Breaking News

উত্তরবঙ্গে সিন্ডিকেটবাজদের মৌরসীপাট্টা, চূড়ান্ত হয়রানির শিকার বাঙালি পর্যটকরাই

সত্যজিত্ রায় যদি বেঁচে থাকতেন, আর উত্তরবঙ্গ সফর যদি বর্তমান অবস্থায় করতেন, তাহলে ফেলুদার মুখে হয়তো এই সংলাপ বসাতেন, ‘উত্তরবঙ্গ আর বাঙালির নিশ্চিন্ত সফরের জায়গা নেইরে তোপসে’।

বাঙালির জীবনে দীপুদা অনেকটা ফেলুদার মতো। দীঘা, পুরী, দার্জিলিং। সস্তায় বাঙালির কাছে যেন সস্তার স্যুইজারল্যান্ড ও গোয়া সফর। দার্জিলিং গত কয়েক দশক ধরে মাঝে মধ্যেই অশান্ত হত। বিপাকে পড়তে হত পর্যটকদের। তা পুরোটাই রাজনৈতিক। গত ১০ বছরে পাহাড়ের সমীকরণ বদলেছে। বদলে গিয়েছে পুরো উত্তরবঙ্গের সমীকরণ। ঠিক তেমন, চূড়ান্ত মারমুখী রাজনৈতিক সংঘর্ষের বদলে জায়গা দখল করে নিয়েছে সিন্ডিকেটরাজ।

রাজস্থান, গুজরাট, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, অরুণাচলপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের তুলনায় পর্যটনে অনেকটাই পিছনের সারিতে। বাঙালিরা ভিনরাজ্যে যত পাড়ি দিয়, ভিন রাজ্য থেকে এ বাংলায় তত পর্যটক আসেন না। যদি বা আসেন, বেশিরভাগটাই, কলকাতা শহর ও উত্তবঙ্গমুখী। বাঙালিদের কাছেও জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন উত্তরবঙ্গের দার্জিলিংসহ বেশ কয়েকটি জায়গা, দীঘা গত তিন চার বছর সংযোজন হয়েছে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া। বাকি আর কোনও জেলা পর্যটনের জন্য সেজেই ওঠেনি।

আর সেই উত্তবঙ্গেই প্রায় চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বাঙালিদেরই। দিঘাতেও সিজিনের সময় এমন চিত্র দেখা যায়। কিন্তু দার্জিলিংসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি অঞ্চলে চিত্র মারাত্মক। সিন্ডিকেটরাজ জাঁকিয়ে বসেছে মূলত, হোটেল ও গাড়ি ব্যবসায়। ধরা যাক, আপনি আগাম গাড়ি বুক করলেন, টাকার অঙ্ক ফাইনাল হল, অ্যাডভান্স পাঠালেন, পৌঁছনোর পর, গাড়ির দাম বেড়ে গেল। নিতে হলে নিন নয়তো, বাড়ি চলে আসুন।

আরও পড়ুন- সাবধান! গ্যংটক হোটেলের তোলাবাজির ফাঁদ

হোটেলের চিত্রও তাই। আগাম টাকা দিয়ে হোটেলে পৌঁছে দেখলেন, আপনার রুম অন্যদের বেশি দামে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর প্রশাসনিক সহায়তা?নেই বললেই চলে। স্থানীয়দের দাবি, সিন্ডিকেটে জড়িত ১৩ তলা বিল্ডিঙের সব তলা। ফলে মৌরসীপাট্টা চলছে পুরোদমে। অতি সম্প্রতি কালিম্পং জেলার তিনটি অফবিট লোকেশন সাংসের, লুংচু ও সামথার বেড়াতে গিয়ে এমনই এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন কলকাতার বাসিন্দা শম্পা দাসের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবেরা। কলকাতায় ফিরে তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতা লিখেছেন একটি ভ্রমণ গ্রুপে। রইল তাঁর পুরো অভিজ্ঞতা।

