পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- চম্বল নদী থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে এখনও নিজের ইতিহাসকে ধারণ করে রয়েছে, ভাদোরিয়া রাজবংশের অস্তিত্ব আতের কেল্লা। রাজপুত ও মুঘল স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শনে ভরপুর আতের কেল্লা।
এই কেল্লায় যেমন জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস, তেমনই আষ্ঠেপৃষ্ঠে লতার মতো জুড়ে রয়েছে রহস্য গল্পগাথা। মহাভারতের মহাকাব্যে বহু জায়গার নাম পাওয়া যায়, তার মধ্যে অন্যতম দেবগিরি পাহাড়। আর চম্বলের এই অংশ একটা সময় দেবগিরি বলে পরিচিত ছিল। এই দেবগিরি পাহাড়ের উপরেই জন্ম নিয়েছিল আতের দুর্গ। স্থানীয় মতে, আতের কেল্লাকে অনেকে দেবগিরি কেল্লাও বলে থাকেন।
কেল্লার অন্দরে প্রবেশ করলেই বোঝা যায়, দুর্গের বিশালতা কতটা! বিশাল বিশাল প্রবেশদ্বার বুঝিয়ে দেয় রাজকীয় বৈভব ও আভিজাত্যের এক অনন্য কাহানি। পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, এই আতের কেল্লা প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো।
চম্বলের গর্ভে বিহড়ের মধ্যে নিজের স্বর্ণোজ্জ্বল অতীতকে নিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে আতের কেল্লা। দুর্গের সঙ্গে ইতিহাস যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে মুখোরোচক গল্প কাহিনি। যেমন কেল্লার অন্দরে খুনি দরজার রহস্য। খুনি দরজা নিয়ে দুটি চালু কাহিনি রয়েছে। প্রথমটি হল, পূর্ব দিকের একটি দরজায় দেওয়াল বেয়ে রক্ত বেরোত। সেই লাল রক্ত কোথা থেকে আসত কেউ জানেন না। ফলে দেওয়ালের পাথর লাল হয়ে উঠত।
আর অন্য কাহানি হল, এই খুনি দরজার উপর ভেড়ার মুণ্ডচ্ছেদ করে রেখে দেওয়া হত। ভেড়ার মুণ্ড থেকে বেরোনো রক্ত একটি পাত্রে ধারণ করে রাখা হত, তারপর সেই রক্তের তিলক কেটে রাজা গুপ্তচরেরা রাজাকে খবরাখবর দিত। মনে করা হয়, এই প্রথম চালু করা হয়েছে, যাতে গুপ্তচরেরা বিশ্বাসঘাতকতা না করে।
১৬৬৪ সালে ভাদোরিয়া রাজা বদন সিং এই কেল্লার নির্মাণ করেন। ভাদোরিয়া রাজাদের নাম অনুসারে পুরো ভিন্ড এলাকা বাদওয়ার নামে পরিচিত ছিল। গোহাদ দুর্গের মতোই এই কেল্লাতেও দেখা যায়, দেওয়ান-ই-আম ও দেওয়ান-ই –খাস। যেখানে মন্ত্রীদের সঙ্গে শলাপরামর্শ ও নিয়মিত প্রজাদের সঙ্গে বৈঠকের বন্দোবস্ত ছিল। দেওয়ান-ই-আমের পাশের রয়েছে রাজার হাতিখানা।