Breaking News

পথদুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন একাংশ বাইকার, জবাব খুঁজলেন অভিজ্ঞ বাইকার সাগর সেন

সাগর সেন সম্প্রতি খুব দুঃখজনক একটা ঘটনা ঘটে গেছে,কলকাতার একজন বাইকার স্পিতি উপত্যকা ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে বিহারে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন এবং মারা যান।

আগে যখনই এমন দুঃখজনক কোন ঘটনা ঘটেছে মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়েছে এই সূত্র ধরে পুরো বাইকিং কমিউনিটিকে বদনাম করায় নেমে পড়েছে। এবারও তার ব্যত্যয় নেই। কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখলাম এই যে আজকাল অনেক তরুণ-তরুণী মোটরসাইকেল নিয়ে দূর ভ্রমণে বের হচ্ছেন, ভ্লগ করছেন, সেই ব্যপারটাকেই কটাক্ষ করা হয়েছে।

মূল বক্তব্য হল যাঁরা এমন বেরোচ্ছেন বেড়াতে তাদের নাকি কোনরকম সেফটি সেন্স নেই, তাঁরা বেপরোয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখনদারীই তাঁদের আসল উদ্দেশ্য এবং অধিকাংশ বাইকার কোনরকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই দুর্গম পাহাড়পর্বতে চলে যাচ্ছেন এবং তার জন্যই যাবতীয় দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রকারান্তরে এইসব প্রতিবেদনের মাধ্যমে পুরো বাইকিং কমিউনিটির ওপরে আঙুল তোলা হচ্ছে।

ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে এসব প্রতিবেদনের বক্তব্য আংশিকভাবে সত্য, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেসব রিপোর্টার এগুলি লেখেন তাঁদের বাইকিং এর সম্বন্ধে কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তাই তাদের বিবরণ অনেকটাই একপেশে, পাবলিক সেন্টিমেন্ট খুঁচিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে লেখা হয়। এর ফলে দেখেছি সাধারণ মানুষের মনে বাইকারদের সম্মন্ধে একটা বিবমিষা তৈরী হয় যেটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এতে নতুন যাঁরা মোটরসাইকেল ট্যুরিং এর স্বাদ নিতে চান তাঁদেরও মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া হয়।

এই প্রেক্ষিতে কয়েকটি জিনিস ভালো করে বুঝে নেওয়া দরকার। মোটর সাইকেল ভ্রমণ কিছুটা অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের পর্যায়ে পড়ে, এবং তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, ঠিক যেমন মাউন্টেনিয়ারিং বা হাই অল্টিচ্যিউড ট্রেকিং এর ঝুঁকি আছে। মাউন্টেনিয়ারিং এর ক্ষেত্রেও মাঝেমধ্যেই এমন দুর্ঘটনা ঘটে, মৃত্যু হয় এবং সেখানেও পাহাড় সম্মন্ধে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ রিপোর্টাররা ভুলভাল দোষারোপমূলক লেখালেখি করে যান।



যেটা আগেই বলছিলাম, প্রোবাবিলিটির অঙ্কের হিসেবে যদি অনান্য মাধ্যম যেমন, গাড়ি, বাস, ট্রেন বা প্লেনের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে মোটরসাইকেলে দূরযাত্রা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আবার ওই একই অঙ্কের হিসেবে ট্রেনযাত্রা বা প্লেন যাত্রার তুলনায় রোড ট্রীপ, সে গাড়িতেই হোক বা বাইকে, সবসময়েই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের দেশে হাইওয়ে হোক বা এমনি রাস্তা, সবসময়েই যেন মরণফাঁদ, যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা থাকে।

এদেশের সিক্স লেন হাইওয়েতে গরু, কুকুর, ছাগল মুরগী অবাধে ঘুরে বেড়ায়, উলটো দিক দিকে ট্রাক ঢুকে পড়ে, সাইকেল, বাইক, পথচারী বিন্দুমাত্র না তাকিয়ে সোজা রাস্তার মাঝখানে এসে পড়ে, টোল রোডে বড়বড় গর্ত থাকে, আনমার্কড বাম্পার থাকে, আরো কতশত এমন ব্যপার যার থেকে যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা হতে পারে। সমস্যা হল আমি ভুল না করলেও ষোল আনা সম্ভাবনা থাকে অন্যের ভুলের কারণে দুর্ঘটনায় পড়ার।