উত্তরবঙ্গ ভ্রমণের এক তিক্ত অভিজ্ঞতা.…শম্পা দাস।

গত সাতদিনের উত্তরবঙ্গ সফর সম্পূর্ন করে উনিশে অক্টোবর সকালে বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু আজ কোন ভ্রমণ কাহিনী নয় এক অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব যার জন্য আমাদের শেষের দুদিন একেবারে মাটি হয়ে গেছিল। গ্রুপের একজন মেম্বার হিসেবে এটা জানানোটা আমার কাছে অত্যন্ত জরুরী যাতে ভবিষ্যতে কোন বন্ধুরা বেড়াতে গিয়ে আমাদের মত বিপদে না পড়েন।

ষষ্ঠীর দিন রাতের ট্রেন ধরে আমরা কালিম্পং জেলার তিনটি অফবিট লোকেশন সাংসের, লুংচু ও সামথার সফরে বেরিয়ে পড়েছিলাম। প্রথম দুটি স্পট খুব ভালোভাবে ঘুরে যেদিন লুংচু থেকে সামথার যাই সেদিন থেকেই শুরু হলো সমস্যা।

যেহেতু আমাদের পাঁচটা ফ্যামিলি (মেম্বার ১২জন)তাই প্রায় সাত মাস আগেই আমি হোম স্টে ও গাড়ি বুক করে রেখেছিলাম। গ্রুপের ই সাহায্য নিয়ে লুংচু থেকে সামথার গাড়ি বুক করি ‘কিরন ‘নামে এক ড্রাইভারের কাছে। ১৬ই অক্টোবর সকালে আমাদের সামথার যাবার কথা সেই মত ১৪ই অক্টোবর থেকে ওনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু কোনভাবেই ওনার ফোন পাওয়া যাচ্ছিল না।

যদিও বা অনেক চেষ্টায় পেলাম তখন উনি বললেন আজ নয় কাল কথা বলব। পরের দিন সকালে ফোন করতে বলেন রাতে কথা বলব। একটা কথা বলেই সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দিচ্ছেন। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না অথচ যাবার আগে ও ওনার সাথে কথা হয়েছিল। অগত্য হোম স্টে র যিনি দেখভাল করেন (অশোক রাই) তার শরণাপন্ন হলাম। তখন উনি’ কিরণের’ সাথে যোগাযোগ করলে’ কিরণ’ ওনাকে বলেন উনি একটা গাড়ি দেবেন আর একটা গাড়ি যেন অশোক ঠিক করে দেয়। আমাদের দুটি গাড়ির প্রয়োজন ছিল।

যেহেতু পিক সিজন তাই অনেক চেষ্টা করে অশোক একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে। যাবার আগে কিরণের সাথে ৪০০০টাকার ডিল হয় কিন্তু ওখানে যাবার পর উনি ৪৫০০টাকা দাবী করেন অথচ আমার কাছে ওনার সাথে ডিলিং এর সব ডকুমেন্টস ই ছিল। কিন্তু তখন আমরা পড়েছি ফাঁপরে তাই শেষমেশ বাধ্য হয়েই রাজী হতে হয়। কিন্তু তখন ও গল্প অনেক বাকি ছিল তা বুঝিনি।

আরও পড়ুন- গাড়োয়াল সফরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে, দেখে নিন কী দেখবেন? কেন দেখবেন?

পরদিন সকালে দুটি গাড়ী করে লুংচু থেকে লাভা আসার পর যে গাড়িটা কিরণ দিয়েছিল সেটা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তখন জানতে পারি এই গাড়িটা যাবে না অন্য গাড়ি আসবে। অপেক্ষা করতে থাকি এদিকে ওয়েদার ক্রমশঃ খারাপ হয়ে যাচ্ছে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি এটাই’ কিরণ ‘স্যারের নির্দেশ।

