কলকাতা, বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্র, বহু ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য বিখ্যাত। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভূ কৈলাস রাজবাড়ি। এটি শুধু একটি প্রাসাদ নয়, বরং এটি বাংলার জমিদারি শাসন, স্থাপত্যশৈলী এবং সামাজিক সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি।
রাজবাড়ির ইতিহাস
ভূ কৈলাস রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিশিষ্ট জমিদার শিবচন্দ্র রায়। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে তিনি এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। এটি মূলত ব্রিটিশ আমলে নির্মিত জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই রাজবাড়ি কলকাতার জমিদারি সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
শিবচন্দ্র রায়ের পর তাঁর উত্তরাধিকারীরা এই প্রাসাদটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। এই রাজবাড়ি শুধু জমিদারদের আবাসস্থলই ছিল না, বরং এটি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেরও কেন্দ্র ছিল।
স্থাপত্যশৈলী
ভূ কৈলাস রাজবাড়ির স্থাপত্য একটি অপূর্ব সংমিশ্রণ, যেখানে ব্রিটিশ স্থাপত্য ও বাংলার ঐতিহ্যবাহী নির্মাণশৈলীর ছাপ স্পষ্ট।
- প্রবেশদ্বার: বিশাল দরজা এবং কারুকার্যমণ্ডিত স্তম্ভ রাজবাড়ির প্রভূত গরিমার প্রতিফলন ঘটায়।
- প্রধান ভবন: রাজবাড়ির মূল ভবনে ইউরোপীয় স্থাপত্যের সাথে বাংলা রেনেসাঁ যুগের অনুপ্রেরণা দেখা যায়।
- নাটমন্দির ও দালান: বাড়ির মধ্যে একটি বিশাল নাটমন্দির রয়েছে, যেখানে জমিদার আমলে বিভিন্ন নাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো।
- ঠাকুর দালান: রাজবাড়ির অন্যতম আকর্ষণ ঠাকুর দালান, যেখানে আজও দুর্গাপূজা এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
ভূ কৈলাস রাজবাড়ি শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি এক ঐতিহাসিক স্মারক। এখানে প্রতি বছর দুর্গাপূজা ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়, যা প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।
বিশেষ করে রাজবাড়ির দুর্গোৎসব কলকাতার অন্যতম প্রাচীন এবং জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপূজার মধ্যে একটি। এখানে দেবী দুর্গার প্রতিমা স্থাপিত হয় এবং রাজবাড়ির পরিবার ও স্থানীয় মানুষ একত্রিত হয়ে এই উৎসব পালন করেন।
উপসংহার
ভূ কৈলাস রাজবাড়ি শুধুমাত্র একটি জমিদার বাড়ি নয়, এটি বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, স্থাপত্য এবং সামাজিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সময়ের সাথে সাথে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা বিলীন হয়ে গেলেও, এই রাজবাড়ি আজও তার গৌরবময় অতীতের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