সুতরাং ভারতবর্ষের হাইওয়েতে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানোর অর্থ প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সঙ্গে লুকোচুরি খেলা। এক্ষেত্রে গাড়ি এবং মোটরসাইকেলের ঝুঁকির সম্ভাবনা তুলনা করলে বাইকের পাল্লা একটু ভারী হবে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে তফাৎ হতে পারে, এই যেমন সরু পাহাড়ি রাস্তায় একটা গাড়ির খাদে গড়িয়ে পড়ার যা সম্ভাবনা, একটি বাইকের সে সম্ভাবনা তার থেকে অনেক কম। সুতরাং সেখানে বলা যেতে পারে বাইক যাত্রা অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ। আবার সমতলে হাইস্পিড এক্সপ্রেসওয়েতে বাইকের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কিছুটা বেশিই থাকে।

অ্যাক্সিডেন্ট ঘটার সম্ভাবনায় অঙ্কের হিসেবে খুব একটা তফাৎ না হলেও তফাতটা হয়ে যায় অন্য জায়গায় এবং সেটা হচ্ছে ফেটালিটি ফ্যাক্টর। গাড়ির ক্ষেত্রে যদি অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে তাহলে আরোহীদের চোট পাওয়া এবং সেই চোটের থেকে Crippling Injury বা মৃত্যুর সম্ভাবনা বাইকে এক্সিডেন্টের থেকে অনেক কম।

ছোটোখাটো অ্যাক্সিডেন্টে হয়ত গাড়ির ক্ষতি হবে, কিন্তু আরোহীরা যেহেতু চারচাকার উপর একটা ধাতব খাঁচার মধ্যে আছেন, তদুপরি সিট বেল্ট, এয়ারব্যাগ এসবের দৌলতে তেমন মারাত্মক চোট নাও পেতে পারেন। অন্যদিকে চলন্ত বাইকে সামান্য এদিকওদিকই কিন্তু মারাত্মক চোট, এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।

যাঁরাই বাইক নিয়ে পথে নামছেন, সে রেগুলার অফিস যাওয়া আসাই হোক বা হাইওয়ে ধরে লম্বা সফর, এই রিস্ক ফ্যাক্টরটা সব সময়ে মাথার মধ্যে রাখতে হবে, ধরেই নিয়ে চলতে হবে যে যেকোন মুহূর্তে কোনরকম পূর্বসঙ্কেত ছাড়াই যেকোন ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে।

এই সেন্সটা মস্তিষ্কে বসিয়ে নিলে নিজেকে মানসিকভাবে তৈরী রাখা যায়, রিফ্লেক্স ভালো থাকে, রাস্তায় আচমকা কোন বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরী হলে চটজলদি রেসপন্ড করা যায়। সময়বিশেষে এটাই কিন্তু জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে তফাৎ গড়ে দিতে পারে৷

মোদ্দাকথা যেটা বলার চেষ্টা করছি মোটসাইক্লিংকে কোনোভাবেই হালকা করে নেওয়া উচিৎ নয়, পরিস্থিতি বিচার করে রিস্ক ফ্যাক্টর মেনে চলতে হবে, গা ছাড়া মনোভাব, ও সব কোন ব্যাপার নয় গোছের মনোভাবই বিপদ ডেকে আনে।

ইদানিং মোটরসাইকেল ট্যুরিং এর চল খুবই বেড়েছে। এটা স্বাভাবিক, এর কয়েকটি কারণও আছে।


১। আগের চেয়ে রাস্তাঘাট এখন অনেক ভালো হয়েছে, ফলে মানুষে বেরোতে উৎসাহ পাচ্ছেন। জার্ণি স্মুথ হচ্ছে, সময় কম লাগছে।

২। এখন বিভিন্ন ধরণের এবং পাওয়ারফুল মোটর সাইকেল পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো ট্যুরিং এবং লাইফস্টাইল স্টেটমেন্টও বটে। আর ইজি ফাইন্যান্স এর সুবিধা থাকার জন্য সেইসব মোটরসাইকেল কেনাও খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। ফলে অনেকেই পছন্দের বাইক কিনে বেরিয়ে পড়ছেন।

