদ্বার কাঠগোদাম। হাওড়া থেকে সরাসরি কাঠগোদাম যাচ্ছে বাঘ এক্সপ্রেস। এ ছাড়া হাওড়া থেকে সরাসরি দিল্লি এসে, সেখান থেকে ট্রেনে কাঠগোদাম আসা যায়। দিল্লি থেকে সুপারফাস্ট বাসেও নৈনিতাল যাওয়া যায়।

একটা কথা মনে রাখা ভালো শুধু বাসের ওপর নির্ভর করে, কুমায়ুন ভ্রমণ সম্ভব নয়, বাস ছাড়া শেয়ারের ম্যাক্স এবং টাটা সুমোর মতো গাড়িও এক শহর থেকে আর এক শহরে চলাচল করে।

মুক্তেশ্বর- নৈনিতাল থেকে ৫২ কিমি দূরে কুমায়ুন হিমালয়ের এক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মুক্তেশ্বর। ২২৮৬ মিটার উচ্চতায় পাহাড়ের ধাপে ধাপে নক্সাদার ক্ষেতে এপ্রিকট, আপেল, চেরির বাহার নজরে পড়ে। আকাশের প্রান্ত সীমা জুড়ে খরচা কুণ্ড, চৌখাম্বা, গৌরীপর্বত, নন্দাদেবী, নন্দাঘুন্টি, নন্দাকোট, পঞ্চচুল্লি, ত্রিশূল।

ছয় কিমি দূরে তিনশো বছরের পুরনো মুক্তেশ্বর শিব মন্দির। পাইনের ছায়ায় সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসুন মন্দিরে পাশেই আশ্রম এখান থেকে কুমায়ুন, হিমালয়ের শৃঙ্গগুলি দেখা যায়। এখান থেকে হাঁটাপথে ঘুরে আসতে পারেন সৌন্দর্যময় চৌলি কি জালি। চৌলি কি জালিতে বায়ুর প্রভাবে পাথর ক্ষয়ে অদ্ভুত আকার ধারণ করেছে।

আরও পড়ুন- হিমাচল ও কাশ্মীরের জবরদস্ত দুটি ট্যুর প্ল্যান

নাথুয়াখান মুক্তেশ্বর থেকে প্রায় ১৪ কিমি দূরে এক অল্পচেনা স্থান নাথুয়াখান। ভাটেলিয়া-কারুয়াচর-তারিমা গাঁও হয়ে চলে আসতে পারেন এখানে। বসন্তে পাহাড়ের গায়ে থোকায় থোকায় ফুটে থাকে লাল, গোলাপী, গুরাসের ফুল। আপেল, অ্যাপ্রিকট, চেরির বাগিচা। পাহাড়ের মাথায় স্কুলের ঘণ্টা বাজলে সার বেঁধে নেমে আসে কচি কাঁচাদের দল। গাছের ডালে সারাদিন পাখিদের আনাগোনা। প্রায় ১২০ প্রজাতির পাখিদের দেখা মেলে এখানে। নাথুয়াখান বাজারের কাছে জিতেন্দ্র সিঙের অ্যাপেল জোন হার্বাল হাবস। এখানে মিন্ট, রোজ মেরি, মার্জোরাম, পার্সলে, রোজ জিরেনিয়ামসহ রান্নার যাবতীয় ভেষজ মসলা পাওয়া যায়। এ ছাড়াও এখান থেকে আপেল, পিচ, অ্যাপ্রিকটের জ্যাম চাটনি, গুরাসের ভেষজ চা, সংগ্রহ করতে পারেন। এখান থেকে ৭ কিমি দূরে রয়েছে তাল্লারাম গড়, এখানে টেগোর হিল। এক সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসে এখানে কিছুদিন বাস করেছিলেন।

