গোদাবরী নদী, যা ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী, ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নদীটি দক্ষিণ ভারতের “প্রাণধারা” নামে পরিচিত এবং হিন্দু ধর্মে এটি একটি পবিত্র নদী হিসেবে বিবেচিত।
উৎসস্থল
গোদাবরী নদীর উৎপত্তি মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাসিক জেলার ত্র্যম্বক নামক স্থানে। এই স্থানটি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অংশ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,০৬৭ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরের কাছ থেকে নদীটি প্রবাহিত হয় এবং এটি পরবর্তী সময়ে ভারতের পাঁচটি রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়। গোদাবরীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৪৬৫ কিলোমিটার।
কিংবদন্তি ও ধর্মীয় তাৎপর্য
গোদাবরী নদী সম্পর্কে হিন্দু পুরাণে বহু কিংবদন্তি উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে একটি বিখ্যাত কাহিনি নিম্নরূপ:
একবার মহর্ষি গৌতম ঋষি এবং তাঁর পত্নী অহল্যা ত্র্যম্বকের আশেপাশে বাস করতেন। তখন একটি ভয়ানক খরা দেখা দেয়, এবং স্থানীয়রা চরম কষ্টে পড়ে। মহর্ষি গৌতম কঠোর তপস্যা শুরু করেন দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে। তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবতারা বর্ষা প্রদান করেন এবং খরার সমাধান হয়। তবে স্থানীয়রা ঈর্ষান্বিত হয়ে গৌতম ঋষিকে অপবাদ দেন।
গৌতম ঋষি এই অপবাদ দূর করার জন্য প্রার্থনা করেন, এবং তার ফলে ভগবান শিব তাঁর ত্রিশূল দ্বারা মাটি আঘাত করে একটি ঝর্ণা সৃষ্টি করেন। এই ঝর্ণা থেকেই গোদাবরী নদীর উৎপত্তি হয় বলে মনে করা হয়। এই কারণেই ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দির এবং গোদাবরী নদী পবিত্র হিসাবে বিবেচিত।
অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
গোদাবরী নদী শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে নয়, অর্থনৈতিক ও কৃষি ব্যবস্থায়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং ওড়িশা রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকার সেচের প্রধান উৎস। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা লক্ষাধিক তীর্থযাত্রীর সমাগম ঘটায়।
উপসংহার
গোদাবরী নদী ভারতীয় সভ্যতার একটি অপরিহার্য অংশ। এর উৎসস্থল থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে যাওয়ার যাত্রা কেবল একটি ভৌগোলিক ঘটনা নয়, বরং ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ধর্মীয় কিংবদন্তি, অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কারণে গোদাবরী নদী ভারতের মানচিত্রে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
