Breaking News

ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের কিছু অজানা কথা, জেনে নিন পুজোর সময়

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি– কৈলাস থেকে লঙ্কা, জীবজগতের সমগ্র পশুর যিনি পতি, তিনিই পশুপতি। দেবাদিদেব মহাদেব। ব্রহ্মাণ্ডের সমগ্র শক্তির জন্ম থেকে অন্ত পর্যন্ত যার মধ্যে বিলীন হয়, তিনি শিব। আর শিবলিঙ্গ মঙ্গলময়তার প্রতীক। এক এবং অদ্বিতীয় সচ্চিদানন্দরূপের প্রতীক।

ভারতে মোট ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ রয়েছে। আর এই জ্যোতির্লিঙ্গ নির্মাণ করেছিলেন স্বয়ং মহাদেব নিজে। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ তৈরির পিছনে যে পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে তা হল। একবার ব্রহ্মা ও বিষ্ণু বিতর্কে জড়ালেন, কে সবচেয়ে বড়, কার ক্ষমতা ও পদমর্যাদা সবথেকে বেশি? তাঁরা সমস্যার সমাধানে গেলেন মহাদেবের কাছে।

ছবি সৌজন্য- ভ্রমণ আড্ডা ট্রাভেল গ্রুপ

মহাদেব এই সমস্যার সমাধানে একটি সূত্র তৈরি করলেন, এক প্রকাণ্ড আলোর স্তম্ভ নির্মাণ করলেন। ব্রহ্মাকে একদিকে পাঠালেন, অন্যদিকে বিষ্ণুকে। তাঁদের নির্দেশ দিলেন, যিনি এই জ্যোতির্লিঙ্গের অন্ত আগে খুঁজে পাবেন, তিনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠ। বিষ্ণু জ্যোতির্লিঙ্গের তল না পেয়ে মহাদেবের কাছে হার স্বীকার করলেন। অন্যদিকে ব্রহ্মা মহাদেবের কাছে মিথ্যার আশ্রয় দাবি করলেন, তিনি অন্ত পেয়েছেন।

মহাদেব ব্রহ্মাকে শাপ দিলেন, তিনি মিত্থের আশ্রয় নিয়েছেন, তাই তাঁর পুজো এ ভূখণ্ডে মূল পুজোতে থাকবে না। অন্যদিকে, বিষ্ণুকে তিনি বর দিলেন, এ ব্রহ্মাণ্ড যতদিন থাকবে, ততদিন তিনি পুজো পাবেন। আষ্টম শতকে আদি শঙ্করাচার্য ভারত ভ্রমণ করে মোট ১২টি স্থানকে জ্যোতির্লিঙ্গ স্থান হিসেবে নির্বাচিত করেন।

আদি শঙ্করাচার্য সৃষ্ট মন্ত্রে পাওয়া যায়, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের নাম ও ঠিকানা।

সৌরাষ্ট্রে সোমনাথঞ্চ শ্রীশৈলে মল্লিকার্জুন।

উজ্জয়িনাং মহাকালং ওঙ্কারামামলেশ্বরম।।

পরল্যং বৈদ্যনাথঞ্চ ডাকিন্যাং ভীমাশঙ্করম্‌।

সেতুবন্ধেতু রামেশ্বরং নাগেশং দ্বারুকাবনে।।

বারানয়ান্তু বিশ্বনাথং ত্র্যম্বকং গৌতমীতটে।

হিমালয়েতু কেদারং ঘৃষ্ণেশ্বরাঞ্চ শিবালয়ে।।

মহারাষ্ট্রের নাসিক শহর থেকে প্রায় ২৮ কিমিলোমিটার দূরে ত্রিম্বক শহর। এখানে রয়েছে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের মন্দির। ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একমাত্র এখানেই তিন দেবতা ব্রহ্মা, বিষ্ণু মহেশ্বর পূজিত হন। আরও কোনও জায়গায় তিন দেবতা একসঙ্গে পুজো পান না। মন্দিরটি রয়েছে ব্রহ্মগিরি, নীলগিরি এবং কালাগিরির মাঝে। ব্রহ্মগিরি থেকে জন্ম নিয়েছে গোদাবরী নদী।

ছবি সৌজন্য- ভ্রমণ আড্ডা ট্রাভেল গ্রুপ

গোদাবরীর জন্ম নিয়ে একটি পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে, ব্রহ্মগিরি পাহাড়ে স্ত্রী অহল্যাকে নিয়ে বাস করতেন ঋষি গৌতম। পাহাড়ের কোলেই তারা চাষাবাদ শুরু করেন। নগ্ন পাথুরে পাহাড়ে ঋষি দম্পতির পরিশ্রমে সেজে ওঠে। বাধ সাধে, আশে পাশের অন্য ঋষিরা। চক্রান্ত করে, একটি গরু ছেড়ে দেওয়া হয় ঋষু গৌতমের ক্ষেতে। গরুটিকে লাঠি দিয়ে তাড়া করা হয়, দু ঘা দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলেই গরুটি মারা যায়। এর পরেই ঋষি গৌতমের বিরুদ্ধে গো হত্যার অভিযোগ ওঠে। বছর ঘোরার আগেই এলাকায় খরা দেখা দেয়। চাষিরা মরতে থাকে। এক বছর যায়, দু বছর যায়, পর পর কয়েক বছর বৃষ্টির নাম মাত্র দেখা যায় না।

অন্য ঋষিরা অভিযোগ করেন, ঋষি গৌতমের গো হত্যার কারণেই এই অনাচার। ঋষি গৌতম তপস্যা শুরু করেন। তাঁর তপস্যা মহাদেব তুষ্ঠ হয়ে, দ্বিতীয়বার জটা খোলেন। ব্রহ্মগিরি পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে আসেন দেবী গঙ্গা। এখানে গঙ্গাই গোদাবরী নামে পরিচিত। ভারতে চারটি জায়গা কুম্ভমেলার বিশাল আয়োজন হয়। একটি জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তিন বছর অন্তর কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাত প্রত্যেকটি স্থানে ফিরে আসতে সময় লাগে ১২ বছর। নাসিকের গোদাবতী তীরেও প্রতি ১২ বছর অন্তর কুম্ভমেলার আয়োজন হয়।

ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দির খোলে ভোর সাড়ে ৫টায় বন্ধ হয় রাত নটায়। ৫.৩০ থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত চলে মঙ্গল আরতি। সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চলে বিশেষ পুজা। ১টা থেকে মধ্যাহ্নপুজা। সন্ধে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সান্ধ্যপুজা।

যাঁরা শিবভক্ত, তাঁরা ভোরে ও সন্ধেবেলায় ১০৮বার করে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করতে পারেন।

ওঁ ত্র্যম্বকম যজামহে সুগন্ধিম পুষ্টিবর্ধনম্। উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যৌর্মুক্ষীয় মামৃতাত্।।

আগামী পর্বে- কোন জ্যোতির্লিঙ্গে গিয়ে কোন রাশির জাতকেরা কীভাবে পুজো দেবেন, তার পরামর্শ থাকবে।

এমন নানা তথ্য পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান এবং আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো করুন।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

রহস্যময় প্রচীন শিবলিঙ্গ দর্শনে, মনোস্কামনা পূর্ণ হয় ভক্তদের, জানুন পুরো তথ্য

অর্বিট নিউজ ডেস্ক- ভারতের বুকে প্রচীন কাল থেকে গাঁথা হয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস, গল্প কাহিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!