হটাৎ করেই উনি ‘স্যার ‘বনে যান। যাই হোক অনেকটা পর গাড়ি এলে আবার সবাইকে মালপত্র সমেত শিফট করা হয়। তার একটু পরেই একজন মস্তান গোছের মানুষ (মাথায় কাউবয় টুপি দুপাশে দুটি বিনুনী) কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এসে দুটি গাড়ির পুরো টাকাটাই দাবী করেন। ড্রাইভাররা সব ভয়ে জুজু হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের কাছে জানলাম উনি ই কিরণ স্যার।

আমরা বলি আমরা পৌঁছে টাকা দেব কিন্তু উনি কোন কথাই শুনতে চান না। একটা কথা বলেই চলে যাচ্ছেন আর আমরা তার পিছনে দৌড়াচ্ছি, সে এক বিচ্ছিরি পরিস্থিতি। আমরা ওনাকে ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি উনি কোন কথাই শুনতে চান না। রীতিমত হুমকি দিতে থাকেন উল্টে ড্রাইভারদের বলেন গাড়ি লক করে আমাদের রাস্তায় ফেলে চলে যেতে। কিন্তু কেউই কোন প্রতিবাদ করল না এতটাই ওনার দাপট। শেষমেষ বিপাকে পড়ে আমরা পুরো টাকাটাই দিতে বাধ্য হই। আমাদের চোখের সামনে উনি গাড়ী প্রতি ৫০০টাকা নিজের কাছে রেখে বাকি টাকা ড্রাইভারকে দেন।

আরও পড়ুন- ছোট ছুটির খোঁজে বেড়িয়ে আসুন ওডিশা

রীতিমত হুমকি দিয়ে বলেন লাভায় সিন্ডিকেট আছে এখানে এভাবেই গাড়ি চলে। আমরা পরে বুঝলাম সর্বত্র ই সিন্ডিকেট রাজ, তোলাবাজি, দাদাগিরির রমরমা। বেড়াতে গিয়ে ও রেহাই নেই। এই টুরিষ্ট দের ওপর নির্ভর করেই ওদের জীবন জীবিকা নির্বাহ হয় অথচ তাদের সাথেই এমন ব্যাবহার মনকে বড় দুঃখ দেয়। বরাবরই জেনে এসেছি পাহাড়ী মানুষ জন ভীষন সৎ সহজ সরল, কিন্তু এমন কিছু বদ স্বভাবের মানুষের জন্য বাকিদের কপালে বদনাম জোটে।

আমার গ্রুপের বন্ধুদের কাছে বিনীত অনুরোধ লাভার দিকে যাবার আগে সব কিছু ভালোভাবে যাচাই করে তবেই গাড়ি বুক করবেন, আর এই’ কিরণের’ খপ্পরে যেন কেউ পড়বেন না। আমি ওনার নাম ও ফোন নম্বর জানিয়ে দিলাম- কিরণ-৯৯৩২২৭০৭৪৮

এরপর এর চেয়েও অনেক বড় সমস্যার মুখোমুখি হই আমরা। সাম থারে Ammihud হোম স্টে র পাঁচটা রুম আমাদের মার্চ মাস থেকে এডভ্যান্স বুকিং করা ছিল। আগের দিন ১৫ই অক্টোবর ওনাদের সাথে আমার ফোনে কথা হয়, ওনারা লাঞ্চ রেডি রাখবেন সেইমত আমাদের তাড়াতাড়ি পৌঁছে যেতে বলেন। কিন্তু হটাৎ করেই রাস্তার মাঝে ওনাদের ফোন আসে যে আমাদের বুকিং ক্যান্সেল। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে, এই পিক সিজন এ এতজন মেম্বার নিয়ে কোথায় যাব, কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।

ফোনে কথাবার্তা চলতে থাকে, আমরা কোনভাবেই মানতে রাজি হই না কারণ আমাদের কাছে বুকিং এর সব ডকুমেন্টস ই ছিল। কিন্তু ওনারা বারবারই বলতে থাকেন ওনারা রুম দিতে পারবেন না। সব শোনা সত্বেও আমরা ওখানেই যাবার সিদ্ধান্ত নি কারণ সেই মুহূর্তে আমাদের আর কিছু করার ছিল না। ফোনে ওনাদের জানিয়ে দি আপনারা লাঞ্চ আর রুম রেডি রাখুন আমরা ওখানেই যাচ্ছি।

আরও পড়ুন- এক অদ্ভুত আঁধারে বাংলাদেশের ‘কাশ্মীর’ প্রায় সরগরম হয় কেন পার্বত্য চট্টগ্রাম?

