স্বাতী চ্যাটার্জি- ভারতের টাইম জোন কটি? সবাই একবাক্যে বলবেন একটি, ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম। যদিও ব্রিটিশ সময়ে ভারতে দুটি টাইম জোন ধরা হত একটি বম্বে ও অন্যটি কলকাতা। সে এক অন্য প্রসঙ্গ। তার গণিত সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু আজ যে প্রসঙ্গে কথা বলবো, তা যে কোনও বিজ্ঞান কেন, প্রায় গবেষণারও ঊর্ধ্বে।
কাল্পনিক কোনও কাহিনি নয়
ধরা যাক আপনি গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কোনও পাহাড়ি রাস্তা ধরে। মোবাইলে দেখছেন, তখন সময় হয়েছে সকাল ১০টা এবং তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। কিন্তু আচমকা লক্ষ্য করলেন, মোবাইলে সময় ও তারিখ নিজে নিজেই বদলে গেল। সময় দেখাচ্ছে রাত দশটা এবং তারিখ দেখাচ্ছে ৮ ডিসেম্বর ২০২৪। তখন ঠিক কী মনে হবে? ভাববেন হয়তো আপনার মোবাইলে কোনও গণ্ডগোল হয়েছে। পাশের সহযাত্রীদেরও জিজ্ঞাসা করে একই উত্তর পেলেন।
তখনই আপনার কৌতুহল এক রহস্যময় চোরাবালিতে গিয়ে পড়বে। আর ভাবতে ভাবতে ঘণ্টা খানেক রাস্তার পার হয়ে আসবেন। তারপর আবার দেখবেন আপনার ও আপনার সহযাত্রীদের মোবাইলে দেখানো তারিখ ও সময় একদম ঠিক ঠাক চলছে। কী! ঘটনাটা শুনে কি কোনও কাল্পনিক গল্প মনে হচ্ছে? যদি তাই মনে হয়ে থাকে, তাহলে বিশ্বাস করুন এই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। পর্যটক, লরিচালক, ব্যবসায়ী থেকে স্থানীয়রাও।
ভারতের রহস্যময় সেই এলাকা
ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে জামশেদপুর যাওয়ার পথে পড়ে তৈমারা ঘাটি (Taimara Ghati) নামে এক বিচিত্র, অদ্ভুত এলাকা। আপাত দৃষ্টিতে এই এলাকার সঙ্গে ভারতের বহু জায়গার মিল পাবেন। ঝাঁ চকচকে জাতীয়সড়ক এবং ছোটনাগপুর মালভূমির এলাকা। আর এই এলাকাই দুর্ঘটনার জন্য কুখ্যাত। অথচ দুর্ঘটনা ঘটার তেমন বিশেষ কোনও কারণও নেই। স্থানীয়দের দাবি, জায়গাটি ভৌতিক, রাতের অন্ধকারে কিছু অশুভ আত্মাকে দেখা যায়, তারাই পথকে যেন নিয়ন্ত্রণ করে।
এতো গেল স্থানীয় ঘটনা, দুর্ঘটনার অলৌকিক বয়ান। কিন্তু আসল রহস্য ধরা পড়ল প্রযুক্তিতে। এই অঞ্চল দিয়ে যারাই যায়, তাঁদেরই মোবাইলে বদলে যায়, সময় ও তারিখ। এই এলাকাতে রয়েছে, কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়। সেখানকার শিক্ষক অশিক্ষককর্মীরাও এক বাক্যে স্বীকার করেছেন। মোবাইলের হোয়াটস অ্যাপ কাজ করে না। স্কুলের অ্যাটেন্ডেন্স দিতে গেলে বায়োমেট্রিক্সে সমস্যায় পড়তে হয়। এই আজব ঘটনার জেরে অনেকে মোবাইল আনাই বন্ধ করে দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি অদ্ভুত ঘটনা ঘিরে
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি আরও চমকে দেওয়ার মতো। তাঁদের মত, যাঁরা ওই এলাকার বাসিন্দা, তাঁদের সঙ্গে এমন কোনও ঘটনা ঘটে না। কিন্তু যাঁরা বাইরে থেকে আসেন এবং ওই অঞ্চল পার হওয়ার সময় এমন ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দা সমর সিং জানান, আমরা এলাকার বাসিন্দা, আমাদের সঙ্গে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি, তবে অনেক লরিচালক, বা ছোট গাড়ির চালক, যারা রাঁচি বা তার বাইরে থেকে আসে এই রাস্তা ধরে, তাদের মোবাইলে সমস্যা হয় এটা দেখেছি। কিন্তু এই আজব ঘটনা কী করে ঘটে তা জানি না।
এই ঘটনা নিয়ে পরিবেশকর্মীদের দাবি
স্থানীয় পরিবেশকর্মী নীতীশ প্রিয়দর্শী জানান, এই ঘটনার পিছনে নিশ্চয়ই কোনও বিজ্ঞান লুকিয়ে রয়েছে, যার গবেষণা প্রয়োজন। যেমন লাদাখ এলাকায় ম্যাগনেটিক হিল রয়েছে, যেখানে আপাত দৃষ্টিতে খাড়াই পাহাড়ি রাস্তা দেখা যায়, কিন্তু সেখানে গাড়ি চালু না করলেও গড়াতে থাকে। অতএব প্রথাগত বিজ্ঞান যুক্তি থেকে আলাদা। এখানে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে এমন কোনও ম্যাগনেটিক ফিল্ড রয়েছে, যেখানে এই সমস্যা তৈরি করছে। এখন প্রশ্ন, যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে স্থানীয়দের মোবাইলে এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে না কেন? তিনি জানান, এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। প্রায় দেড় বছরের টাইম গ্যাপের পার্থক্য এটা অদ্ভুত ঘটনাতো বটেই।
আরও পড়ুন- জেনে নিন ১২ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরের ইতিহাস