৩। সোশ্যাল মিডিয়ায় দৌলতে মোটরসাইকেলে বেড়ানোর ছবি, ভিডিও, স্টোরি ইত্যাদি দেখে বহু মানুষ বাইক ট্যুরে উৎসাহিত হচ্ছেন। নিত্যনতুন বাইকিং গ্রুপও হচ্ছে এবং এসব গ্রুপেই হোক বা সোলো, অনেকেই পথে নামছেন।

এটাই ভবিতব্য এবং এটাকে নিয়ে অযথা সমালোচনা বা নেগেটিভ কথা বলা কাম্য নয়। যেটা দরকার সেটা হল সচেতনতা বাড়ানো, যাতে দুর্ঘটনার হার কমে আর সবাই নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারেন। এই সূত্রেই কয়েকটা জিনিস দেখে নেওয়া যাক।

মোটরসাইক্লিং একটা যথেষ্ট ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জিং অ্যাক্টিভিটি, বিশেষ করে লং রাইডের ক্ষেত্রে। রাইডারের শারীরিক সক্ষমতা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সক্ষমতায় যদি কোনরকম ঘাটতি থেকে থাকে তাহলে কিন্তু অ্যাক্সিডেন্টের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।

কারুর যদি কোন শারীরিক সমস্যা থেকে থাকে (Pre-existing illness), মেডিকেশন চলে, তাহলে রাইড প্ল্যান করার সময় এগুলো ফ্যাক্টর করেই করতে হবে। ওষুধ সঠিক সময়ে খেতে হবে, বিশেষ করে প্রেসার, সুগার এসবের ওষুধ। ডায়াবিটিস, হাই বা লো প্রেশার, স্পন্ডিলাইটিস এগুলো কিন্তু হঠাৎ ট্রিগার করে গিয়ে ভোগাতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে রিস্ক থেকেই যায়।

বহুদিন ধরে বাইক চালালে অনেকেরই স্পন্ডিলোসিস ডেভেলপ করে, সেক্ষেত্রে অভ্যাস না থাকলে হঠাৎ ভারী হেলমেট, রাইডিং গিয়ার পরে লং রাইডে বেরিয়ে পড়লে অস্বস্তি ডেকে আনা হবে। প্রোটেক্টিভ গিয়ার জরুরী, কিন্তু তার থেকেও বেশী জরুরী এটা দেখা যে সেই গিয়ার পরে রাইডার স্বচ্ছন্দ বোধ করছে কিনা। নইলে রাইড শুরুর কিছুক্ষণ পরেই আনইজি লাগতে শুরু করবে এবং কন্সেন্ট্রেশন নষ্ট হয়ে উলটে বিপদকে ডেকে আনা হবে।

আবার বলছি, প্রোটেক্টিভ গিয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু, প্রোটেক্টিভ গিয়ার পরে নিজেকে invincible ভাবাটা মূর্খামির পরিচয়। হেলমেট, জ্যাকেট, বুট এসব কিন্তু কোনোভাবেই অ্যাক্সিডেন্ট আটকায় না। তবে অ্যাক্সিডেন্ট হলে যাতে চোট কম লাগে সেটুকু দেখা এদের কাজ।

তাও অতিরিক্ত স্পীডে থাকলে, ইমপ্যাক্ট খুব বেশী হলে এসব কিছুই কাজ করবে না, একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্তই এদের ক্ষমতা। সুতরাং প্রোটেক্টিভ গিয়ার আছে বা বাইকে এ বি এস, ট্র‍্যাকশন কন্ট্রোল এসব টেকনোলজি আছে বলেই অযথা রিস্ক নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।



আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মোটরসাইকেলে লং ট্রিপের ক্ষেত্রে বহু রাইডার পারফরম্যান্স প্রেসারে ভোগে। অমুকে এত কিলোমিটার রাস্তা এত সময়ে গেছে অতএব আমাকেও করতে হবে, অমুক রাইডার এত স্পীড তুলেছে মানে আমাকেও তুলে দেখাতে হবে, অমুক রাইডার টানা এতক্ষণ চালিয়েছে আমি কেন পারবো না?