লাভা থেকে লোলেগাও রাস্তা অত্যন্ত খারাপ থাকার কারণে প্লাস গাড়ির ঝামেলার জন্য আমাদের সামথার পৌঁছতে প্রায় তিনটে বেজে যায়। দূর থেকেই দেখতে পাই আমাদের বুকিং করা রুমে টুরিষ্ট ভর্তি।গিয়েই একপ্রস্থ ঝামেলা শুরু হয়। আমাদের বুকিং করা পাঁচটা রুম ওনারা অন্য কাউকে অর্থাৎ ডবল বুকিং দিয়েছেন। এ ব্যাপারে হোম স্টে র মালিক কিছুই জানেন না, উনি আগের দিন সব জানতে পেরেছেন। ওনার ছেলে ও ভাই এসব দেখাশোনা করে তারাই এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে।

আমরা তো কিছুতেই মানতে চাই না, প্রচুর বাকবিতণ্ডা হয়। তবে হোম স্টে র মালিক অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী। উনি বারবার হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে থাকেন। ছেলের এই আচরণের জন্য উনি যে ভীষন ভাবে অনুতপ্ত সেটা বুঝতে পারি ছেলেকে হোম স্টে র ব্যবসা করে দিয়েছেন কিন্তু ছেলের ওপর নজরদারি করে উঠতে পারেননি। ছেলে নিজের একাউন্ট এ টাকা রিসিভ করে ডবল বুকিং নিয়েছে।

আরও পড়ুন- রাজস্থানের জনপ্রিয় সার্কিট ট্যুরের খুটিনাটি

বিকাল চারটে বেজে যাওয়ায় আমরা লাঞ্চ করার সিদ্ধান্ত নি। তারপর উনি আমাদের একটা নতুন হোম স্টে (গ্রিন ক্যানভাস) এ আমাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। উনি বলেন ওটা একদম নতুন, সব রুম ই ভিউ ফেসিং, ওখানে আপনারা চলুন বাকি সব ব্যবস্থা আমি করে দেব। অগত্যা কোন উপায়ন্তর না দেখে আমরা ওখানে যাব ঠিক করি। কিন্তু

আমরা ঠিক করি প্রথমে দেখব তারপর যদি পছন্দ হয় তবেই স্টে করব। সেইমত উনি নিজে ড্রাইভ করে আমাদের তিনজনকে ওখানে নিয়ে যান। প্রায় এক ঘন্টা যাবার পর ঘন জঙ্গলের মধ্যে রাস্তার একদম গা ঘেঁষে চারতলা ধর্মশালা টাইপের একটা বাড়িতে নিয়ে যান যদিও হোম স্টে টা নতুন কিন্তু জনমানবশূন্য। ২৪টা রুমের একটিতেও লোক নেই। ধারে কাছে কোথাও কিচ্ছু নেই একদম নির্বাসনে থাকার মত অবস্থা। আমাদের একদমই পছন্দ হয়না অগত্যা উনি আমাদের নিয়ে ফিরে আসেন।

এদিকে সন্ধ্যে নেমে এসেছে, টিমের বাকি সদস্যরা অধৈর্য্য হয়ে পড়েছে। শেষমেষ বাধ্য হয়ে উনি ওনার বাড়ির চারটে রুম (পাঁচটার পরিবর্তে) আমাদের এরেঞ্জ করে দেন। যদিও টয়লেট সংখ্যায় কম ছিল কিন্তু এইভাবেই এডজাস্ট করে আমরা একটা রাত ওখানে কাটাই।

