অর্বিট নিউজ– হাওয়া ছিল, এবারে বঙ্গে হয়তো রাজ করতে চলেছে বিজেপি। কিন্তু ২মে ফল ঘোষণা সকাল থেকেই বলে দিচ্ছিল উল্টো কথা। ফের একবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
নির্বাচনী দফা যত অন্তিম লগ্নের দিকে গড়িয়েছিল, ততই যেন আত্মবিশ্বাস হারাতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলনেত্রীকে। তিনি কর্মীদের মাটি কামড়ে কাউন্সটিঙের দিন থাকতে বলেছিলেন। এমনকী ফল ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্টেও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আবেদনের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু ২ মে বেলা যত গড়িয়েছে, তৃণমূলনেত্রীর কাছে অঙ্কটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, কয়েকজন নেতা দলের সঙ্গে গদ্দারি করলেও, বাংলার মানুষ তাঁর প্রতি আস্থা হারায়নি।
সকাল থেকেই নির্বাচনী ফলের উপর যেমন সাধারণ মানুষের নজর ছিল, তেমনই কড়া নজর ছিল নন্দীগ্রাম আসনের দিকে। কারণ সেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলেছিল একদা তৃণণূলের সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দুপক্ষের কাছেই পুরো দস্তুর প্রেস্টিজের ময়দান।
বিকেল গড়াতে অবশ্য অঙ্কটা পরিষ্কার হয়ে যায়, ১২০০ ভোটে জয় ছিনিয়ে নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, বেলা দুটোর পরেও হারের পরিস্থিতি বুঝেও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের যুক্তি ছিল, এখনও বেশ কয়েক রাউন্ড বাকি। তাই আগাম আঁচকে তারা পাত্তা দিতে নারাজ।
কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় অবশ্য, জানিয়েছেন, বাংলায় তাদের ফল আশানুরূপ হয়নি, তাঁর দাবি, বাংলার মানুষ, বহিরাগত ইস্যু বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের চোটকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
একাংশ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই যে ইস্যু খাড়া করা হয়েছিল, তা হল দুর্নীতি। কয়লা কাণ্ড, গরু পাচারকাণ্ড, চালচুরি ইত্যাদি। কিন্তু এই ইস্যুগুলি যে কোনও মতেই তৃণমূলের বিপক্ষে যাবে না, তা আগে বোঝা উচিত ছিল। এর বড় কারণ, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে সারদা, নারদা ইস্যু নিয়ে ময়দানে নেমেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও বাড়তি ফল জোগাড় করতে পারেনি বিজেপি। ফলে দুর্নীতি ইস্যু বাংলার অধিকাংশ মানুষের কাছে বড় ফ্যক্টর নয়।
পাশাপাশি, বিজেপির সরাসরি ধর্মীয় মেরুকরণ, এনআরসি হাওয়াতে পুরোপুরি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল বাংলার মানুষ, যার ফল ভুগতে হচ্ছে বিজেপিকে। এ ছাড়া ছিল বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং প্রার্থী। সর্বপরি বাংলার বুকে জায়গা করার জন্য বিজেপির তরফে তেমন কোনও নেতাই তৈরি হয়নি। যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প হতে পারেন।