এই জিনিসটা হল সবথেকে বিপজ্জনক। নিজেদের শারীরিক ক্ষমতার সীমা না বুঝে, বা স্রেফ অগ্রাহ্য করে, অন্য লোক কিছু করেছে বলে আমিও করবো বলে নিজেকে প্রমাণ করার উদগ্র তাগিদে বহু রাইডার বিপদ ডেকে আনেন। বিশেষ করে গ্রুপ রাইডের ক্ষেত্রে অন্য রাইডারদের অনুকরণ করতে গিয়ে বা তাল রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে।

শরীর দিচ্ছে না, ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে অথচ স্রেফ জেদের বশে চালিয়ে চলেছে, এই প্রবণতা মারাত্মক। স্লিপ ডিপ্রাইভড অবস্থায় বাইক চালনো কোন মতেই উচিৎ নয়। একটু বয়স্কদের ক্ষেত্রে আবার অনেকসময় স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা থাকতে পারে, যেটা অনেকে নিজেও জানেন না। সেক্ষেত্রে খাওয়ার পর বা অনেকক্ষণ টানা চালানোর পর ঘুম পায়, শরীর ছেড়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে বাইক থামিয়ে বিশ্রাম এবং ঘুম একান্ত দরকার৷ এই ব্যাপারটা অনেকেই মিসজাজ করে, ভাবে ঠিক টেনে দেবে, আর সেখানেই বিপদ।

নিজের ক্ষমতাকে বা লিমিটেশনকে বুঝে চলা এক্ষেত্রে খুব জরুরী, সবাই সমান নয়, সবার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয় এবং সেটা কিছু লজ্জারও ব্যাপার নয় এটা বুঝতে হবে। নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টায় অযথা প্রাণ বিপন্ন করার মধ্যে কোন বাহাদুরী নেই। রিস্ক আছেই, সবসময়েই থাকবে, সেটা মেনে চলা, এবং সেটাকে যথাসম্ভব কম করার চেষ্টাই পরিণত মানুষের পরিচয়।

নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে অযথা অবিমৃশ্যকারীতার পরিচয় দেওয়া ক্ষমা করা যায় না। পাহাড় “জয়” করা যায় না, পাহাড়ের সঙ্গে মানিয়ে চললে তবেই তাকে অনুভব করা যায়, আনন্দ পাওয়া যায়। আমি অনেক ভ্লগে দেখেছি যে রাইড স্টার্ট করছে প্রায় মাঝ রাতে বা অনেক ভোরে এবং নিজেই বলছে যে তার নাকি রাইডে যাওয়ার এক্সাইটমেন্টে রাতে ঘুম হয়নি।

এবার সম্পূর্ণ একটা রাত না ঘুমিয়ে, সে খুব ভোরে রাইড স্টার্ট করছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সে সারাদিন রাইড করে সারাদিনে প্রায় পাঁচশো থেকে ছশো কিলোমিটার বা আরো বেশি কভার করার চেষ্টা করছে। পরে ভিডিওতে সে নিজেই বলছে সে তার ক্লান্তি আসছে, শরীরে যন্ত্রণা করছে, ঘুম পাচ্ছে কিন্তু তা সত্ত্বেও সে চালিয়ে যাচ্ছে।

কোনমতে চা খেয়ে, রেড বুল খেয়ে সে চলছে। মনে রাখতে হবে এ সময় কিন্তু সে শারীরিকভাবে যথেষ্ট ফিট নয়, রিফ্লেক্স ভোঁতা হয়ে গেছে এবং মুহূর্তের জন্য চোখ টেনে গেলেও বিরাট বিপদ ঘটে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে রাইড প্ল্যান এমন হওয়া উচিৎ যাতে শরীরে এই স্ট্রেসটা যতদূর সম্ভব কম করা যায়।



আর অবশ্যই রাইডিং স্কিল খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা একমাত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে করতেই ডেভেলপ করে। প্রত্যেক Terrein আলাদা এবং এই বিভিন্ন terrain এ চালানোর নিজস্ব কিছু Basic Thumb Rule আছে যেটা মেনে চলতে হয়। এই অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং ধীরে ধীরে স্টেপ বাই স্টেপ সেটা অর্জন করতে হয়।