জাগেশ্বর- পিচরাস্তার ডানে ও বাঁয়ে আকাশচুম্বী পাইন আর দেবদারুর বন। পাতার ফাঁক ফোকর দিয়ে ছুঁয়ে আসে মিঠে রোদ। হিমালয়ের ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম জাগেশ্বরের প্রকৃতিক সৌন্দর্য অসীম, আর প্রসিদ্ধি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের শিবমন্দিরের জন্য। এক সময় শঙ্করাচার্য এখানে এসেছিলেন। পাহাড়ের ঢালে রয়েছে বন দফতরের তেন্ডুয়া পার্ক। এখানে বেশ কিছু তেন্ডুয়া বা চিতাবাঘ রাখা আছে।

তেন্ডুয়া পার্কের কাছে চিতাই গ্রামে ছোট্ট লাল মন্দির। গর্ভ মন্দিরে রয়েছেন কালভৈরব মহাদেব। ১৮৭০ মিটার উচ্চতায় জাগেশ্বরে বয়ে চলেছে জটাগঙ্গা নদী। পাহাড় অরণ্যে মোড়া এলাকায় রয়েছে ১২৫টি মন্দিরের একটি কম্প্লেক্স। প্রথমে দেখুন দণ্ডেশ্বর শিবমন্দির। ১৬টি মন্দির রয়েছে এখানে। নবম শতকে শিখরধর্মী, নাগরশৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরগুলির গঠন বৈচিত্র্য অনবদ্য।

চাঁদ ও কাতুরি রাজাদের আমলে নির্মিত গ্রাম সংলগ্ন অন্য মন্দিরগুলিও দর্শন করুন। এগুলির মধ্যে রয়েছে মৃত্যুঞ্জয় মহাদেব, জাগেশ্বর মহাদেব, ভৈরব, কেদারনাথ, নবগ্রহ, কুবের, বালেশ্বর, বদ্রীশ্বর, নবদুর্গা, কালিকা, পুষ্টিদেবী, সূর্যদেব ও নীলকণ্ঠ দেবের মন্দির। এই অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে খননকার্য চালিয়ে যেসব মূর্তি ও পুরাতত্ব সামগ্রী পাওয়া গিয়েছে, সেসব দেখতে পাওয়া যাবে এখানকার পুরাতত্ত্ব বিভাগের মিউজিয়ামে।

একদিন বোরবেলা বেরিয়ে হাল্কা ট্রেকে পাখিদের গান শুনতে শুনতে তিন কিমি পাকদণ্ডী বেয়ে চলে আসুন, বুড়া জাগেশ্বর শিবমন্দিরে। গর্ভগৃহে দেবদেবার দর্শন সেরে নিন। এখান থেকে চারপাশের উপত্যকা, হিমশিখর, পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট গ্রামের দৃশ্য মন ভরিয়ে তোলে। শিবরাত্রি ও বৈশাখী পূর্ণিমার দিন এখানে ভক্ত সমাগম হয়। বুড়া জাগেশ্বর থেকে আরও আধ কিমি উপরে উঠলে হিরিয়া টপ, দেখা যাবে একাধিক পর্বত শৃঙ্গ।

পরের পর্বে বিনসর, কৌশানী, বৈজনাথ, বাগেশ্বর, চৌকরী,
পাতালভুবনেশ্বর, বিরথি ফলস, মুন্সিয়ারি, রানিক্ষেত, করবেট ন্যাশনাল পার্ক

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

পাশের রাজ্যেই রয়েছে প্রকৃতির এক আদিম জায়গা, বেড়িয়ে আসুন চুপিসারে

স্বাতী চ্যাটার্জি- কাশ্মীর, কেরালা, দক্ষিণভারত, উত্তরভারতসহ গোটা ভারততো বেড়াবেন। আমাদের দেশে দেখার জায়গা অনেক। প্রাকৃতি, …

One comment

  1. পরের পর্ব কি পোস্ট হয়েছে?…আমি দেখতে পাইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!