অর্বিট নিউজ ডেস্ক– সারা বিশ্বেই এক অন্যতম শিল্প বলে স্বীকৃত পর্যটন শিল্প। কিন্তু অপেশাদারদের জেরে ভারতের এই শিল্প এখনও আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছতে পারেনি। এর জন্য দায়ী প্রশাসনিক উদাসীনতা ও কর্মকতাদের অজ্ঞতা। আর সেই সুযোগে, অপেশাদারদের ভিড় বাড়ছে এই শিল্পে।
অতি সম্প্রতি কলকাতার একটি ট্রাভেল এজেন্সি, সিকিমের একটি এজেন্সির সঙ্গে টাই আপ করে তার গেস্টদের বেড়ানোর জন্য গাড়ি ও হোটেল ভাড়া করেন। অভিযোগ, সিকিমের ওই এজেন্সি বুকুঙের সময় যে মুখ মিষ্টি ভাষায় কথা বলেছিল, যাওয়ার পর, বুকিং করার পরেই, তাদের রূপ বদলে যায়।
হোটেল কর্মা, গ্যাংটক
কলকাতার এজেন্সির কর্ণধার অরিন্দম শীলের অভিযোগ করে বলেন, গত ১২ ই অক্টোবর ১১জন মিলে একটি নর্থ সিকিম যাত্রা শুরু করি । সেখানে আমাদের সহযোগি এজেন্ট ছিলেন সনজোক রাই। তার সঙ্গে আমার পরিচয় সূত্র অরুণ রাই। ফেসবুকে পরিচয়, তাঁর রামধুরায় হোমস্টে আছে, তিনি সনজোক রাইয়ের রেফারেন্স দিয়েছিলেন। (সনজোক রাইকে কে নিজের ভাগ্নে বলে পরিচয় দেন ) ।
১৩ তারিখ আমাদের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে পিক আপ করার পর আমরা যখন গ্যাংটক পৌঁছোই। সেখানে আমাদের বুকিং অনুযায়ী ৫ টি রুম আমাদের দেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা সেখানে গিয়ে ৪ টি রুম পাই এবং মারাত্মক অসুবিধার মধ্যে দিয়ে , এক রকম ঠাসাঠাসি করেই রুম শেয়ার করে আমার গেস্ট কে রাত্রিযাপন করতে বাধ্য হতে হয়।
পরের দিন ১৪ তারিখ আমাদের বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, লাচেন, লাচুঙের উদ্দেশে। কিন্তু আমাদের একটি সদস্যের শারীরিক অসুস্থতার কারণে পুরো পরিবার (৬জন) ট্যুর ক্যান্সের করে নীচে নেমে আসেন। ফলে আমাদের লাচেন, লাচুঙের জন্য দুটি গাড়ির বদলে একটি গাড়ি লাগবে বলে দেওয়া হয়। এর পরেই, তারা তোলাবাজির ও ব্ল্যকমেলিঙের কাজ শুরু করে।
প্রথমেই বলে, দুটি গাড়ি ক্যান্সেল করে দেওয়া হয়েছে। ফলে আবার টাকা দিয়ে একটি গাড়ি নিতে হবে। প্রায় জোরজবরদস্তি, এবং সেই গাড়ির ভাড়া প্রায় দ্বিগুন। আমি যেহেতু, নীচে নেমে এসেছিলাম অসুস্থ সদসদ্যের পরিবারকে ছাড়তে, তাই গ্যাংটকে থাকা অন্য গেস্টদের পরিকল্পনা ছাড়াই নামচিতে নিয়ে যাওয়া হয়। যা ট্যুর পরিকল্পনার বাইরে। সেখানেও এক্সট্রা গাড়ির টাকা আদায় করা হয়, আমাকে জানানো হয়, টাকা না দিলে গেস্টদের নামানো হবে না। আর লাচেন, লাচুংতো পারমিট পায়নি এই অভিযোগ তুলে ঘোরানোই হল না, অথচ হোটেলের টাকা পুরো নিয়েছিল।
অরিন্দমবাবু আরও বলেন, আমি যা বুঝলাম, এটা একটা চক্র আর পর্যটন ব্যবসায় সরাসরি ডাকাতি। ভারতের কোনও জায়গায় দুটো গাড়ি জায়গায় একটা গাড়ি ক্যান্সেল করলে, হতে পারে সে দুটো গাড়ির টাকা নিল। ঠিক আছে। কিন্তু দুটো গাড়ি বাতিল করে তার পুরো টাকা হজম করে, আরও একটি গাড়ি বেশি টাকায় জোর করে নিতে বলা, জাস্ট ডাকাতি।
আরও পড়ুন- রাজস্থান সফর কীভাবে সাজাবেন?