পুরুলিয়ার বা ডুয়ার্সের তুলনামূলক সহজ পাহাড়ি রাস্তায় হাত পাকানোর পরই লাদাখ বা গুরুদোংমারের মত কঠিন পাহাড়ি পথে যাওয়ার কথা ভাবা উচিৎ। ১০০ – ২০০ কিলোমিটার রাইড করে শরীর কিভাবে নিচ্ছে তা দেখে তবেই দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ কিলোমিটারের টার্গেট নেওয়া উচিৎ। যদিও ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি ভালো হাইওয়ে হলেও দিনে ৫০০ কিলোমিটারের বেশি চালানোর প্ল্যান নেওয়া ঠিক নয়।

আর পাহাড় তো দূরের কথা, আমি দেখেছি, গ্রুপ রাইডিং এর ডিসিপ্লিন বা হাইওয়েতে লেন মেনটেন করে চালানোর মতো বেসিক ডিসিপ্লিন অনেকেরই নেই। জিগজ্যাগ চালাচ্ছে বা হাইওয়েতে টপ লেন দিয়ে বা ঠিক মাঝখান দিয়ে কম স্পিডে বাইক চালাচ্ছে, এরকম দৃশ্য আমি বহু দেখেছি। এরা নিজেদের এবং তার সঙ্গে অন্যের বিপদের কারণ হয়ে ওঠে।

সবরকম সাবধানতা নেওয়ার পরও দুর্ঘটনা ঘটে, এটা বাস্তব। আর সেটা যে কোন পরিস্থিতিতেই হতে পারে। তার জন্য হাত পা গুটিয়ে বসে থাকার যেমন প্রশ্ন নেই তেমনই অযথা এমন কিছু হঠকারিতা করাও উচিৎ নয় যাতে যেচে বিপদকে ডেকে আনা হয়। যে কোন দুর্ঘটনা যেমন দুঃখজনক, তেমন একটা লার্নিং এক্সপেরিয়েন্সও বটে৷ কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সেটাকে নিয়ে আমরা কাটাছেঁড়া করে বুঝতে চেষ্টা করি সেটা কি ড্রাইভার বা রাইডারের কোন ভুলে ঘটেছে এবং কোনভাবে সেটাকে অ্যাভয়েড করা যেত কিনা, যাতে

তার থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। এটা একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস।

সবাই বেরোন, বাইকিং করুন, আনন্দ করুন কিন্তু সাবধানে। আমাদের মতো বিরাট আর বৈচিত্রপূর্ণ দেশকে চেনার এর চেয়ে আর ভালো পন্থা হতে পারে না। রিস্কের দোহাই দিয়ে বাইকিং এর বিরুদ্ধে অযথা অপপ্রচার বা জেনারালাইজ করে বাইকারদের হেয় করার প্রচেষ্টা বন্ধ হোক। জীবনের সবক্ষেত্রের মতো এখানেও হয়ত মুষ্টিমেয় খারাপ লোক আছে, কিন্তু তার জন্য একশ্রেণীর মিডিয়ার পুরো Biking Fraternity কে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মত নিতান্ত বালখিল্য আচরণ বন্ধ হোক।

লেখক পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী, নেশা ভ্রমণ। বাইক ও নিজস্ব গাড়িতে অফবিট রুটে বেড়াতে ভালোবাসেন। পাশাপাশি নানা ধরণের ফুড নিয়েও তিনি লেখালেখি করেন। ওনার নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন। লেখকের ফেসবুক পেজে ফলো করতে হলে এখানে ক্লিক করুন


The Curious Bong Trotter
আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

পাশের রাজ্যেই রয়েছে প্রকৃতির এক আদিম জায়গা, বেড়িয়ে আসুন চুপিসারে

স্বাতী চ্যাটার্জি- কাশ্মীর, কেরালা, দক্ষিণভারত, উত্তরভারতসহ গোটা ভারততো বেড়াবেন। আমাদের দেশে দেখার জায়গা অনেক। প্রাকৃতি, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!