Breaking News

এক ‘কালো তাজের’ কাহিনি, মুঘল সাম্রাজ্যের দাবিদারের হারানো অধ্যায়?

স্বাতী চ্যাটার্জি ঘুম, এক আশ্চ‌র্য ঘুমে শায়িত রয়েছে একটা নগর। ঠিক ‌যেন নেশার ঘোরে। অথচ এই শহরটাই ছিল ভারতের শাসনকালের একক কুম্ভ। আজ ‌যে ইতিহাসের কথা বলবো, তাই হয়তো অনেকটাই অজানা, অদেখা তবু তাপ্তীর বুকে নুড়ি পাথরের মতোই সেইসব টুকরো ইতিহাসের অস্তিত্ব রয়ে গিয়েছে।

বুরহানপুর, মধ্যপ্রদেশ। এক সময় শাহি মুঘল আলফাজে উঠে আসত একটাই নাম বাব্-এ-দাকেন। অর্থাৎ দক্ষিণের সিংদুয়ার। বুরহানপুরের ইতিহাস নিয়ে বছর খানের আগে বেশ কয়েকটি পর্ব লিখেছিলাম, এবার আরও কিছুটা গভীরে খোঁজ। তাপ্তীর নদীর বুক থেকে এক গন্ডুষ জলকে আধার করে ইতিহাসের সাগরে ডুব দেওয়ার চেষ্টা, ভারতীয় ইতিহাসের সেই শিকড়ের খোঁজে পথ চলা, ‌যা হয়তো প‌র্যটনের মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পারত, কিন্তু সাজানো সভ্যতার ভিড়ে অনেকটাই মলিন।

উইকেন্ড হোক বা দেশের যে কোনও কোনায় বেড়ানোর খবর জানতে চান? আজই যোগ দিন আমাদের গ্রুপে। এখানে ক্লিক করুন

আজ ‌‌যাঁর কথা দিয়ে এই ইতিহাসের সূচনা পর্ব তৈরি হবে, বাইতে হয়তো, তাঁর নাম কালো হরফেই রয়ে গিয়েছে স্বর্ণাক্ষর হতে পারেনি। কিন্তু তাঁর নামের সূত্র ধরে গভীর জলে ডুব দিলে বেশ কিছু চাপা পড়া ইতিহাস নতুন রূপে ভেসে ওঠে।

শাহ নাওয়াজ খান। বুরহানপুরে তাঁর স্মৃতিসৌধ পড়ে রয়েছে, অবহেলায় অনাদরে। তাঁরই এই স্মৃতিসৌধের প্রচলিত নাম ব্ল্যাক তাজ। আগ্রার তাজমহলের সঙ্গে কোনও অংশেই তুলনা আসে না। না দৃষ্টিনন্দনে না আভিজাত্যে। তবু একে বলা হয় ব্ল্যাক তাজ।

সত্যি ব্ল্যাক তাজ, এমনি এমনি নামকরণ হয়নি, হয়তো এর ঐতিহাসিক আভিজাত্য তাজের মতোই, কিন্তু অন্ধকারে অনাদরে পড়ে থাকায় নামের ‌যথার্থতো আছেই। কিন্তু কে এই শাহ নাওয়াজ খান?

এবার মুখ ফেরানো ‌যাক ইতিহাসের চোরাগলিতে

আকবরের চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন সালিমা সুলতানা বেগম। এই সালিমা অবশ্য আকবর এবং তাঁর পিতা হুমায়ুনের কমান্ডার বৈরাম খাঁয়ের স্ত্রী ছিলেন। গুজরাটের পাটানে বৈরাম খাঁ খুন হওয়ার পর আকবর তাঁকে নিকাহ করেন। বৈরাম খাঁ এবং সালিমার সত্ পুত্র ছিলেন আবদুল রহিম খান-ই-খানা। সম্পর্কে আকবরেরও সৎ পুত্র।

এই আবদুল রহিমই আকবরের নবরত্ন সভার একজন ছিলেন। উত্তরভারতের প্রধান সেনা ছাউনির কমান্ডার, সংস্কৃতে পণ্ডিত ও সঙ্গীতে উস্তাদও ছিলেন। তাঁর প্রতিভা ছিল বাস্তুকার হিসেবেও। বলা ‌যেতে পারে আবদুল রহিম খান-ই-খানা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।

এই আবদুল রহিমের পুত্র ছিলেন শাহ নাওয়াজ খান। তাঁর আর এক নাম ছিল ইরাজ। দক্ষিণ জয়ের পর জাহাঙ্গীর ইরাজকে শাহ নাওয়াজ উপাধি দেয় এবং পাঁচ হাজার মানসবদারি দেয়। এটি সেই সময় ‌যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ মুঘল বাহিনীতে। ইরাজ সৈন্য পরিচালনায় প্রতিভাধর থাকলেও, তাঁর বদ নেশা ছিল মদ্যপান। বিষয়টি নিয়ে জাহাঙ্গির আবদুল রহিমকে বারবার সতর্কও করে।

এদিকে আবদুল রহিমের দুই পুত্রকে জাহাঙ্গির খুনও করায়। কারণ আকবরের মৃত্যুর পর,মসনদের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন আবদুল রহিম খান-ই-খানা।

‌যাই হোক, আবদুল রহিমের পুত্রদের মসনদে বসা হয়ে ওটেনি। ৪৪ বছরে মারা ‌যায়, শাহ নাওয়াজ খান। তাঁর স্মৃতি সৌধ আজও পড়ে রয়েছে ব্ল্যাক তাজের নাম নিয়ে এক মুঘল সালতানাতের এক কালো অধ্যায়কে সাক্ষী করে।

লেখিকার ফেসবুক পেজ ফলো করতে হলে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

কাশ্মীরের এই পাঁচটি জায়গা একদম অফবিট, এবারে সফরের তালিকায় অবশ্যই রাখুন

স্বাতী চ্যাটার্জি- ভূস্বর্গ কাশ্মীর, মুঘল সম্রাট এই উপত্যকা দেখার পর বলেছিলেন, পৃথিবীতে যদি স্বর্গ বলে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!