হাওড়া ব্রিজ, যাকে বর্তমানে রবীন্দ্রসেতু বলা হয়, হল ভারতের অন্যতম ঐতিহাসিক এবং প্রযুক্তিগত বিস্ময়। গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত এই ব্রিজটি কলকাতা এবং হাওড়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এটি শুধুমাত্র একটি স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, বরং ভারতীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আধুনিক প্রকৌশল দক্ষতার প্রতীক।
নির্মাণের সূচনা
ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতার দ্রুত উন্নতির প্রয়োজন ছিল, এবং ১৯৪৩ সালে গঙ্গার উপর হাওড়া ব্রিজটি চালু হয়। এর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ১৮৭১ সালে, যখন হাওড়া ও কলকাতার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য একটি সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ১৯৩৬ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়, এবং ১৯৪২ সালে এটি সম্পন্ন হয়।
প্রযুক্তি ও স্থাপত্য
হাওড়া ব্রিজ একটি ক্যান্টিলিভার ব্রিজ, যা সম্পূর্ণরূপে রিভেটেড স্টিল দিয়ে তৈরি। এটি নির্মাণে কোনো নাট-বল্টু ব্যবহার করা হয়নি। ২৬,৫০০ টন উচ্চ মানের স্টিল দিয়ে ব্রিজটি নির্মিত হয়, যার মধ্যে বেশিরভাগ ছিল তৎকালীন টাটা স্টিল কোম্পানির সরবরাহ।
ব্রিজটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৩১৩ ফুট এবং প্রস্থ ৭১ ফুট। এটি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ক্যান্টিলিভার ব্রিজ।
নামকরণ
স্বাধীনতার পর, ব্রিজটির নাম পরিবর্তন করে “রবীন্দ্রসেতু” রাখা হয়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। তবে, এটি এখনো হাওড়া ব্রিজ নামেই অধিক পরিচিত।
ব্যবহার ও গুরুত্ব
প্রতিদিন প্রায় ১ লক্ষ যানবাহন এবং ১.৫ লক্ষ পথচারী ব্রিজটি ব্যবহার করেন। এটি শুধুমাত্র একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং বাঙালির আবেগ এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
চ্যালেঞ্জ ও রক্ষণাবেক্ষণ
ব্রিজটি নির্মাণের পর থেকে বহু প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমান হামলার আশঙ্কা। বর্তমানে দূষণ, অতিরিক্ত যানবাহন এবং রক্ষণাবেক্ষণের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে এটি।
উপসংহার
হাওড়া ব্রিজ শুধুমাত্র একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময় নয়, বরং এটি ভারতীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐক্যের প্রতীক। ব্রিজটির স্থায়িত্ব এবং কার্যক্ষমতা প্রমাণ করে কীভাবে আধুনিক প্রযুক্তি ও ঐতিহ্য একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
রবীন্দ্রসেতু আমাদের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের এক অনন্য সংযোগ।
