অনেকেই ছোট ছুটি পেলেই, ঝাড়া হাত পায়ে উইকএন্ডে বেরিয়ে পড়েন। দক্ষিণবঙ্গের উইকএন্ডের জায়গা বলতে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া। পুরুলিয়ার দুয়ারসিনি, গড়পঞ্চকোট, বড়ন্তি আর বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর, বিষ্ণুপুর, শুশুনিয়া এবং বিহারীনাথ।
কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের উইকএন্ডে যাওয়ার বেশ কয়েকটি টিপস দিচ্ছি যা একটু অফবিট। এবং কম খরচে ঘুরে নিতে পারেন এই এলাকাগুলি।
আমাদের নগর সভ্যতার অন্তরালে কত অমূল্য জায়গা পড়ে রয়েছে। যা অনায়াসে এক্সপ্লোর করা যায়। মুশকিল হল…এই সব এলাকাগুলি পরিকাঠামোর অভাবে খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। তবে এখানে বলে রাখা ভালো, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হলে, ধীরে ধীরে এই জায়গাগুলিও উইকএন্ড ট্যুরের ম্যাপে জায়গা করে নেবে।
এখানে কয়েকটি সাজেশন রইল। বাঁকুড়া-পুরুলিয়া
১। গাংদুয়া-কোড়ো পাহাড়- গড়পঞ্চকোট- বড়ন্তি ৩ দিন-২ রাত্রি
(গড়পঞ্চকোট ও বড়ন্তিতে থাকা ও খাওয়ার খরচ অনেকটাই বেশি। এক দিনে গড়পঞ্চকোট বা বড়ন্তিতে থাকার খরচেই আপনি গোটা ট্যুর সম্পূর্ণ করতে পারেন।)
২। গাংদুয়া-কোড়ো পাহাড়-শুশুনিয়া-বিহারীনাথ ৩দিন ২ রাত্রি।
শুশুনিয়া বা বিহারিনাথেও থাকতে পারেন। সাধ্যের মধ্যে লজ ভাড়া ও খাওয়া মিলবে। কিন্তু কোড়ো পাহাড়ের কাছে থাকলে থাকার খরচ ও খাওয়ার খরচ অনেকটাই কম। বরং গাড়ি ভাড়া করে …কম খরচে ট্যুর সম্পূর্ণ হবে। কোড়ো পাহাড় থেকে শুশুনিয়ার দূরত্ব ২৫ কিমি। তাহলে বুঝতেই পারছেন মাত্র ৪০ মিনিটের রাস্তা।
৩। গাংদুয়া-কোড়ো পাহাড়- এক্তেশ্বর- মুকুটমণিপুর। ৩দিন-২ রাত্রি
অনেকেই মুকুটমণিপুর গেছেন। থাকা ও খাওয়ার খরচ অনেকেরই জানা আছে। এক্ষেত্রে মুকুটমণিপুর ও আশে পাশে ঘোরার খরচ…অনেকটাই কমিয়ে আনা যায় যদি গাংদুয়াটাকে থাকার জায়গা বাছেন। ওখান থেকে এক্তেশ্বর প্রায় ২২ কিমি। এক্তেশ্বর শিবমন্দির বাংলার একটি বহু প্রাচীন শিবমন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম।
৪। গাংদুয়া-কোড়ো পাহাড়-বেলিয়াতোড়-সোনামুখী। ৩দিন-২ রাত্রি
অনেকেই হয়তো জানেন বিশ্ববিখ্যাত চিত্র শিল্পী যামিনী রায়ের জন্মভিটে বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে।…তিনি জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন । এই গ্রামের এক নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে, যা আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে। অথচ তা অন্তরালে (সেই ইতিহাস পরে তুলে ধরবো) এবং তার কয়েক কিলোমিটার দূরে সোনামুখী। এই গ্রামেরও এক অসাধারণ ইতিহাস রয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এখানে যে পঞ্চরত্ন টেরাকোটার মন্দিরটি রয়েছে, তা সারা বঙ্গে খুব কমই আছে।
এ ছাড়া আরও কয়েকটি জায়গা রয়েছে বাঁকুড়ায় যা অনায়াসে উইকএন্ডে ঘোরা যায়।….এখানে হয়তো অনেকের মনে হচ্ছে। প্রত্যেক সফর সূচিতে গাংদুয়া-কোড়ো পাহাড় আসছে কেন?
উত্তর ১। কারণ এই জায়গাটি এমন জায়গায় রয়েছে, যেখান থেকে প্রত্যেকটি পয়েন্ট ২২ থেকে ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে। অর্থাৎ ৩০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে যেখানে যেতে চাইছেন পৌঁছে যাবেন।
উত্তর ২। আপনি যেখানেই থাকুন, গড়পঞ্চকোট, বড়ন্তি, শুশুনিয়া, বিহারিনাথ, মুকুটমণিপুর, বিষ্ণুপুর। থাকার খরচ কম করে ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা। খাওয়া আলাদা এ ছাড়া গাড়িভাড়া। বাকি বেলিয়াতোড়, সোনামুখী এছাড়া বাকি যে সমস্ত ভেতরের জায়গা রয়েছে সেখানে থাকার কোনও জায়গা নেই…খাওয়ারতো নেই।..গাংদুয়া বা কোড়ো পাহাড়ের কাছেও হোটেল বা লজ নেই।…সেখানে একটি ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত গেস্টহাউস রয়েছে…যা অতি কম খরচে পাওয়া যায়। সেখানে আগাম বলে রাখলে…ঘরোয়া ভালো মানের খাবার পাওয়া যায় অনেক সস্তায়। ( হোটেলের থেকে কম খরচ) ফলে উইকএন্ডে গিয়ে বাড়তি খরচ অনেকটাই বাঁচিয়ে নিতে পারবেন।…তবে মনে রাখবেন …গ্রুপ (৬-৭ জনের কম গেলে)…খাওয়ার খরচ বেশি পড়বে। সকালে এখানে ব্রেফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায় লাঞ্চ সারতে পারেন। আর সন্ধে নাগাদ ফেরার পর খাবারের ব্যবস্থা কথা বলে করে রাখতে পারেন।
বিঃ দ্রঃ- যাঁরা ট্রেনে যাবেন না, তাঁরা কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাসে যেতে পারেন। নামতে হবে, গঙ্গাজলঘাটি। সেখান থেকে টোটো ভাড়া করে পাশের গ্রাম দেশুড়িয়া মোড়ে এসে। ট্রাস্টের হোমে থাকতে পারেন। ( গাড়ি ও থাকার জন্য আগাম যোগাযোগ করতে হবে। ) হোমের হোয়াটস অ্যাপ নম্বর 8910524426
এখান থেকেই যে কোনও রুটে বেড়িয়ে নিতে পারে। মোটামুটি এই হলিডে হোম থেকে প্রত্যেকটি দর্শনীয় স্থানে পৌঁছে যাবেন এক ঘণ্টার মধ্যে। তাহলে আর দেরি কেন, বেরিয়ে পড়ুন।