পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- পুরাণের গল্প কি সত্যি? নাকি স্রেফ একটা কাল্পনিক মহাকাব্য ? কিংবদন্তি সূত্র, রহস্যাবৃত কিছু তথ্য, প্রাকৃতিক ইঙ্গিত কল্পনাকেও হার মানায়। ইতিহাস এক কথা বলে আর পৌরাণিক গল্পগাথা আর এক। স্রেফ বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে যুক্তি সাজালে হয়তো তর্কে জিততে পারেন, কিন্তু কিছু রহস্যময় প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা বিজ্ঞানের কাছে। আর এই প্রতিবেদন শুরু করছি, সেই রহস্যময় পথকে আধার করেই। তবে যাত্রার যেমন একটা ভূমিকা থাকে, সেই ভূমিকারও একটা প্রাক ভূমিকার প্রয়োজন হয়, তা দিয়েই শুরু হচ্ছে এই লেখা। পরতে পরতে থাকবে পরম্পরার হাত ধরে সহস্রাব্দ ঢেউয়ে চলে আসা পৌরাণিক মহাকাব্য রামায়ণের বিচিত্র রূপ, এক অভূতপূর্ব খোঁজের আবডালে রয়ে গিয়েছে চোরাস্রোতের মতো।
শ্রীলঙ্কা। সফরের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল, মাস চারেক আগে। প্রায় ১৬-১৭ জন গ্রুপের সদস্য শ্রীলঙ্কা সফরের ইচ্ছে প্রকাশ করেন, কিছু সদস্য একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য যেতে পারেননি, কিছু সদস্য কোনও কারণ দর্শানোর সৌজন্যটুকুও দেখাননি, শেষ পর্যন্ত বলে গিয়েছেন যাবো। যাইহোক, শেষ পর্যন্ত মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৬জন। সোমনাথ মুখোপাধ্যায় আমাদের দীর্ঘদিনের গ্রুপ সদস্য এবং তাঁর স্ত্রী ও পুত্র। সোমনাথবাবু অবশ্য আমাদের বাংলাদেশের এক্সপেরিমেন্টাল ট্যুরে ছিলেন। এবং মুরারিমোহন চৌধুরী সোমনাথবাবুর বন্ধু এবং ভ্রাতৃস্থানীয় আর তাপস চক্রবর্তী ইনি আমাদের বাঁকুড়া, বাংলাদেশ ট্যুরেও ছিলেন।
সময় মতো আগাম টিকিট কাটা, ভিসা করানো, হোটেল গাড়ি বুক করা হয়ে গিয়েছিল। ১৪ মার্চ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হল আমাদের যাত্রা। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ পৌঁছালাম চেন্নাই বিমানবন্দরে, ডোমেস্টিক টার্মিনাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালে পৌঁছে সিকিওরিটি চেক, ইমিগ্রেশনের কাজ মিটিয়ে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা। এর ফাঁকে বিমানবন্দরে খাওয়াদাওয়া পর্ব সেরে নেওয়া।
বন্দরনায়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলাম প্রায় রাত দেড়টা (১৫-৩-১৯) সেখানে সিকিওরিটি চেক, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, সিমকার্ড নেওয়া এবং ডলার এক্সচেঞ্জ করে সোজা বেরিয়ে গেলাম নেগোম্বো। গভীর রাতেই যে হোটেলে উঠলাম, সেখানে দেখা দিল বিপত্তি। এই বিপত্তির অনেকগুলি কারও আছে, তার প্রধান কারণগুলি হল, কিছু কনফিউশন এবং ফেক রিভিউ। প্রায় বদ্ধ ঘর, এসি ছিল না, পাখাও কাজ করতে চায়নি।
সর্বপরি হোটেল কর্তৃপক্ষের অদ্ভুদ বাজে আচরণ, পরে বুঝলাম, ঘরগুলি দেওয়া হয়েছে ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট হিসেবেই। অর্থাৎ ওই হোটেল কর্তৃপক্ষের ইন্ডিয়ানদের প্রতি বেশ ভালো রকমই অ্যলার্জি আছে। এবং সেটা মুখের ওপর বলেই দিল, যে লোকাল ভেন্ডারের মাধ্যমে বুক করা হয়েছে বলে, নয়তো অনলাইনে বুক করলে আমরা নিজেরাই বাতিল করে দিতাম, আমরা ইন্ডিয়ানদের ঘর ভাড়া দিই না।
কথাটা শুনেই লোকাল ভেন্ডারকে ভদ্রভাষাতেই বললাম, ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ, একটি এসি বিকল্প রুমের ব্যবস্থা করা হয়, আর আশে পাশে সেভাবে পাওয়া গেল না, তাই সেই রাতটা আমরা তিনজনে কাটালাম। পরের দিন সকালে নতুন হোটেলে সিফ্ট করলাম, সেটির পজিশন, লোকেশন বেশ ভালোই, হোটেলটিও বেশ ছিমছাম, হোটেল লাগোয়া রেস্তরাঁ, হরেক খাবারের ব্যবস্থা, আর সবচেয়ে বাড়তি পাওনা, রাস্তা টপকে হাঁটা পথে মিনিট দুয়েকেই নেগম্বো সি বিচ। সেদিন সকালে হোটেলে ঢুকে ফ্রেস হয়ে বেরোলাম কলম্বো হাফ ডে সিটি ট্যুরে। নেগম্বো ফিস মার্কেট, টাউন হল, বিহারমহাদেবী পার্ক, ওল্ড পার্লামেন্ট, ইনডিপেন্ডেন্স স্ক্যোয়ার, গল ফেস, কলম্বো পোর্ট, গঙ্গারামায়া পার্ক, ন্যাশনাল মিউজিয়াম। আজকের মতো বিরতি সফরনামায়।
এ দিন লম্বা সফর। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার জার্নি। ২০০ কিলোমিটার পথ, দুরন্ত গতিতে ছুটলো গাড়ি। ঝাঁ চকচকে রাস্তা আর দুপাশে প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যের অবাধ বিস্তার। মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে কিং কোকোনাটের জলপান। যে দিকে তাকাই পুরো ছবি আর ছবি। পুরো যাত্রাটাই যেন ছন্দে ভরপুর।
দ্বিতীয় পর্ব- কম খরচে ঘুরে আসুন রাবণের দেশ শ্রীলঙ্কা, রইল বিস্তারিত সফরের কাহিনী