অর্বিট নিউজ ডেস্ক– ভারতে যতগুলি বিখ্যাত মন্দির রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম তিরুপতি মন্দির। অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলায় অবস্থিত এই মন্দিরের প্রায় সারা বছরই আসেন দেশ বিদেশ থেকে বহু পুণ্যার্থী। এই মন্দিরে দৈনিক যা দান সামগ্রী পড়ে, তা বিশ্বের আর কোনও মন্দিরে পড়ে না। দেশ বিদেশ থেকে বহু মানুষ আসেন, পুজো দেন তাদের মনোস্কামনা পূর্ণের জন্য।
এই মন্দিরকে ঘিরে একটি জনপ্রিয় কিংবদন্তী রয়েছে। কলিযুগের শুরুতে ঋষি ভৃগু ত্রিদেবের উপসানা শুরু করেন। তাঁর জানার ইচ্ছে ছিল, ত্রিদেবের মধ্যে সবচেয়ে শীর্ষ স্থানে কে? তাঁর তপস্যা ব্রহ্মা এবং মহাদেব খুশি হলেন। কিন্তু বিষ্ণুর দেখা না পেয়ে ভৃগু সোজা গেলেন বৈকুণ্ঠে। তিনি বিষ্ণুকে দেখে ক্রধান্বিত হয়ে বুকে লাথি মারেন। বিষ্ণুর বুকে তখন শায়িত ছিলেন লক্ষ্মী। ভৃগুরকাণ্ডে অপমানিত হয়ে লক্ষ্মী বৈকুণ্ঠ ছাড়লেন।
লক্ষ্মীকে খুঁজতে বিষন্ন বিষ্ণু মর্তে এলেন। তিনি জানতে পারেন, মহালক্ষ্মী পদ্মাবতী নামে এক রাজপরিবারে জন্ম নিয়েছেন। তিনি একটি পিঁপড়ের ঢিবিতে প্রবেশ করে তপস্যা করতে লাগলেন। দেবলোকে তখন ত্রাহি ত্রাহি রব। ব্রাহ্মা ও মহাদেব মর্তে এলেন বিষ্ণুকে খুঁজতে। মহাদেব হলেন গোমাতা আর ব্রহ্মা হলেন গোশাবক।
তাঁরা জানতে পারেন পিঁপড়ের ঢিবিতেই রয়েছেন বিষ্ণু। মহাদেব রোজ বিষ্ণুকে দুগ্ধ দান করতে লাগলেন। এখানে বিষ্ণু হয়ে উঠলেন ভেঙ্কটেশ্বর। দেবলোকের পরিকল্পনা মতো, ভেঙ্কটেশ্বরের সঙ্গে পদ্মাবতীর বিবাহ হল। ভেঙ্কটেশ্বর কুবেরের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়ে বিবাহ করলেন। লোকমান্যতা মতে, ঋণ নিয়ে বিবাহ অসাংবিধানিক। তাই ভেঙ্কটেশ্বর তিরুমালা পর্বতেই স্থায়ী হলেন।
আরও পড়ুন- উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুর সফরে কী কী দেখবেন?
তিনি তৈরি করলেন মন্দির। ঠিক হল, ভক্তদের দান থেকেই ভেঙ্কটেশ্বর তাঁর ঋণ কুবেরের কাছে চোকাবেন। সেই প্রথা এখনও চলে আসছে। তাই সাধারণ ভক্তরাও দেবতার ঋণ শওধ করতে দান করেন।

এই মন্দিরে দেখা যায়, বহু মানুষ তাঁদের চুল দান করেন পুণ্য অর্জনের জন্য। মন্দিরের তরফেই চুল দান নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তিরুপতি মন্দিরকে বলা হয়, ভূলোকের বৈকুণ্ঠ। এ পৃথিবীতে বিষ্ণুর আবাস। ভক্তদের বিশ্বাস, তিরুপতি মন্দিরে যে মূর্তি রয়েছে তা জাগ্রত দেবতা।

তিরুপতি মন্দির প্রথম তৈরি হয়, ৩০০ খ্রিস্টাব্দে। সময়ে সময়ে বহু রাজা এই মন্দির নির্মাণ, সংস্কারে দান করেছেন। অষ্ঠাদশ শতকে মারাঠা প্রধান রাঘোজি ভোঁশলে স্থায়ী মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। তৈরি হয়, তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম। ১৯৩৩ সালে এই নামে আইন পাস হয়। এই ট্রাস্টের অধীনে আরও কিছু ছোট বড় মন্দির সংস্কার ও কার্য পরিচলনার ভার অর্পণ করা আছে।