অর্বিট ডেস্ক– সত্যজিত্ রায়ের বিখ্যাত ছবি সোনার কেল্লা দেখেননি এমন বাঙালি মেলা দুষ্কর। জয়শলমীরের বিখ্যাত সোনালি পাথরের কেল্লাই হয়ে উঠেছিল সোনার কেল্লা। কিন্তু জানেন কি এই ভূ ভারতেই রয়েছে সত্যি এক সোনার কেল্লা। না শ্রীলঙ্কার রাবণের তৈরি সোনার কেল্লার মতো না হলেও, এই কেল্লাকেও সোনার কেল্লাই (Sonar Kella) বলা হয়। অন্তত স্থানীয় বাসিন্দারা তাই মনে করেন।
হ্যাঁ এই সেই সোনার কেল্লা রয়েছে রাজস্থানেই। নির্জন, নিরালা, জঙ্গলে ঢাকা এক অঞ্চলে। তবে এটুকু হলফ করে বলা যায়, এই কেল্লার অবস্থান এমন জায়গায় বাঙালিসহ বহু পর্যটকই ওদিকে পা মাড়ান না। পর্যটকদের ভিড় যেখানে পশ্চিম রাজস্থানকে ঘিরে। আর আসল সোনার কেল্লা রয়েছে পূর্ব রাজস্থানের দিকে। নাম তিমনগড় কেল্লা।
ভাটি রাজপুরদের তৈরি রাজস্থানের করৌলি জেলায় রয়েছে তিমনগড় কেল্লা (Sonar Kella) । ইতিহাস বলছে, এই কেল্লা বহু প্রচীন। যদিও ১২৪৪ সালে কেল্লাটিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলেন যদুবংশীয় রাজা তিমনলাল। পাহাড়ের মধ্যে প্রায় ৫২ হেক্টর জমির উপর রয়েছে এই প্রকাণ্ড কেল্লা।
করৌলি সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভিতরে রয়েছে কেল্লার (Sonar Kella) অবস্থান। এই দুর্গকে ঘিরে রয়েছে নানা কিংবদন্তী। কেল্লা দখলের জন্য মহম্মদ ঘোরি একাধিকবার হামলা চালায় অবশেষে ১১৯৬ সালে দখল নেয়। মহম্মদ এই কেল্লাকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল তার অন্যতম কারণ, পরশ পাথর।
হ্যাঁ সেই বিখ্যাত পরশপাথরের খোঁজে। যে পাথরের ছোঁয়ায় যে কোনও ধাতু হয়ে ওঠে সোনা। ঘোরির কানে কোনও সূত্র মারফত্ পৌঁছেছিল, ভাটি রাজপুতদের হাতে পরশপাথর থাকার ফলে, তারা পুনরায় সম্পদ অর্জন করে নিচ্ছে।
সেই পরশপাথর অবশ্য মহম্মদ ঘোরির হাতে আসেনি। কিংবদন্তি রয়েছে, কেল্লার (Sonar Kella) পাশেই রয়েছে প্রকাণ্ড একটি বাউড়ি বা লেক। সেখানেই এক রাজা নিমজ্জিত করে রেখেছিল পরশপাথরকে।
এমন একটা কিংবদন্তী গল্প হয়তো গল্পই হয়ে থাকতো, কিন্তু বাস্তব চিত্র এই গল্পকে কার্যত বাস্তব ঘটনায় প্রতিপন্ন করে তুলেছে। কয়েক বছর আগের ঘটনা, জঙ্গলের মধ্যে নির্জন নিরালায় পড়ে থাকা কেল্লার চারপাশে গরু, ভেড়া চরাতে যেতেন স্থানীয়রা। এমনকী কাঠুরে ও আশে পাশের জমিতে চাষও করতেন চাষিরা।
একবার এক চাষির হাতে মাটি থেকে উঠে আসে সোনার চেন। পরের দিন চাষি আরও মাটি খোঁড়ে মিলতে থাকে নানা রকম গয়না। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের গ্রামে।
রাতের অন্ধকারে অনেকেই কেল্লার আশপাশে খুঁজতে থাকে। প্রায় সবার কপালেই কিছুনা কিছু মিলতে থাকে। এই কর্মকাণ্ড চলতে চলতে একদিন খবর পৌঁছয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে। তড়ি ঘড়ি তারাও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে দেখে, ঘটনা সত্যি।
এরপরেই প্রশাসনিক তরফে পদক্ষেপ করা হয়। বর্তমানে কেল্লাটি (Sonar Kella) ভারত সরকারের অধীন পুরাতত্ত্ব বিভাগ দেখাশোনা করে। তবে স্থানীয়দের এখনও বিশ্বাস কেল্লা চত্বরে যে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাউড়ি বা জলাশয় রয়েছে সেখানেই রয়েছে পরশপাথর, আর তার ফলেই এই কেল্লা থেকে মিলেছে নানা সোনার গয়না।
স্থানীয়দের একটা অংশের মত, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর অশ্বত্থামার কাছ থেকে মণি তুলে নিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই মণিটি হয়ে উঠেছিল শ্রীকৃষ্ণের সামন্ত্যক হীরে বা পরশপাথর। এখানকার ভাটি রাজপুতরা যাদববংশীয়। তাঁদের বিশ্বাস বংশপরম্পরায় তারাই সেই হীরে পেয়েছিলেন।