ভূমিকা
হাওড়া জেলার আমতা শহরে অবস্থিত মেলাইচণ্ডী মন্দির স্থানীয় ও দূরদূরান্তের ভক্তদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দেবী মেলাইচণ্ডীকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই মন্দিরের ইতিহাস, স্থাপত্য ও লোককথা বাংলার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন।
মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস
জনশ্রুতি অনুসারে, মেলাইচণ্ডী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা প্রায় ৩০০ বছর আগে ব্রাহ্মণ জটাধারী চক্রবর্তীর মাধ্যমে হয়েছিল। তিনি দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের “চণ্ডীমঙ্গল” কাব্যে মেলাইচণ্ডীর উল্লেখ পাওয়া যায়, যা মন্দিরের প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে।
সতীপীঠ হিসেবে মন্দিরের মর্যাদা
কিছু মতানুসারে, মেলাইচণ্ডী মন্দির ৫১ সতীপীঠের অন্যতম। কথিত আছে, সতীর দেহ খণ্ডিত হওয়ার সময় তাঁর “মালাইচাকি” (হাঁটুর উপরের অংশ) এখানে পতিত হয়েছিল। “মালাইচণ্ডী” নামটি “মালাইচাকি” থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, এই তথ্য অসত্য।
মন্দিরের স্থানান্তর ও স্থাপত্য
প্রথমদিকে মন্দিরটি হাওড়া জেলার জয়ন্তী গ্রামে অবস্থিত ছিল। পরে দামোদর নদীর গতি পরিবর্তনের ফলে ব্রাহ্মণ জটাধারী চক্রবর্তী দেবীকে আমতায় স্থানান্তরিত করেন এবং সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমান মন্দিরটি প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বহন করে। মন্দিরে প্রবেশের জন্য তিনটি দ্বার রয়েছে, যা প্রাচীন স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
উৎসব ও মেলা
প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে মন্দিরে দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে মাঘ মাসে এবং বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে এখানে মেলা বসে, যেখানে প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটে।
উপসংহার
আমতার মেলাইচণ্ডী মন্দির শুধুমাত্র ধর্মীয় উপাসনার স্থান নয়, এটি বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও লোককথার সমৃদ্ধ ধারাকে প্রতিফলিত করে। মন্দিরের প্রাচীনত্ব, স্থাপত্য ও সতীপীঠ হিসেবে মর্যাদা স্থানীয় ও দূরদূরান্তের ভক্তদের আকর্ষণ করে, যা বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক।
