কেরালার এরনাকুলাম জেলার চোট্টানিক্কারা গ্রামে অবস্থিত চোট্টানিক্কার মন্দির দক্ষিণ ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় এবং প্রাচীন তীর্থস্থান। এই মন্দিরটি দেবী ভগবতীকে (ভগবতী অম্মা) উৎসর্গ করা হয়েছে এবং এটি ভক্তদের কাছে আধ্যাত্মিক নিরাময়ের কেন্দ্র হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।
মন্দিরের ইতিহাস
চোট্টানিক্কার মন্দিরের ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। কথিত আছে, এই মন্দিরটি বিশ্বকর্মা (দেবতাদের স্থপতি) দ্বারা নির্মিত। এটি দেবী রাজরাজেশ্বরী বা ভগবতী অম্মার উপাসনাকেন্দ্র, যিনি মহালক্ষ্মী, মহাকালী এবং মহাসরস্বতীর ত্রিগুণ বৈশিষ্ট্য ধারণ করেন। দেবী এখানে দিনে তিনটি রূপে পূজিত হন—সকালে সরস্বতী, দুপুরে লক্ষ্মী এবং সন্ধ্যায় কালী।
মন্দিরটি শুধু দেবীর আরাধনার জন্য নয়, মানসিক এবং শারীরিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও প্রসিদ্ধ। বিশেষত, “গ্রহ দোষ” এবং “ভূত বা প্রেতদোষ” থেকে মুক্তির জন্য ভক্তরা এখানে ভিড় জমান।
স্থাপত্যশৈলী
চোট্টানিক্কার মন্দিরের স্থাপত্য কেরালার ঐতিহ্যবাহী কাঠের কাজ ও নকশার এক অনন্য উদাহরণ। মন্দিরের গর্ভগৃহ কাঠ দিয়ে নির্মিত এবং অসাধারণ কারুকার্য দ্বারা সজ্জিত। মন্দিরের প্রধান চত্বর প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং কেন্দ্রস্থলে দেবীর মূর্তি স্থাপিত। দেবীর মূর্তি কালো পাথরে নির্মিত, যা বিশেষভাবে সজ্জিত এবং পূজিত হয়।
মন্দির চত্বরে রয়েছে অন্যান্য ছোট মন্দির, যেগুলো শ্রীকৃষ্ণ, শিব এবং গণেশকে উৎসর্গ করা। পাশেই একটি পবিত্র পুকুর (পূষ্করণী) রয়েছে, যেখানে ভক্তরা পূজার আগে স্নান করেন।
বিশেষত্ব ও পূজা
চোট্টানিক্কার মন্দির তার গুরুথি পূজা-এর জন্য বিখ্যাত। এই পূজাটি রাতে অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি ভক্তদের নেতিবাচক শক্তি থেকে মুক্তি দেয় বলে বিশ্বাস করা হয়। ভক্তরা তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন এবং বিশেষ মানত পূরণ করেন।
মন্দিরে নবরাত্রি এবং বিশেষ করে মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে বড় উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই সময় মন্দিরে প্রচুর ভক্ত সমাগম ঘটে।
উৎসব ও আয়োজন
প্রতিবছর এখানে নবরাত্রি উত্সব অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এছাড়া, চোট্টানিক্কার মন্দিরের বার্ষিক রথযাত্রা একটি উল্লেখযোগ্য আয়োজন। এই উৎসবের সময় দেবীর রথ সুসজ্জিত হয়ে ভক্তদের মাঝে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিভাবে পৌঁছাবেন?
চোট্টানিক্কার মন্দির কেরালার কোচি থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হলো এরনাকুলাম, যা মন্দির থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মন্দির থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরে। স্থানীয় বাস, ট্যাক্সি বা অটো রিকশার মাধ্যমে সহজেই মন্দিরে পৌঁছানো যায়।
ভ্রমণ পরামর্শ
মন্দিরে প্রবেশের সময় ড্রেস কোড মানতে হবে। পুরুষদের ধুতি এবং মহিলাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরতে হবে।
ভক্তরা পায়ে হেঁটে মন্দির পরিক্রমা করেন, যা স্থানীয় ঐতিহ্যের অংশ।
ভোর বা সন্ধ্যায় ভ্রমণ করলে মন্দিরের আধ্যাত্মিক পরিবেশ আরও বেশি অনুভূত হয়।
চোট্টানিক্কার মন্দির শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি ভক্তি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক পরম মিলনস্থল। কেরালার এই পবিত্র ভূমি প্রকৃতপক্ষে ভগবতীর আশীর্বাদ লাভের জন্য এক অনন্য গন্তব্য।