আরও পড়ুন- আন্দামানের ট্যুর প্ল্যান ও কালাপানি কারাগারের ইতিহাস
আরও পড়ুন- গাড়োয়াল সফরে কী দেখবেন, কেন দেখবেন?
আর লাচেন লাচুঙের প্যাকেজ করেও, সেখানে না নিয়ে গিয়ে, হোটেলের টাকা মারল। ধরুন আপনি কোথাও গেছেন, তিন দিনের পাঁচটি রুম বুক করেছেন, তার মধ্যে দুটি বাতিল করলেন, হতে পারে, সেই দুটোর টাকা আপনাকে পুরো দিতে হল। কিন্তু যদি বলা হয়, পুরো ৫টি রুমই বাতিল, আবার নতুন করে টাকা দিয়ে রুম বুক করতে হবে। এটা কী ধরণের পেশাদারিত্ব। অরিন্দমবাবুর দাবি, তিনি নিশ্চিত গ্যাংটকে কর্মা হোটেল থেকেই এই চক্রটি চলে।
ওদের কাছে প্যাকেজ, গাড়ি বুক করলেই ওরা পুরো ফাঁদ তৈরি করে। আর গেস্টদের যে জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথা, তার বদলে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে বাড়তি টাকা আদায় করে। আগাম টাকা দিয়ে ট্যুর বুক করে গেলেও, নানা অজুহাতে আপনার ট্যুর বাতিল করিয়ে, বাড়তি টাকা নিয়ে আপনাকে অন্য ট্যুর গুঁজে দেবে।
অরিন্দমবাবুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ করা হয়, সনজোক রায়ের সঙ্গে। তাঁর প্রথম দফায় দাবি ছিল, অরিন্দমবাবু টাকা না দিয়ে পালিয়েছেন। কথার মাঝে চেপে ধরতে, পরে আবার স্বীকার করেন, পুরো টাকাই দিয়েছেন। তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হয়, আগাম ট্যুর প্যাকেজের বুকিং নিয়ে, লাচুং লাচেন, ঘোরাতে পারেনি, পারমিট জোগাড় করতে পারেননি, এটাতো আপনার ফল্ট, সেক্ষেত্রে আপনি সেখানকার টাকা কী করে নিলেন? সার্ভিসতো আপনি দিতে পারেননি? এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
তাঁর দাবি, অরিন্দমবাবু, গাড়ি ক্যান্সেল করেছিলেন। তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, দুটি গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ি ক্যান্সেল করা হল, ধরে নিলাম, শেষ মুহূর্তে ক্যান্সেলের জন্য দুটি গাড়ির ফুল পেমেন্ট নেবেন। কিন্তু আপনি দুটো গাড়ির টাকাতো নিয়েইছেন, আবার নতুন করে বেশি দাম দিয়ে গাড়ি বুক করতে বাধ্য করিয়েছেন কেন? এখানে সনজোক বাবুর দাবি, এখানে গাড়ির ক্রাইসিস, রয়েছে একবার ক্যান্সেল করলে, সহজে পাওয়া মুশকিল।
তাঁকে আবার প্রশ্ন করা হয়, দুটোর মধ্যে একটি গাড়ি ক্যান্সেল করেছিলেন, আপনি কী করে দুটো গাড়ি ক্যান্সেল করলেন? দুটোর ফুল পেমেন্ট নিলেন, আবার সেই দিনেই বেশি দামে নতুন গাড়ি বুক করাতে বাধ্য করলেন কেন? এরপরেই তিনি ফোন কেটে দেন।
বিষয়টি নিয়ে সিকিম ট্যুরিজিম, পশ্চিমবঙ্গ ট্যুরিজিমকেও জানিয়েছেন অরিন্দমবাবু, কিন্তু কোথা থেকেও কোনও সুরাহার ইঙ্গিত কপি লেখার সময় পর্যন্ত আসেনি। স্থানীয় সূত্রের খবর, এই হোটেলে এরা এমন ঘটনা ঘটায়, যে টাকা বুকিং রফা করে, ওখানে পৌঁছনোর পর নানা অজুহাতে ডবল টাকা আদায় করে।
আমাদের তরফে সিকিম ট্যুরিজিম দফতরে যোগাযোগ করা হয়। এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছেন। অভিযোগের সারবত্তা থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভ্রমণ, স্বাস্থ্য, সাহিত্যসহ নানা খবরের আপডেট পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করুন