আরও পড়ুন- জানুন কালাপানি কারাগারের অজানা কথা, সঙ্গে আন্দামানের ট্যুর প্ল্যান

কিন্তু রাত থেকেই উনি আমাদের নানারকম প্রলোভন দেখাতে থাকেন যেহেতু আমাদের দুদিন বুকিং ছিল, তাই উনি পরদিন আমাদের কালিম্পং যেতে বলেন এবং থ্রি স্টার হোটেলে থাকা, খাওয়া ও ঘোরানোর সব কিছু ব্যবস্থা ফ্রি তে করে দেবার লোভ দেখাতে থাকেন। ওনার বুকিং এজেন্ট (যাকে আমি চিনি না) তিনিও ফোন করে লাটাগুঁড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেবার কথা বলেন। কিন্তু আমরা কোন ফাঁদেই পা দিই না।

পরদিন সকালে ১২জনের একটা টিম চেক আউট করায় আমরা বলি যে গতকাল এডজাস্ট করেছি আজ আমাদের এখানেই রুম দিতে হবে। ওনারা রাজী হন কিন্তু লাগেজ নিয়ে তড়িঘড়ি হোম স্টে তে চলে যেতে বলেন। কারণ আবার ওই দিন ও অন্য একটা গ্রুপের বুকিং আছে তারা এসে যাবে। তখনও রুম পরিষ্কার করা হয়নি, আমরা লাগেজ নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকি।

ইতিমধ্যে সামনের একটি চার্চ এ প্রেয়ার শুরু হওয়ায় আমাদের দুজন মহিলা মেম্বার বাদে বাকি সকলেই চার্চ এ চলে যাই।প্রেয়ার শেষ হবার পর রাস্তা দিয়ে আসতে গিয়ে প্রচণ্ড চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পাই হোম স্টে থেকে। আমরা দৌড়ে গিয়ে দেখি সেখানে তখন ব্যাপক গন্ডগোল হচ্ছে।

অন্য একটি গ্রুপের যাদের সেদিন বুকিং ছিল তারা ইতিমধ্যে ই হোম স্টে তে পৌঁছে সোজা রুমে গিয়ে আমাদের দুজন মহিলা সদস্য কে ধাক্কা মেরে রুমে ঢুকে বিছানায় জুতো পরে উঠে পরে ভীষণ গন্ডগোল করতে থাকেন। মালপত্র সব ছুড়ে ফেলে দেন। মহিলাদের গায়ে হাত দিয়ে ঠ্যালাঠ্যেলি করে যে আচরণ করতে থাকেন সেটা একপ্রকার চূড়ান্ত অসভ্যতার পর্যায়ে পড়ে। হোম স্টে র মালিক, তাদের সব কর্মচারী এবং গ্রামের সব লোকজন জড়ো হয়ে যায়। ওনারা আমাদের হুমকি দিতে থাকেন রুম থেকে বেরিয়ে যাবার জন্য। প্রচণ্ড চিৎকার চেঁচামেচি ঝামেলার মধ্যে হোম স্টে র মালিক ওদের ধাক্কা দিয়ে রুমের বাইরে বের করে দিয়ে দরজা লক করে দিতে বলেন।

আরও পড়ুন- দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে বাইকাররা, জবাব খুঁজলেন অভিজ্ঞ বাইকার সাগর সেন

আচমকা এমন একটা অপ্রীতিকর অবস্থার মুখোমুখি হওয়ায় আমরা রীতিমত স্তম্ভিত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। আগের দিন এসেও আমরা রুম পাইনি কিন্তু এভাবে জোর করে কারোর রুমে ঢুকে পড়িনি। ওনারা রিসেপশন এ দেখা না করে মহিলাদের গায়ে হাত দিয়ে পেশী শক্তির প্রকাশ দেখিয়ে ঘর দখল করতে চেয়েছিলেন।

বাঙ্গালী হিসাবে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে আসে। শিক্ষা দীক্ষার কি নমুনা আমরা বাইরে গিয়ে প্রকাশ করি, ছি ছি। অথচ একজোট হয়ে আমরা হোম স্টে র এমন কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতে পারতাম তা না করে গায়ের জোর দেখিয়ে নিজেরা কতটা ভদ্র শিক্ষিত তার পরিচয় দিলেন।

বাইরে যাবার পর ওদের সাথে কি কথাবার্তা হলো জানিনা, হোম স্টে র মালিক ওনাদের নিয়ে অন্য কোথাও চলে গেলেন। তারপর হোম স্টে র মালিক থেকে ওনাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্য ও সকল কর্মচারী বারংবার হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে থাকলেন।

আমাদের সকলেরই তখন মন মেজাজ খারাপ, সারাটা দিন প্লাস আগের দিন, পুরো দুটো দিন নষ্ট হয়ে গেল। বহু জায়গায় ঘুরেছি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কোনদিন হইনি। হোম স্টে র মিস ম্যানেজমেন্ট এর জন্য প্রতিটা পার্টিকে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হলো।

পরদিন চেক আউট করার সময় ওনারা ক্ষমা চেয়ে প্রথমদিনের কোন টাকা নিতে চাননি, আর দ্বিতীয় দিনে চারটে রুম দেওয়ায় একটা রুমের পেমেন্ট নেন নি। তারপরেও মালিক বলতে থাকেন আপনারা যদি কিছু পেমেন্ট না ও করেন তাতেও কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু আমরা প্রথমদিনের খাবার পুরো টাকাটা ও তার সাথে পরের দিনের চারটে রুমের ভাড়া প্লাস খাবার টাকাটা পেমেন্ট করি।

এত দুর্ভোগ পোহানো সত্বেও বলব হোম স্টে র মালিক ও সব কর্মচারীদের ব্যাবহার অত্যন্ত ভদ্র। ছেলের কৃতকর্মের ফল বাবাকে ভোগ করতে হলো নিজের মান সম্মান বিসর্জন দিয়ে। এভাবে সফরের শুরুটা খুব ভালোভাবে হলেও শেষটা ভীষণ অশান্তি গন্ডগোলের মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয়।

বন্ধুদের সতর্ক করে দিয়ে জানাচ্ছি সামথার এ Ammihud হোম স্টে বুক করলে সব কিছু ভালোভাবে দেখে নিয়ে তবেই বুকিং করবেন নাহলে আমাদের মত দুর্গতির সন্মুখীন হতে হবে।

এ বিষয়ে হোমস্টে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কোনও কথা বলতে চাননি। পরে মালিকের ভাইয়ের নম্বরে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান, একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছিল। বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা ক্ষমাও চেয়েছিলাম। কথা দিচ্ছি এমন ঘটনা আর ঘটনবে না। অভিযুক্ত কিরণের দাবি, আসলে যে রেট দেওয়া হয়েছিল, তা পুরনো রেট। কিন্তু পুরনো রেটে কোনও ড্রাইভার যেতে চায়নি, তাই কিছু টাকা বড়াতে বলা হয়েছিল। আর তেলের দাম যা বেড়েছে, সেখানে কাজ করা মুশকিল। ওনাদের যদি খারাপ লেগে থাকে, তাহলে ক্ষমাপ্রার্থী।

Jerpanu Lepcha-৭৫৮৬৮২৯১৮৬(মালিকের ছেলে)

মালিকের ভাই৭৩৬৪৮১৪৩০৮

এই দুটি নাম্বার এ কোন যোগাযোগ করবেন না, এদের সাথে কথা বলেই আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল।

এমন কোনও অভিজ্ঞতা আপনার থাকলে ই মেল করুন- orbitnewsindia@gmail.com সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে ভুলবেন না।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

পাশের রাজ্যেই রয়েছে প্রকৃতির এক আদিম জায়গা, বেড়িয়ে আসুন চুপিসারে

স্বাতী চ্যাটার্জি- কাশ্মীর, কেরালা, দক্ষিণভারত, উত্তরভারতসহ গোটা ভারততো বেড়াবেন। আমাদের দেশে দেখার জায়গা অনেক। প্রাকৃতি, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!